ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মামলার রায় ঘোষণার শেষদিকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি বিচারকদের উদ্দেশ্যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বেলা দশটা ৫৩ মিনিটে আজহারকে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানা থেকে আসামির কাঠগড়ায় তোলা হয়।
যথারীতি বিচারকদের সম্মান প্রদর্শনে জনাকীর্ণ আদালতে উপস্থিত সবাই স্ব স্ব আসন থেকে উঠে দাঁড়ান। এ সময় আসামি আজহার কাঠগড়ার চেয়ার থেকে দাঁড়ালেও তার শারীরিক অভিব্যক্তি ছিল তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যপূর্ণ। শুরুতে আজহার পায়ের ওপর পা রেখে বসেন। এ সময় তাকে মাঝে মাঝে পা নাচাতেও দেখা যায়।
তিনি কিছু সময় চেয়ারের দুই হাতল চেপে বসে থাকেন। আবার আরাম করে হেলান দিয়ে ও মুখে হাত চেপে তাকে বসে থাকতে লক্ষ্য করা গেছে।
সকাল নয়টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে একটি প্রিজন ভ্যানে করে ট্রাইব্যুনালে এনে হাজতখানায় রাখা হয় এটিএম আজহারকে। সকাল পৌনে নয়টার দিকে আজহারকে কারাগার থেকে বের করে তাকে নিয়ে ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশ্যে রওনা হয় প্রিজন ভ্যানটি। পুরোটা সময় তাকে চিন্তাযুক্ত দেখালেও এজলাসকক্ষে তার আচরণ ছিল ঔদ্ধত্যপূর্ণ।
ট্রাইব্যুনালে এটিএম আজহারের পরনে ছিল সাদা রঙের পাঞ্জাবি ও পায়জামার সঙ্গে ঘিয়া রঙের সোয়েটার। হাতে সোনালী রংয়ের ঘড়ি, চোখে ছিল চশমা ও পায়ে ছিল সু। যথারীতি তার মাথা ও দাঁড়ির চুল ছিল মেহেদীরাঙ্গা।
রায় পড়ার আগে চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ভূমিকা উপস্থাপনের পর বেলা ১১টা ৪০ মিনিট পযন্ত ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি আনোয়ারুল হক রায়ের প্রথম অংশ পড়ে শোনান।
এরপর আরেক সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন রায়ের দ্বিতীয় অংশ পড়া শুরু করেন। এ সময় আজহারকে মুখে হাত দিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু তিনি বেশ মনোযোগ দিয়ে রায় শুনতে থাকেন। তখন তিনি চেয়ারে হেলান দিয়ে আরামের ভঙ্গিতে বসেন।
বেশ কিছুক্ষণ পর আবারও তিনি পায়ের ওপর পা রেখে বসেন। এরপর বেলা সোয়া ১২টায় রায়ের চূড়ান্ত অংশ পড়া শুরু করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। তিনি আজহারের বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিতে দোষী ও একটিতে নির্দোষী হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।
এরপরই আজহারকে যথেষ্ট সচেতন হয়ে বিচারকদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রায় শুনতে দেখা যায়।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান যখন ২,৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড ও অপর দুইটি অভিযোগে ৩০ বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করলেন, সঙ্গে সঙ্গে কাঠগড়ার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান জামায়াত নেতা এটিএম আজহার।
এ সময় তিনি বিচারকদের উদ্দেশ্যে উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘ফরমায়েশি রায়, ফরমায়েশি রায়। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ’।
এরপর সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা কাঠগড়ায় প্রবেশ করে তাকে থামানোর চেষ্টা করেন।
এর ২/১ মিনিট পর দুপুর পৌনে ১টার দিকে রায় পড়া শেষ হলে উত্তেজিত আজহার তার হাত উঁচিয়ে বিচারকদের উদ্দেশ্য আবারও বলেন, ‘আল্লাহ আকবার, আল্লাহ আকবার, আল্লাহ বিচার করবেন আপনাদের’।
দুপুর সোয়া একটার দিকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে ফের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আজহারকে।
এর আগে এ মামলার বিচার চলাকালে দুইবার ট্রাইব্যুনালের প্রতি অশোভন শারীরিক অভিব্যক্তির কারণে তাকে সতর্ক করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এজন্য একবার শাস্তিস্বরূপ তাকে বিচার চলাকালে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর জেলা আলবদর বাহিনীর কমান্ডার এটিএম আজহারের এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনা একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগের মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে পাঁচটি। এর মধ্যে তিনটিতে মৃত্যুদণ্ড এবং দু’টিতে ২৫ ও ৫ বছর করে আরও ৩০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির(উর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) অভিযোগ ছাড়াও তিনি যে আলবদর কমান্ডার ছিলেন তাও প্রমাণিত হয়েছে রায়ে। প্রমাণিত না হওয়া বাকি একটি অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন এই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৪