ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত নির্বাচন দেবে, আশা বিএনপির

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০২৪
প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত নির্বাচন দেবে, আশা বিএনপির

ঢাকা: প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে অন্তর্বর্তী সরকার অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।

বুধবার (৬ নভেম্বর) রাজধানী রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তারা এ প্রত্যাশার কথা বলেন।

বিকেল আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ আলোচনা সভা চলে। ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।  

আলোচনা সভা চলাকালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় থাকার সময় উন্নয়নের কাজের একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। সেইসঙ্গে ৭ নভেম্বরের বিপ্লব নিয়ে একটি বই প্রকাশ করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, ৭ নভেম্বর একটি দিন নয়, তারিখ নয়, এ দিনে দেশের স্বাধীনতার অস্তিত্ব রক্ষা হয়েছিল। দেশের সিপাহী-জনতার বিপ্লবে একটি নতুন বাংলাদেশের উদ্ভব হয়েছিল। যে নতুন বাংলাদেশের আবির্ভাব ঘটেছিল সেটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। দেশের উন্নয়নের সূচনা বা উদ্ভবও করেছিলেন তিনি।  

তিনি বলেন, যখনই বাংলাদেশ আধিপত্যবাদের কবলে পড়ে তখনই সামনে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। ১৭ বছরের আওয়ামী লীগের আধিপত্যবাদের পতন হয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। তাই আমাদের যে ভবিষ্যৎ, সেটি পার হতে হবে অত্যন্ত সজাগ দৃষ্টির মধ্য দিয়ে।  

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। জনগণের সরকার ও শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবেন।  

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খাল কাটাসহ ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ছাত্র-জনতার মাধ্যমে ৫ আগস্ট বিপ্লব হয়নি, এটা হয়েছে অভ্যুত্থান। বিপ্লব হয়েছিল ৭ নভেম্বর, এটি তার ধারাবাহিকতা। নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে প্রতারণা নয়, রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। অন্যথায় মাঠে ছিলাম, থাকবো।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসটি বিএনপির নয়, এটি এ দেশের জনগণের দিবস। আগে ৭ নভেম্বর এ দিবসে ছুটি ছিল। বর্তমান সরকারের কাছে ছুটি ঘোষণার দাবি জানাই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, আমাদের দেশের মাটিতে আর কোনো আধিপত্যবাদকে জায়গা দেব না, দেশের মাটিতে কোনো ফ্যাসিস্টকে জায়গা দেব না—এমন শপথ নিতে হবে আমাদের। কারণ এখনো সংকট শেষ হয়ে যায়নি। জিয়া ছিলেন একজন দুর্নীতিমুক্ত মানুষ। আমাদের কোনোভাবে দুর্নীতিতে নিজেদের জায়গা দেওয়া যাবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বিএনপির ১৭ বছর ধরে তৈরিকৃত যে বিস্ফোরণ, সেটিতে ছাত্ররা কাঠি জ্বেলে দিয়েছিল। এর মাধ্যমে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব পেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার, যদি সে দায়িত্বে এই সরকার ব্যর্থ হয়, তবে বাংলাদেশ আবার ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ কামরুল আহসান বলেন, ৭ নভেম্বর কোনো দলের দিবস নয়, বাকশালের মাধ্যমে স্বাধীনতার সব স্বাদ ধূলিসাৎ করেছিলেন শেখ মুজিব। এর প্রেক্ষাপটে ৭ নভেম্বরের বিপ্লব, স্বাধীনতার স্বাদ পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা লড়াই করেছি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য, কিন্তু এখনো গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। অন্তর্বর্তী সরকার একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবে আশা করছি।  

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, হাসিনা বিদায় হয়ে গেছে, কিন্তু মানুষের সমধিকারের বিএনপির যে যাত্রা তা অব্যাহত রয়েছে। যুগপৎ ও তার বাইরে যারা আছি ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানুষের অধিকার ফিরে দিতে হবে। আমরা নতুন কোনো বয়ান শুনতে চাই না, মানুষের মালিকানা ফিরে চাই, দিতে হবে।  

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, রিপাবলিক ও সংবিধান থাকবে, এই সমাজ সংস্কারও থাকবে। সংস্কারের বাস্তবায়ন এই সরকার শুরু করতে পারে তবে সমাপ্তি নয়। সরকার সংস্কারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন ও তার রোডম্যাপ ঘোষণার মধ্য দিয়ে একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে, সেটা আমরা আশা করতেই পারি। জনমনে যে ধোঁয়াশা সেটি কেটে যাবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির জন্য আমরা লড়াই করে যাচ্ছি ১৬ বছর ধরেই। আশা করি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয়তাবাদী চেতনার রাজনীতির ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করে যাবে। তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে, জনগণ তার পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে। এ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি পারে সব সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, এই ঐক্য ধরে রাখতে হবে, তবেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে। তাহলে প্রত্যেকটি হত্যার বিচার হবে।

আলোচনা সভায় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০২৪
টিএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।