ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

কষ্টের জীবনে নষ্টের ছোঁয়া!

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৫
কষ্টের জীবনে নষ্টের ছোঁয়া!

জনসংখ্যা একটি দেশের ‘মহাশক্তি’ হতে পারে। এই জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর প্রথম সারির দেশগুলো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলেছে।

বৈপ্লবিক সেই পরিবর্তনের সঙ্গে বেড়েছে সেসব দেশের জীবনযাত্রার মান। আমরাও উন্নয়নশীল দেশের ছক থেকে বেরিয়ে সম্ভাবনাময় দৃষ্টান্ততূল্য একটি দেশের তালিকায় প্রায় পৌঁছে যেতে চলেছি।

কিন্তু অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি, জানমালের নিরাপত্তা আর মানুষের বেঁচে থাকার সমস্ত সম্ভাবনাকে বিপন্ন করে তুলছে। এটি ক্যান্সারের মত ভয়ংকর এক ব্যাধি। মানুষের জন্য রাজনীতির বিপরীতে ক্ষমতার জন্য রাজনীতির চিত্রগুলো বারবার প্রকাশিত হচ্ছে আমাদের সামনে।

প্রতিদিনই পুড়ছে মানুষ! জ্বলছে দেশের সম্পদ। মানবতার এই বিপন্নতার ধারাপাত আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের হৃদয় নাড়া দিতে পারছে না। তাদের হৃদয় যেন পাথরসম! যেভাবে দিনের পর দিন অবরোধ-হরতালসহ নানা জঙ্গিতৎপরতা দিয়ে দেশকে, দেশের প্রতিটি মানুষকে প্রতিটি অনিশ্চিত জীবনের মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে তাতে দেশের দুঃসহ অমঙ্গল ক্রমধাবমান।

যানবাহনের নির্ধারিত সময়ে চলাচল চরমভাবে বিঘ্নিত হওয়ার ফলে নষ্ট হচ্ছে মানুষের মূল্যবান কর্মঘণ্টা। কাঁচামালসহ পচনশীল পণ্য নির্দিষ্ট সময়ে যথাস্থানে পৌঁছুতে না পারার ফলে কৃষকসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা চরম ক্ষতির মুখে পড়ছেন। নানা ধরনের কলকারখানাসহ গার্মেন্টশিল্প লোকসানের দিকে যাচ্ছে।

যারা দিন আনে–দিনে খায়; অথবা প্রতিদিন এক স্থান থেকে অন্যস্থানে গিয়ে পণ্য সরবরাহ করে বেঁচে থাকেন সেই সব মানুষদের অবস্থা এখন কেমন? এই তীব্র ঠাণ্ডায় কর্মসংস্থানের অভাবে কী করবেন তারা? আসলে এই হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশ। বেঁচে থাকার জন্য পেশা পরিবর্তন করেও ভালোভাবে টিকে থাকা যাচ্ছে না।

রাশেদা নামে এক পোশাক শ্রমিকের জীবনের কাহিনী থেকে বর্তমান বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া যায়। ছুটি কাটিয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় ফেরার পথে গত ১৩ জানুয়ারি মঙ্গলবার অবরোধ সমর্থককারীদের ছোঁড়া পেট্রোলবোমায় অন্যদের সঙ্গে তিনিও জ্বলে-পুড়ে যান। জ্বলে-পুড়ে যায় তার স্বপ্ন। জ্বলে-পুড়ে যায় তার বেঁচে থাকা। তার একার রোজগারেই চলতো পুরো পরিবার।

এই মর্মান্তিক ঘটনায় মৃত্যুবরণ করা পাঁচটি মৃতদেহ ঠাঁই পেয়েছে হিমঘরে। অবশিষ্ট অনেক যাত্রী দগ্ধ হয়ে তীব্র যন্ত্রণা ভোগ করছেন। এ যেন কষ্টের জীবনে নষ্টের ছোঁয়া!

নয় দিনের অবরোধে পুড়ছে যানবাহন। জ্বলছে মানুষের শরীর! ঢাকার বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে এখনো ২২ দগ্ধ রোগী তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে পরাজয় বরণ করেছেন চার রোগী। এ তীব্র যন্ত্রণার শেষ কোথায়? আর কবে, কোন দিন আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকার পরিচয় দেবেন?

লেখক: সংবাদকর্মী

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।