ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

এরশাদ যখন হাসপাতালে ছিলেন, তখন আমাকে নির্বাচনে যেতে জোর করা হয়েছে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২৪
এরশাদ যখন হাসপাতালে ছিলেন, তখন আমাকে নির্বাচনে যেতে জোর করা হয়েছে

ঢাকা: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) বলেছেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন হাসপাতালে ছিলেন, তখন আমি বলেছিলাম, নির্বাচনে যাব না। তখন আমাকে জোর করা হয়েছিল নির্বাচনের জন্য।

আমি যখন নির্বাচনে যেতে চাই না তখন আমাকে জোর করা হয়। আর যখন যেতে চাই তখন যেতে দেওয়া হয় না। আমরা একটি রাজনৈতিক দল, আমদের অধিকার আছে রাজনীতি করার, যে কোনো দলের সঙ্গে আমরা যেতে পারি। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতি এখন কেমন যেন হয়ে গেছে। আমরা মনে করেছিলাম ষড়যন্ত্র শেষ হয়ে যাবে, তবে এখন দেখছি দিন দিন বেড়েই চলেছে। জনগণের ইচ্ছা প্রকাশ করতে দেওয়া হবে না এটা কোন ধরনের দেশ? 


বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতার’ মশাল মিছিলের সময় তাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের পর এ আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকায় প্রথমে সংঘর্ষ হয়। পরে কার্যালয়টিতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা মরতে আসছি, আমরা মরতে চাই, কতটুকু মারবে তোমরা আমরা দেখতে চাই। আল্লাহ আমাদের প্রোটেকশন দিচ্ছেন বলে এখনো বেঁচে আছি, অন্য কারো প্রোটেকশনে নয়। বিচারের জন্য যদি আল্লাহর সাহায্যের দিকে চেয়ে থাকতে হয়, তাহলে কীভাবে দেশ চলবে? 

তিনি বলেন, আমরা একদিনের ডেমোক্রেসি চাই না। সব সময়ের ডেমোক্রেসি চাই। আমারা চাই এমন সরকার- যারা ফর দ্যা পিপল, বাই দ্যা পিপল হবে। আমরা দেশের জনগণের পাশে ছিলাম, সব সময় থাকব, আমার পরবর্তী প্রজন্ম এলেও জাতীয় পার্টি জনগণের পাশে থাকবে এবং একইভাবে এগিয়ে যাবে। আমাদের ওপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের ২ তারিখের কর্মসূচি চলবে। আমদের কর্মসূচি, আন্দোলন সবই চলবে নিয়মতান্ত্রিক এবং অহিংসভাবে।  

শুক্রবার (১ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে ‘জাতীয় পার্টির অফিসে হামলা ও অগ্নিসংযোগে’র প্রতিবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।  

জিএম কাদের বলেন, দেশটা এখন ভালো অবস্থায় নেই। শেখ হাসিনা দেশটাকে যেভাবে বিভক্ত করেছিল এখন একইভাবে বিভক্ত করা হচ্ছে। এখন হাজার হাজার মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। ওনারা যা বলেন, তাই সঠিক, বাকি সবাই ভুল। ওনারা এখন বিচার কার্যেও গিয়ে বাধা দেন। ওনাদের ইচ্ছা হলো আমাদের অফিস ভেঙে দিয়ে গেলেন। কারো যদি ভুল হয়, সেখানে ব্যবস্থা নেওয়ার অনেক উপায় আছে, তাই বলে তাকে ধ্বংস করে দেবেন এটা কেমন হবে।  

তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমরা সব সময় সমর্থন জানিয়েছি। তাদের পক্ষে সে সময় অনেক কথা বলেছি, বিবৃতি দিয়েছি। যে কারণে আমার অনেক ক্ষতিও হতে পারত। কিন্তু এসব কিছুর পরোয়া আমরা করিনি। তারপরও আমাদের বিরুদ্ধে অন্যায় অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। আমি এখন বলছি, জাতীয় পার্টি একটি জনগণের রাজনৈতিক দল। হয় তো সারা বাংলাদেশে আমাদের অবস্থান কিছুটা কম আছে, তবুও আমরা টিকে আছি। চাপে গর্তে ঢুকে গেলেও বারবার জাতীয় পার্টি উঠে দাঁড়ায় এটাই অনেকের সহ্য হয় না। যে কারণে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়। জাতীয় পার্টি সব সময় জনবান্ধব দল ছিল, এখনো আছে এবং আগামীতেও থাকবে।  

এরশাদ সাহেবকে যতই অপবাদ দেওয়া হোক না কেন, জনগণ তার পাশে ছিল। অনেকে বলে এরশাদ সাহেবকে গণঅভ্যুর্থ্যানের মাধ্যমে নামানো হয়েছে, এটা একদমই ভুল কথা। তিনি জনগণের ইচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়েছেন। তবে ১৯৯১ থেকে ওনার (এরশাদ) এবং জাতীয় পার্টির ওপর নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, যোগ করেন তিনি।  

জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি কোনো সময় দলীয়করণ করেনি। জাতীয় পার্টি সব সময় বিভিন্ন দলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তবে একটি গোষ্টী জাতীয় পার্টির নামে মিথ্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে নানা রকমের ষড়যন্ত্র করছে।  

তিনি বলেন, সবাই বলে আমরা নাকি আওয়ামী লীগের দোসর। কিন্তু কীভাবে দোসর হলাম? আমরা শেখ হাসিনার কোনো জনবিরোধী কাজের সঙ্গে ছিলাম না। আমরা বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের জনবিরোধী ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব সময় কথা বলেছি। আওয়ামী লীগের দলীয়করণের বিরুদ্ধেও আমরা বহু কথা বলেছি।  

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, অনেকে বলেন, ১৫ বছর অবৈধ শাসন আমল। তবে আমরা বলি ১০ বছর অবৈধ শাসন আমল, ২০১৪-২০২৪ সাল পর্যন্ত সরকারকে আমরা অবৈধ শাসন আমল হিসেবে দেখছি। এর আগে ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত শাসন আমলকে অবৈধ বলা ঠিক নয়, তবে খারাপ শাসন আমল বলতে পারেন। ওই সময় সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন হয়েছিল।  

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে সব দল শেখ হাসিনার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তখন কি সব দল শেখ হাসিনার সরকারকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বৈধতা দেয়নি? এটা কি একা জাতীয় পার্টি দিয়েছে? 

জিএম কাদের বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলে অনেক ভালো মন্ত্রী ছিলেন। তাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হতো। যথেষ্ট ভালো সম্পর্ক ছিল। ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাস ও জমায়াত ইসলামের অনেক ভালো মন্ত্রী ছিলেন। তাদের সঙ্গে আমারও ভালো সম্পর্ক ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২৪
ইএসএস/এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।