সিরাজগঞ্জ: যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং, আইন না মানার প্রবণতা, ফুটপাত দখল করে দোকান স্থাপনসহ নানা অব্যবস্থাপনায় যানজট, বিশেষ করে রিকশাজটের নগরে পরিণত হয়েছে যমুনাপাড়ের শহর সিরাজগঞ্জ।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে দিনভর দফায় দফায় রিকশাজটে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন শহরবাসী।
শহর ঘুরে দেখা যায়, শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা বাজার স্টেশন স্বাধীনতা স্কয়ারে প্রায়শই যানজট লেগে থাকে। সাত রাস্তার এ মোড়টিতে রিকশা, অটোরিকশা ছাড়াও বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন ভারী যানবাহন চলাচল করে। এ মোড়টিতে ট্রাফিক আইন অমান্য করে বেপরোয়া গতিতে যান চলাচলের কারণে মাঝে মাঝেই দুর্ঘটনার ঘটছে।
এছাড়া শহরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়কের খেদন সর্দার মোড়, সিরাজী সড়ক মোড়, বড় বাজার, মুজিব সড়কের পদ্মপুকুর মোড়, ভাসানী কলেজ মোড়, এক নম্বর খলিফা পট্টি মোড় ও চৌরাস্তা মোড়, নিউ ঢাকা রোডের রেলগেট, চামড়া পট্টি, এস বি ফজলুল হক রোডের গোশালা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গলি, রুপালি ফার্নিচার মোড়, এম এ মতিন সড়কের পারভীন মোড় ও বাসস্ট্যান্ড মোড় এবং কাজিপুর রোডের কাঠেরপুল এলাকায় তীব্র রিকশাজটে প্রতিনিয়নত ভোগান্তিতে পড়ছেন জনগণ।
কথা হয়, ভুক্তভোগী শহরবাসী, পথচারী, শহরে কেনাকাটা করতে আসা মানুষের সঙ্গে।
তারা বলেন, এ শহরে কোনো শৃঙ্খলা নেই। শহরের মাঝখানে একাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ড, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক স্ট্যান্ড, যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানো-নামানোর কারণে যানজট আর দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। ট্রাফিক শৃঙ্খলা মেনে চলার ধার কেউ ধারে না। উল্টোপথে গাড়ি চালালেও কারও যেন কিছুই বলার থাকে না। কারও কোনো ধৈর্য নেই, নিয়মে হোক বা অনিয়মে হোক, আগে যেতেই হবে-এমন প্রবণতাতেই নষ্ট হচ্ছে শহরের শৃঙ্খলা।
সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ট্রাফিক বিভাগ ও জেলা ট্রাফিক পুলিশ সূত্র জানায়, ছোট্ট এ শহরে রাস্তার তূলনায় অটোরিকশা-ইজিবাইকের সংখ্যা অনেক বেশি। আইনগত ব্যবস্থা নিতে গেলেই তদবির বা প্রভাব খাটানোর চেষ্টা। ফলে দায়িত্বরতরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়।
কথা হয়, কাপড় ব্যবসায়ী আজমলের সঙ্গে। পার্শ্ববর্তী বেলকুচি উপজেলার বাসিন্দা তিনি। তিনি বলেন, সপ্তাহে দুদিন শহরে আসতে হয়। এখন শহরে রিকশা নিয়ে ঢোকাই যায় না। প্রতিটা মোড়ে মোড়ে যানজট লেগে থাকে। একই কথা বলেন রায়গঞ্জের পাঙ্গাসী থেকে আসা হোসেন আলী, কামারখন্দের রায় দৌলতপুর থেকে আসা সোলেমান প্রামাণিকসহ অনেকেই। তারা বলেন, এসএস রোডে কখনো কখনো হেঁটে চলার রাস্তাও থাকে না।
আমিনুল, শাহেদ আলী, বিপ্লব, রফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েক রিকশাচালক জানান, শহরের ফুটপাতগুলো দখল করে দোকান দেওয়া হয়েছে। এমনকি মেইন রাস্তার ওপরও দোকান বসানো হয়েছে। এছাড়া বড় বড় বিপণি বিতানগুলো, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভবনে গ্যারেজ না থাকায় রাস্তার ওপর গাড়ি পার্ক করা হয়। এসব কারণে শহরে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। একশ মিটার পথ যেতে আধা ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, আমাদের জনগণের মধ্যে নাগরিক গুণের বড় অভাব। রয়েছে আইন না মানার প্রবণতা। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি। যানজট নিরসনে বিভিন্ন পয়েন্টে ৩৩ জন দুই শিফটে দায়িত্ব পালন করছেন। মোড়গুলোতে যথাস্থানে মোটরসাইকেল রাখতে বলা হয়েছে। ভবন তৈরি করলে অবশ্যই গ্যারেজ করার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, শহরে যানজট নিরসনে ২২ জন ট্রাফিক পুলিশ সাতটি পয়েন্টে দুই শিফটে দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা সচেতনতা বাড়ানোর জন্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছি। ঈদকে সামনে রেখে দিনে শহরে সড়কে ভারী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পৌর প্রশাসক স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, মুজিব সড়কে রাস্তার মধ্যে রশি টানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে ক্রস করতে না পরে। ঈদকে সামনে রেখে সিঙ্গেল রোড করে দেওয়া হবে। ভাসমান দোকান, মোটরসাইকেলগুলো প্রবলেম করে। এরই মধ্যে ডিসি স্যারসহ আমরা এসএস রোডসহ অনেক জায়গায় গিয়েছি। ভাসমান দোকানগুলো তুলে দিয়েছি। আমরা তুলে দিই, পরদিনই আবার বসে। যানজট নিরসন সবার আন্তরিকতা ছাড়া সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৫
এসআই