ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ছাত্রদল নেতা হত্যা মামলার সাক্ষীকে তুলে নিয়ে হত্যাচেষ্টা ছাত্রলীগের!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২৩
ছাত্রদল নেতা হত্যা মামলার সাক্ষীকে তুলে নিয়ে হত্যাচেষ্টা ছাত্রলীগের!

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ছাত্রদল নেতা অমিত হাসান অনিক হত্যা মামলার সাক্ষী কাঞ্চন পৌরসভা ছাত্রদলের সদস্য সচিব তন্ময় হাসানকে হত্যাচেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা।  

হামলাকারীরা সবাই উপজেলা ও পৌরসভা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

একই সঙ্গে ছাত্রদলের কাঞ্চন পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক রিফাত হাসানকে হত্যার উদ্দেশে তার ওপরও সশস্ত্র হামলার অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার (১৪ জুলাই) রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপি, ছাত্রদলের নেতারা এ অভিযোগ করেছেন। একই সঙ্গে আহত ছাত্রদল নেতারা ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানান তারা।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১২ জুলাই) দুপুরে কাঞ্চন পুলিশ ফাঁড়ির অদূরে পৌরসভা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তন্ময়কে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে তাকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বেদম মারপিট করা হয়। পরে তাকে টেনে হিঁচড়ে একটি অটোরিকশায় করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় একটি সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা, দেশীয় অস্ত্রসহ তাকে ধরতে যাচ্ছেন।

পরে মারধরের পর তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অটোরিকশায়। পরবর্তী স্থানীয় আরেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার অফিসে নিয়ে তাকে দ্বিতীয় দফায় হত্যার উদ্দেশে মারধর করা হয়। স্থানীয়দের সহায়তায় পরে তন্ময়কে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা প্রদান করার পর ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। এতে ছাত্রদলের আরেক নেতা পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক রিফাত হাসানও আহত হয়।

এদিকে এ ঘটনার পর ছাত্রদল নেতা তন্ময়ের পরিবারকে ও তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ছাত্রদল নেতাদের। একই সঙ্গে এ ঘটনায় মামলা করলে পরিণতি ভয়াবহ হবে বলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

কাঞ্চন পৌরসভা ছাত্রদলের সদস্য সচিব তন্ময় হাসান বলেন, আমার হাঁটুর বাটি ফেটে গেছে। আমাকে শুধুমাত্র ছাত্রদল নেতা অনিক হত্যা মামলার সাক্ষী হওয়ার কারণে হত্যা করার উদ্দেশে হামলা করা হয়েছে। আমি অনিক হত্যা মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী। আমি সাক্ষী হওয়ার পর থেকেই ছাত্রলীগের টার্গেটে ছিলাম। আমার ওপর এর আগেও হামলার চেষ্টা হয়েছিল। এবার আমার ওপর দেশীয় অস্ত্রসহ হামলা করা হয়েছে। তাদের হামলায় আহত হয়ে আমি নিজে দাঁড়াতে পারি না, বসতেও পারি না।  

হামলায় জড়িত হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়, কাঞ্চন পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি আইবুর রহমান খোকা, পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম, ছাত্রলীগ কর্মী শুভ মিয়া, রনি মিয়া, সৌরভ মিয়া, সোহাগ মিয়া, মামুন মিয়া ও মাছুম মিয়াকে।

অপরদিকে রূপগঞ্জের ভোলাব ইউনিয়ন বিএনপি নেতা নাসিরকে তার বাড়িতে দেখতে গেলে হামলা চালিয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ও রূপগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ভুঁইয়াসহ ৪ জনের মোটরসাইকেল ভেঙে ডোবায় ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক নাহিদ হাসান ভুঁইয়া বলেন, শুধু তন্ময় নয় আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এভাবে নিয়মিত হামলা করছে তারা। ছাত্রদল নেতা অনিক হত্যা মামলার সাক্ষী ছিল সে। সে সময় থেকে তাকে নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তাকে হত্যার জন্য প্রকাশ্যেও কয়েকবার হুমকি দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, পতন আসন্ন দেখে আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এখন হামলা ও রক্তের রাজনীতিতে মেতেছে। আমাদের এক নেতাকে দেখতে এসে বের হয়ে দেখি আমাদের মোটরসাইকেলগুলোতে হামলা করে সেগুলো ডোবায় ফেলে দেয়া হয়েছে। আমাদের ছাত্রদল নেতা হত্যা মামলার সাক্ষীকে হত্যা চেষ্টার পর এখন তার পরিবারকেও হুমকি দিচ্ছে তারা।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ তাদের সব নেতাকর্মীরা এখন আমাদের নেতাকর্মীদের টার্গেট করে করে হামলা করছে।  ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হানা দিচ্ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতেই এ ধরনের মামলা হচ্ছে। আমি প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।

এদিকে এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক স্ট্যাটাস দিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ মাসুম বলেন, কাঞ্চন পৌরসভা ছাত্রদলের সন্ত্রাসী তন্ময় তার সন্ত্রাসী দলবল নিয়ে মদপান করে কাঞ্চন গুদারাঘাট পার্কে কাঞ্চন পৌরসভা ছাত্রলীগ নেতা সাকিলের ওপর আতর্কিত হামলা চালায় ফলে সে গুরুতর আহত হয়। স্থানীয় লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার চিকিৎসা করা হয়। রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং সন্ত্রাসী হামলার সুষ্ঠু বিচার চাই। তবে এ ব্যাপারে জানতে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।  

জানা গেছে, গত বছর ৩ নভেম্বর রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মশাল মিছিল বের করেন রূপগঞ্জ থানা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। মিছিলের শেষ পর্যায়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা মিছিলকারীদের ওপর হামলা ও ধাওয়া দেয়। এ সময় ঘটনাস্থলে গুরুতর আহত হন কাঞ্চন পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের সহ-সভাপতি অমিত হাসান অনিক। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মারা যান অনিক।

২২ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আহম্মেদ আদালতে হামলা ও ধাওয়ার ঘটনায় উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেছিলেন নিহত ছাত্রদল নেতা অনিকের বাবা আমির হোসেন। এ সময় মামলায় আওয়ামী লীগের ১৪ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলার সাক্ষী ছিলেন আহত ছাত্রদল নেতা তন্ময়।

রূপগগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান জানান, কেউ কোন হামলার অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২৩
এমআরপি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।