ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২, ০১ মে ২০২৫, ০৩ জিলকদ ১৪৪৬

জাতীয়

‘বইয়ে নাম লিখতে হবে, মলাট দিতে হবে, কত কাজ!’

বিশেষ সংবাদদাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:১৬, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৪
‘বইয়ে নাম লিখতে হবে, মলাট দিতে হবে, কত কাজ!’ মঙ্গলবার গণভবনে বই বিতরণ ও ফল ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা

ঢাকা: ‘তা‌হলে এবার আমি স্কুলে যাওয়া শুরু করতে পারি’। উপহার হিসেবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের এক সেট বই হাতে পাওয়ার পর সে কথাই বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।



মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সেখানে স্কুল মাদ্রাসার প্রাথমিক-ইবতেদায়ী আর মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতি শ্রেণীর একজন করে প্রতিনিধি শিশু-কিশোরের উপস্থিতি। রয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী, সচিব, বোর্ড চেয়ারম্যানরা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উর্ধ্বতনরাও। প্রথমেই ঘোষণা হয়ে গেলো এবছরের জেএসসি-জেডিসি ও প্রাথমিক-ইবতেদায়ী পরীক্ষার ফল। এরপর বই বিতরণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন চলছিলো।

শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদই সকল শ্রেনীর বই থেকে তৈরি একটি সেট প্রধানমন্ত্রীকে উপহার হিসেবে তুলে দিলেন। বই হাতে নিয়ে বিস্মিত প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘এগুলো আমার বই! তাহলে তো এবার আমি স্কুলে যাওয়া শুরু করতে পারি!’

এভাবেই প্রধানমন্ত্রী যেন ফিরে গেলেন তার ছেলেবেলায়। বক্তৃতায় ঘুরে ফিরে আসছিলো স্কুলের কথা, ছেলেবেলার কথা।

undefined


শিশুদের দিকে তাকিয়ে বলছিলেন, স্কুলের শিশুরা বই পেলে কত খুশি হয়, এখন বইয়ে নাম লিখতে হবে! মলাট দিতে হবে! কত কাজ! তাই না!’

শিশুরাও মাথা নাড়িয়ে, মুখে স্বলাজ হাসি ছড়িয়ে সায় দিচ্ছিলো প্রধানমন্ত্রীর কথায়।

প্রধানমন্ত্রী যেনো বুঝতে পারছিলেন ওদের মনের কথা। আর তাই বলছিলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম এমনই ভালো লাগতো। বই হাতে পেলেই শুরু হতো এতে নাম লেখা। মলাট দেওয়া। ক্যালেন্ডারের সুন্দর সুন্দর পাতা ছিড়ে তা দিয়ে বইয়ের  মলাট বানানো। এসবই আনন্দের।

কিছুক্ষণ আগেই শিক্ষা সচিব ঘোষণা দিচ্ছিলেন আগামী বছর আরও কিছু বইয়ের ইলেক্ট্রনিক ভার্সন, ই-বুক করা হবে। সে ঘোষণার কথা স্মরণ করেই বললেন, ডিজিটাল বই হবে, কিন্তু শিশুদের হাতে নতুন বই পাওয়ার যে আনন্দ তা থেকে ওদের বঞ্চিত করা যাবে না, বললেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী জানালেন, এবছর ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৩৩৪ জন শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দেওয়া হবে।

১ জানুয়ারি বছরের প্রথম দিনটিতেই হবে বই উৎসব। দেশের স্কুলে স্কুলে আনন্দ ছড়িয়ে যাবে এটাই তার প্রত্যাশা।

undefined

undefined


প্রধানমন্ত্রী বলেন, বই পাওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এতে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। আগে বই কিনে দেওয়াই ছিলো গরীব বাবা-মায়ের জন্য কষ্টের। এখন তা করতে হয় না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে সরকার এই কোটি কোটি বই নিজের খরচে বানিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করছে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, এবছর ৩৩ কোটি ৬২ লাখ ৯৬ হাজার ৯২৩টি বই তৈরি হয়েছে। যা শিশু-কিশোর-কিশোরীদের মাঝে বিতরণ করা হবে। স্কুলে স্কুলে বই পৌঁছে গেছে। সবাই যথাসময়ে বই হাতে পাবে। নতুন বছর তাদের শুরু হবে বই পাওয়ার আনন্দে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইচ্ছা থাকলেই করা সম্ভব। বাংলাদেশ সেটাই প্রমান করেছে।

এবার দৃষ্টি প্রতিবন্দ্বী শিক্ষার্থীদের জন্যও বিনামূল্যে ব্রেইল পদ্ধতির বই বিতরণ করা হচ্ছে। দৃষ্টি প্রতিবন্দ্বী আবু ফায়েজের হাতে ব্রেইল পদ্ধতির বই তুলে দিয়ে। তার হাতটি নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে পরম আদরে ব্রেইল লেখার ওপর হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। একইভাবে প্রতিটি শিশুকে কোলের কাছে টেনে নিয়ে তুলে দিচ্ছিলেন তাদের নতুন বই।

পাশে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ছোটবোন শেখ রেহানা। নতুন বই বিতরণের এই কর্মসূচিতে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার মুখে হাসি ছড়িয়ে ছিলো গোটা সময়টিতেই। বই হাতে নেওয়ার পর দৃষ্টি প্রতিবন্দ্বী আবু ফায়েজকে হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে তার আসনে বসিয়ে দিয়ে এলেন শেখ রেহানা।

আর আজিমপুর গার্লস স্কুলের একটি মেয়ে যখন বই নিতে এলো, দুবোনই তাকে জড়িয়ে ধরলেন। দুজনেরই নিজের স্কুল ছিলো সেটি।

এভাবে ভালোবাসা ছড়িয়ে দুবোন বই বিতরণ করলেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে সারাদেশের শিশু-কিশোরদের উদ্দেশ্যে বললেন, তারা যেনো মন দিয়ে লেখাপড়া করে। তাদের লেখাপড়ার দায়িত্ব সরকার নেবে। সরকারের এই খরচকে তিনি স্রেফ বিনিয়োগ বলেই মনে করেন, জানালেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আজ শিশুরা ভালোকরে লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে, দেশ বিদেশে সুনাম অর্জন করবে তার তার মধ্য দিয়েই দেশ এগিয়ে যাবে এটাই প্রত্যাশা।

একটু সুযোগ করে দিলেই এই ছেলে-মেয়েরা আন্তর্জাতিকভাবে সম্মান বয়ে আনতে পারবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ সময় ১৬০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।