ঢাকা, সোমবার, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

এভাবে আমাদের ফাঁকি দিল মেয়েটা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৫
এভাবে আমাদের ফাঁকি দিল মেয়েটা!

যশোর: চলতি সপ্তাহে একবার বাড়িতে বেড়াতে আসতে চেয়েছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয়বর্ষের ছাত্রী সাবরিনা আক্তার শাম্মী। তার বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলার নারায়নপুর গ্রামে।

তবে, বেড়াতে নয়, বাড়িতে এসেছে শাম্মীর নিথর দেহ। যা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। তারা বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। পরিবারের সেই শোক ছড়িয়েছে পুরো এলাকায়।  

সাবরিনা আক্তার শাম্মী নারায়ণপুর গ্রামের জাহিদুর রহমান লিপ্টনের কন্যা। লিপ্টন কেশবপুর উপজেলার একটি ইউনিয়নে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) হিসেবে কর্মরত। রোববার (২৬ জানুয়ারি) ঢাকা থেকে মেয়ের মরদেহ নিয়ে এসে বাড়িতে দাফন করেছেন তিনি।

পরিবারের সদস্যরা জানান, রোববার তার মৃত্যুর কথা জানতে পারেন তারা। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতের কোনো এক সময় পুরনো ঢাকার তনুগঞ্জ লেনের একটি ছাত্রী মেসের নিজ শয়নকক্ষে তিনি আত্মহত্যা করেন বলে জানতে পেরেছেন। রোববার সকালে খবর পেয়ে পুলিশকে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে সূত্রাপুর থানা পুলিশ যেয়ে ওই কক্ষ থেকে শাম্মীর মরদেহ উদ্ধার করে।  

স্থানীয়রা জানান, সাবরিনা আক্তার শাম্মী এসএসসি পাস করার পর চৌগাছা মৃধাপাড়া মহিলা কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে সাফল্যের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন তিনি।  

নারায়ণপুর গ্রামের শিক্ষক আক্তারুজ্জামান বলেন, শাম্মী অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ছিলেন শান্ত প্রকৃতির মেয়ে। শাম্মী মেসে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। স্যোসাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি, প্রেমঘটিত কারণে সে আত্মহত্যা করেছে।  
এলাকাবাসী জানান, শাম্মীরা দুই বোন। শাম্মীর সাত বছর এবং বোনের চার বছর বয়সে বাবার কাছে রেখে মা অন্যত্র বিয়ে করেন। কিন্তু সেই স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় মা আত্মহত্যা করেন। ছোটবেলা থেকে বাবাই তাদের লালন পালন করেছেন। তার এমন মৃত্যুতে সবাই যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।

জাহিদুর রহমান লিপ্টন বলেন, ছোটবেলা থেকেই শাম্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান স্বপ্ন দেখত। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় ছোট বোনকে দিয়ে তা পূরণের উদ্যোগ নেয় শাম্মী। সে কারণে ছোট বোনকে কয়েক মাস আগে ঢাকায় নিয়ে ভালো কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়ে দেয়।  

তিনি জানান, শনিবার দুই বোন একসঙ্গে ঘোরাঘুরি করেছে। ছোট বোনকে তার মেসে রেখে নিজের মেসে ফিরে যায় শাম্মী। তারপর রাতের কোনো এক সময় আত্মহত্যা করে। কি দিয়ে যে কি হয়ে গেলো মেয়েটার।  

কান্নাজড়িত কণ্ঠে জাহিদুর রহমান বলেন, মেয়েটা সর্বশেষ বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় বলেছিল এ সপ্তাহেই আর একবার বাড়িতে বেড়াতে আসবে। তা সে এলো, কিন্তু চিরজীবনের জন্য। যে জীবনে আমরা আর তাকে পাবো না। এভাবে আমাদের ফাঁকি দিল মেয়েটা!

রোববার রাতেই শাম্মীকে নারায়ণপুর গ্রামে দাফন করা হয়েছে।

এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক ঢাকার মিডিয়াকে জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শাম্মী প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করেছেন। গলায় ফাঁস নেওয়ার সময় তিনি প্রেমিককে ফোন কলে রেখেছিলেন। পুলিশ তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি জব্দ করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৫
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।