ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

বালু লুটের মহোৎসব, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
বালু লুটের মহোৎসব, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁড়ালকাঁটা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু লুটের মহোৎসব চলছে

নীলফামারী: পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নজরদারির অভাবে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের চাঁড়ালকাঁটা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু লুটের মহোৎসব চলছে।

সকাল থেকে রাত অবধি বাহাগিলি, চাঁদখানা, পুটিমারী ও নিতাই ইউনিয়নের ১৫ থেকে ২০টি পয়েন্ট থেকে বালু লুট করছে বালু খেকো সিন্ডিকেট।

ফলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে সারা দেশের নদী নালা, খাল-বিল খনন করা হয়। খননকৃত নদীর বালু নদীর দুই তীরে স্তূপ করে রাখা হয়। গত ২০২৩ সালে চাঁড়ালকাঁটা নদীর এসব বালু নিলামে বিক্রির জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। তৎকালীন আওয়ামী সরকারের জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা লোক দেখানো টেন্ডারের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তাদের ম্যানেজ করে বালু খেকো সিন্ডিকেটটি সমঝোতা করে নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে এসব বালুর লট নিজেদের নামে নিয়ে কোটি কোটি টাকার বালু বিক্রি করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যান।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের চাঁদখানা সারোভাষা ব্রিজের নিচ থেকে, বাহাগিলি ইউনিয়নের স্ট্রিল ব্রিজের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে, বাহাগিলি ডাংপাড়া গ্রামের বিএনপি নেতা আতাউর রহমান আতার বাড়ির পূর্বদিক, বাহাগিলি ময়নাকুড়ি সিনহা কোম্পানির সামনে, বাহাগিলি ঘোপাপাড়া, কালুরঘাট ব্রিজের পূর্ব দিক, পাগলাটারী, নিতাই ইউনিয়নের মৌলভীর হাট, নিতাই পানিয়াল পুকুর, নিতাই মুশরুত বেলতলি, পুটিমারী ইউনিয়নের চৌধুরীর বাজার, কালিকাপুর ময়দানপাড়া, শালটিবাড়ি, খোকারবাজারসহ প্রায় ২০টি পয়েন্টে নদী খননের রক্ষিত বালু দিনে রাতে বালুখেকো সিন্ডিকেটটি শত শত মাহিন্দ্র ট্রাক্টর ও ড্রাম ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে।



পুটিমারী ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের বাসিন্দা হযরত আলী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নামমাত্র মূল্যে নীলফামারী সদরের রোকনুজ্জামান নামে একজন আট নম্বর লটটির বালু পরিবহনের অনুমতি পায়। সরকারিভাবে অনুমতি পাওয়ার কারণে ওই নেতা কৃষি জমি ও গ্রামের রাস্তাঘাট ভেঙে চুরমার করে বালুগুলো পরিবহন করে। তার বালু পরিবহনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় গ্রামবাসী ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল। বর্তমানে আরেকটি সিন্ডিকেট ক্ষমতার দাপটে ওই বালু পরিবহন করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কৃষক জানান, বাহাগিলি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা জুগল চন্দ্র গোপনে নদীর চরসহ ওই স্তূপ করা বালু লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালে তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

কিশোরগঞ্জ উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সৈয়দপুর পাউবোর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী সাব ডিভিশন-২ এর মো. মাহমুদুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে তিনটি লটের সময় বাড়ানো হয়েছে। অবশিষ্ট লটের মেয়াদ শেষ হয়েছে।

মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া লটগুলোর বালু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লুট হয়ে গেলে আমাদের করার কিছুই নেই। যা করার উপজেলা প্রশাসন করবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী হক বলেন, তিনটি লটের সময় বাড়ানো হয়েছে। বাকি লটগুলোর বালু লুট করা রোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।