ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

২০২৩ সালে ড. মোমেনের মন্তব্যনামা

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৪
২০২৩ সালে ড. মোমেনের মন্তব্যনামা

সিলেট: সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান প্রয়াত আবুল মাল আব্দুল মুহিত। সাবেক অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতা ও কথা থেকে পাওয়া শিরোনাম আলোচনা-সমালোচনার যোগান দিয়েছিল দেশে।

২০১৮ সালের ভোটে তারই ছোট ভাই ড. এ কে আব্দুল মোমেন সংসদ সদস্য হন। দায়িত্ব পান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। বড় ভাইয়ের মতো তিনিও সংবাদমাধ্যমে শিরোনামের যোগান দিয়েছিলেন।

সোজা কথা বললে, ২০২৩ সাল জুড়ে আওয়ামী লীগের এ নেতা নিজের তির্যক মন্তব্য ও বেফাঁস কথা বলে খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন। চলুন জানা যাক...

গত বছর ৪ জানুয়ারি সিলেট সফরে গিয়ে ‘বিদেশিদের জ্ঞান খুব সীমিত, আহাম্মকের মতো’ মন্তব্য করেন ড. মোমেন। ৮ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশের পাসপোর্টের মান বেড়েছে’ ও  ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে লুকোচুরি হয় না’ বলে মন্তব্য করেন।

২১ জানুয়ারি কূটনৈতিক তৌহিদুল ইসলামকে ‘ভেরি গুড অফিসার’ আখ্যা দিয়ে সমালোচিত হন। অথচ, তৌহিদুলের বিরুদ্ধে এক নারী সহকর্মীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ ছিল।

‘জোট সরকার দেশের প্রতিটি সেক্টর ধ্বংস করেছে’ মন্তব্য করে ব্যাপক সমালোচিত হন মোমেন। এক পথ সভায় সিলেটে শিক্ষার দৈন্যতা তুলে ধরে বলেছেন, ‘শিক্ষা ক্ষেত্রে সিলেট পিছিয়েছে। ’

১৬ ফেব্রুয়ারি ‘আমেরিকা আমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চায়’ ও ‘উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী দল দেখেন না’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে বিদেশি কূটনীতিকের সফর প্রসঙ্গে দেওয়া বক্তব্য পাঠকপ্রিয়তা পেতে ‘টুইস্ট’করা হয়েছে বলে দাবি ছিল তার।

২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিল নির্বাচন ইস্যুতে বলেন ‘জনগণ অনেক সেয়ানা, তারা আ.লীগকেই নির্বাচিত করবে’। এদিন তার অপর মন্তব্য ছিল, ‘যুক্তরাষ্ট্রও তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় না। ’ ২২ এপ্রিল ‘সিসিক নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী এক তৃতীয়াংশ’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

২৮ জুন মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা অ্যামনেস্টির তৎপরতা ইস্যুতে বলেন, ‘অ্যামনেস্টির পদক্ষেপ বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখা’।

২১ জুলাই ‘বিদেশিরা নিজেদের বাংলাদেশের সম্রাট মনে করে’ মন্তব্য করে শিরোনাম হন ড. মোমেন। একইদিন সিলেটের উন্নয়ন প্রকল্পের ধীরগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

১১ আগস্ট গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপের সময় বলেন, ‘টাকা পাচার রোধ করতে পারলে দেশ অনেক সমৃদ্ধ হবে’। আরেক অনুষ্ঠানে ‘শান্তি-স্থিতিশীলতা না থাকলে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হয়’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

১২ আগস্ট ‘নির্বাচনের আগে কোনো চুক্তিতে যাচ্ছি না’ বলে মন্তব্য করেন মোমেন। ৫ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে ‘ভারত-বাংলাদেশ ভিসামুক্ত সম্পর্কের দাবি জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ৭ অক্টোবর উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতিতে অসন্তুষ্টটার কথা উল্লেখ করেন।

১৩ অক্টোবর সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘মেয়র আরিফ হলেন আওয়ামী বিএনপি’।

গত ৪ নভেম্বর বিএনপিকে ‘সন্ত্রাস ও মিথ্যাচার ছেড়ে নির্বাচনে আসার আহ্বান’ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন।

‘বিদেশিরা অনেক সময় খামাখা ত্যক্ত করে’ মন্তব্যের মাধ্যমে গণমাধ্যমের শিরোনাম হন ২৪ নভেম্বর। গত ২৯ নভেম্বর  ‘সারাদেশে নির্বাচনী উৎসব শুরু হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন।

বছর শেষে নির্বাচন ইস্যুতে অসংখ্যবার শিরোনামে আসেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের ছোট ভাই। গত ৮ ডিসেম্বর তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার সঙ্গে কেউ নির্বাচনে এসে পারবে না’। ১৪ ডিসেম্বর বলেন, ‘সিলেটের রাজনৈতিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাই। ’ ১৯ ডিসেম্বর বলেন, ‘নির্বাচনে না এসে বিএনপি বড় ভুল করেছে। ’

গত ২১ ডিসেম্বর গার্মেন্টস সেক্টরের বেতন ইস্যুতে বলেন,  ‘আমেরিকাতেও মানুষ খুব কষ্টে আছে’। ২৩ ডিসেম্বর ‘বিএনপি ভোট বানচালের চেষ্টা চালাচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেন। ২৪ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণাকালে বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের প্রমোট করলে বিদেশিদেরও বারোটা বাজে’। ২৬ ডিসেম্বর সিডিপির তথ্যের সমালোচনা করে বলেন, ‘সিডিপি ঘরে বসে অংক কষে আজগুবি তথ্য দিয়েছে। ’ একই দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘গণতন্ত্রে নির্বাচনের বিকল্প নেই। ’

গত ২৭ ডিসেম্বর সিলেটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেন, ‘আমাদের ইজ্জত-সম্মান অনেক বেড়েছে। ’ ২৮ ডিসেম্বর ‘নির্বাচনী প্রচারণা, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে’ বলে দাবি করেন। একই দিন আরেক সভায় ‘নারীর ক্ষমতায় ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়’ দাবি করে গণমাধ্যমে শিরোনাম হন মোমেন।

‘কথার আছে অনেক বাণী, যদি কথা কইতে জানি’ বলে শিরোনাম হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের সিলেট-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোমেন। ভোটের মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় নির্ভার তিনি। যে কারণে তির্যক, ঘায়েল করা নানা মন্তব্যও ছুঁড়েছেন তিনি, এমনটাই মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। ২০২৪ সালও ড. মোমেন নানা মন্তব্যে মাতিয়ে রাখবেন বলে তারা বিশ্বাস করেন।

বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২৪
এনইউ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।