ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

দল ও দেশকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর বার্তা

তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯
দল ও দেশকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর বার্তা

চট্টগ্রাম: টানা তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং এর অর্জনসমূহ সমুন্নত রাখার জন্য সরকার দুর্নীতিবিরোধী লড়াই অব্যাহত রাখবে।

অনেক বিতর্ক, সমালোচনা আর অভিযোগের মুখে থাকা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সে কথারই প্রমাণ রাখলেন। শুধু ছাত্রলীগ নয়, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত সর্বস্তরের নেতা-কর্মী এবং প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কাছেও প্রধানমন্ত্রীর কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণের বার্তা পৌঁছে গেছে।

যারা এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নেবেন না, তাদের জন্যও যে কঠিন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে- তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দল ও দেশকে এগিয়ে নিতে কোনা অনিয়ম-দুর্নীতিকে বিন্দুমাত্র ছাড় না দেওয়ার মানসিকতাই প্রকাশ পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে।

গত বছরের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন শেষে ৩১ জুলাই শোভনকে সভাপতি এবং রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করেন শেখ হাসিনা। তখন থেকেই তাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দরজা সবসময় খোলা ছিল। প্রধানমন্ত্রী মনোনীত কমিটি হওয়ায় শোভন-রাব্বানীর প্রতি আওয়ামী লীগের সব মহলের প্রত্যাশাও ছিল অনেক বেশি। তারা ছাত্রলীগকে ‘নতুন ধারায়’ ফিরিয়ে আনবেন এমনটাই ধারণা করেছিলেন নীতি-নির্ধারকরা। কিন্তু বছর না যেতেই ছাত্রলীগের এই দুই নেতার বিরুদ্ধে জমতে শুরু করে অভিযোগের পাহাড়।  

এ বিতর্ক চূড়ান্ত রূপ নেয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কাণ্ডে। শোভন-রাব্বানী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে তার বাসভবনে গিয়ে রূঢ় আচরণ করেন। পরে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন ভিসি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের কর্যনির্বাহী সংসদের সভায় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা (শোভন-রাব্বানী) যা করেছে, এটা সহ্য করা হবে না। কেউ এ ধরনের কাজ করলে মেনে নেওয়া হবে না। পরে তাদের গণভবনে প্রবেশের পাস বাতিল করা হয় এবং সর্বশেষ তাদের পদত্যাগের নির্দেশ দেন।

এর আগেও বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের সরকারের একটা দায়িত্ব হলো-দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যাতে এটি দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে না পারে এবং আমাদের সব সাফল্য ম্লান করে না দেয়। টেন্ডার ছিনতাইয়ের ঘটনা দেশে বারবার ঘটেছে। কিন্তু আমরা দেশকে এ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে পেরেছি। প্রযুক্তির বদৌলতে এ সাফল্য এসেছে এবং এটা ডিজিটাল বাংলাদেশের একটা ভালো ফল।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন উদ্বোধন করতে গিয়ে গত ২০ জুলাই শোভন-রাব্বানীর জন্য দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে। ছাত্রলীগের দুই নেতা নিজেদের দেরি হওয়ার বিষয়টি আগে থেকে অবহিত করেননি, ফলে অনুষ্ঠানস্থলে এসে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রী।  

সম্প্রতি সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শোভনকে প্রটোকল দিতে ‘ভিআইপি লাউঞ্জে’ ঢুকে পড়ে কয়েকশ নেতাকর্মী। নেতাকর্মীদের অনেকেই চলে যায় টারমাকে। বিষয়টি নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিবাহিত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, চাকরিজীবীসহ বির্তকিতদের পদ দেওয়া, ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বঞ্চিত করা, কমিটি দিতে অর্থনৈতিক লেনদেনসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায় এই দুইজনের বিরুদ্ধে। পদত্যাগের পর শোভন-রাব্বানীর পাশে এখন আর কেউ নেই।  

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ছাত্রলীগের নতুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন। তারা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবেন। নেত্রী যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সেই কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে ছাত্রলীগ পরিবার এক হয়ে সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত করবে।  

দেশের আপামর জনগণ সে কথায় আস্থা রাখতে চায়। কারণ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে, স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান রেখেছে। শেখ হাসিনা যাদের হাতে ছাত্রলীগের দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন, তাদের উচিত তার আস্থার প্রতিদান রাখা। নেতিবাচক কোনোও কর্মকাণ্ড যাতে ছাত্রলীগকে আর প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে নতুন নেতৃত্বকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯
টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।