ঢাকা: সংক্ষুদ্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তাদের ইন্ধনদাতাদেরও খুঁজে গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তারা এ দাবি জানান।
পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত একটি গ্রাফিতি রাখাকে কেন্দ্র করে বুধবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবন ঘেরাও কর্মসূচি দেয় সংক্ষুদ্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা নামে একটি প্ল্যাটফর্ম। আন্দোলনকারীদের মিছিলটি মতিঝিল মেট্রো স্টেশনের নিচে পৌঁছালে স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি নামে একটি প্ল্যাটফর্মের সদস্যরা তাদের ওপর স্টাম্প ও লাঠিসোঁটা দিয়ে হামলা করেন।
হামলায় অন্যদের সঙ্গে ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৪তম ব্যাচের রুপাইয়্যা শ্রেষ্ঠা, ১৫তম ব্যাচের রাহী নায়েব ও ববি বিশ্বাস আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সহযোগী অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক খান, সাইফুল আলম চৌধুরী, কাজলী শেহরীন ইসলাম, সাব্রিনা সুলতানা চৌধুরী, খোরশেদ আলম, সহকারী অধ্যাপক মার্জিয়া রহমান প্রমুখ। এছাড়া বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
হামলায় আহত ববি বিশ্বাস বলেন, বুধবার (১৫ জানুয়ারি) তারা লাঠির মাথায় পতাকা দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে। বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকাকে তারা অপমানিত করেছে। বাংলাদেশের মানুষ রক্তের ঋণ শোধ করবে।
আরেক আহত রাহী নায়েব বলেন, তারা আগে থেকেই স্টাম্প নিয়ে অবস্থান করছিল। আমরা ধারণা করছিলাম, তারা আমাদের ওপর হামলা করবে। কিন্তু পুলিশ মাঝখান থেকে সরে গিয়ে হামলার সুযোগ করে দেবে, তা আমরা আশা করি নাই। সরকারের যদি সদিচ্ছা থাকে, তাহলে ফুটেজ থেকে সবাইকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব। সরকার যদি তাদের গ্রেপ্তার না করে, তাহলে আমরা বুঝে নেব, এ সরকার কারা পরিচালনা করছে।
সমাবেশে অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, পাঠ্যবই থেকে আদিবাসীদের স্বীকৃতি ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এমনকি তাদের সহ্য করাও হচ্ছে না। বাংলাদেশের ৬১টি জেলায় সিভিল শাসন, কিন্তু তিন পার্বত্য জেলায় নির্জলা সেনা শাসন; এটা কোনোদিন আমরা বরদাস্ত করতে পারি না।
তিনি বলেন, একটি নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী যাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি আছে, তাদের ‘আদিবাসী’ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না। বলা হচ্ছে তারা বিচ্ছিন্নতাবাদী। পাহাড়ে তাদের জমি থেকে উৎখাত করা হচ্ছে। এখন সমতলেও তাদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। দ্রুত এ হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা না হলে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচিতে যাব।
বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ পাব। কিন্তু আমরা দেখলাম, আমাদের সমাজের নীতি-নৈতিকতাগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছে। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) যা হয়েছে, তা কোনো সভ্য দেশে হতে পারে না।
সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশন গতকাল বহুত্ববাদী রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল, তখনই আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বর হামলা চালানো হয়েছে। আমরা প্রয়োজনে আবারও আন্দোলনে নামবো, তবুও একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবো।
জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সেলের সদস্য মীর আরশাদুল হক বলেন, তারা রূপাইয়্যা শ্রেষ্ঠার ওপর এমনভাবে হামলা করেছে, তার মাথায় ১২টি সেলাই লেগেছে। এ রূপাইয়্যা অভ্যুত্থানের সময় মোহাম্মদপুর থেকে নিয়মিত আন্দোলন করেছে। তার ভাইকে স্থানীয় কাউন্সিলর তুলে নিয়ে নির্যাতন করেছেন। যাদের মদদে শ্রেষ্ঠার ওপর হামলা করা হয়েছে, তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি যখন রাজু ভাস্কর্যে কর্মসূচি করে, তখনি পাহাড়ে আগুন লাগে, সংঘর্ষ হয়। তারা এখান থেকে এসবে উসকানি দিয়েছে। যারা পেছন থেকে এসবে উসকানি দিয়েছে, তাদের সামনে এনে গ্রেপ্তার করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৫
এফএইচ/আরআইএস