ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮ রজব ১৪৪৬

ফিচার

শীতচাদরে মোড়ানো লালটিলা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২৫
শীতচাদরে মোড়ানো লালটিলা লালটিলার অপরূপ সৌন্দর্য। ছবি: বিশ্বপ্রিয় কাব্য

মৌলভীবাজার: কয়েক বছর থেকে দেশে ভ্রমণের অন্যতম প্রিয়স্থান হিসেবে সুপরিচিত চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল।

পর্যটন নগরীর যাবতীয় উপাদান এখানে উপস্থিত।

ফলে সপ্তাহান্তে অর্থাৎ বৃহ, শুক্র আর শনিবার অগণন পর্যটকের ঢল নামে এই শহরে।  

শীত মানেই ভ্রমণ, শীত মানেই দূরে কোথাও বেরিয়ে পড়া। একাকি বা সবান্ধবে, কিংবা সপরিবারে। চা নগরীতে শীত নেমে আসে অদেখা সৌন্দর্যের জানান দিতে। পাহাড়ের কোণে কোণে জমে থাকা কুয়াশা আর শীতের মেলবন্ধন নয়নাভিরাম সৌন্দর্য চোখের সীমায় ছড়িয়ে দেয়। শীতচাদরে ঢাকা এই চা জনপদ।

দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ শ্রীমঙ্গল। চা শিল্পের জন্য শ্রীমঙ্গলের সুনাম ও পরিচিতি বিশ্বব্যাপী। ঢাকা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরত্বে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট বিভাগের দক্ষিণে সুবিশাল পাহাড়ের পাদদেশে এর অবস্থান।  

প্রকৃতির সুরম্য নিকেতন শ্রীমঙ্গলে দেখার আছে চা বাগানের পর চা বাগান ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। এদিক-ওদিক তাকালেই চোখে পড়ে সবুজ বনানী আর বর্ণিল সব পাখির কলকাকলী। চা বাগান, লেক, হাওর, উঁচু-নিচু পাহাড়, ঘন-জঙ্গল, রাবার বাগান দিয়ে সাজানো অদ্ভুত সুন্দর এই স্থানটির নাম শ্রীমঙ্গল। এর সৌন্দর্যের কথা বলে শেষ করা যাবে না।

পাহাড়ি লালমাটি টিলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি। এর সঙ্গে এসে যুক্ত হয়েছে শীতের কুয়াশাঘেরা মনোমুগ্ধকর দৃশ্যাবলি। এখানে সৌন্দর্যের দ্বৈত রূপ। একটি রূপ হলো, তার আরণ্যক শোভা। অপরটি শীতকাল থেকে প্রাপ্ত কুয়াশাঘেরা বর্ণাতীত রূপের অশেষ মাধুর্য।

এটা একটি পাহাড়ি টিলা যা শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফুলছড়া চা বাগানে অবস্থিত। লালমাটি পথের এই পাহাড়ি সৌন্দর্য হৃদয় জুড়ায়। চোখ বিমুগ্ধ হয় বারবার। এই পাহাড়ে প্রতিদিন শতশত মানুষের ভিড়ে জায়গাটি হয়ে ওঠে কোলাহলপূর্ণ।

নারী-পুরুষ ও শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের পদভারে হয়ে ওঠে মুখরিত। লালটিলায় রয়েছে চোখ ধাঁধানো মনোমুগ্ধকর সবুজের সমারোহ। রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির লতা ও বৃক্ষ ছিল। টিলার মাটি লালমাটি, এ কারণেই টিলাটি লালমাটি টিলা হিসেবে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। লালমাটি টিলার ওপরে সনাতন ধর্মালম্বীদের একটি কালি মন্দিরও রয়েছে। স্থানীয় অনেকে কালি মা টিলা বলে থাকেন।

প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি এই লালমাটি টিলা ভ্রমণপিপাসু যেকোনো মানুষকে মুগ্ধ করবে। এখানে এলে যে কেউ কিছুক্ষণের জন্য হলেও হারিয়ে যাবেন প্রকৃতির কোলে। টিলার ওপড়ে ওঠলে মনে হয় পাহাড় যেন দূর আকাশের সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে। এখানে সারাক্ষণ বিরাজ করে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কিচির-মিচির আওয়াজ। এর চারপাশের দৃশ্য ভ্রমণপিয়াসীদের মুগ্ধ করে তুলবে সারাক্ষণ। এ টিলার উঁচু চূড়ায় কোথাও সমতল ভূমি আবার কোথাও টিলার সমাহার। আরও দেখা যাবে ওপারের সীমানায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। পায়ে হেঁটে চারদিকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আছে মনোরম পাহাড়ি পরিবেশ।

ওখানকার গাছগাছালির মধ্যে দেখা যাবে বিরাট এলাকাজুড়ে আছে আকাশমনি, বেলজিয়াম, ইউক্যালিপটাস, রাবারগাছ, কড়ই এবং ওষুধিগাছ। এছাড়াও রয়েছে নানা জাতের লতাগুল্ম, যা মুগ্ধ করে পর্যটকদের। বিশেষ করে এ টিলার পাহাড়ে উঠে এলে দূরের আকাশকেও কাছে মনে হয়। সবুজ ও হালকা নীলের নৈসর্গিক এই দৃশ্য চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। শীতকালে অনেক পর্যটক এ টিলার সৌন্দর্য অবলোকন করতে ভিড় জমায়।

ফুলছড়া চা বাগানের চা-শ্রমিক নেতা জগবন্ধু বলেন, প্রতিদিন এখানে শতাধিক দর্শনার্থীরা বেড়াতে আসেন। শুক্রবার ও শনিবার সবচেয়ে বেশি লোকজন আসেন। এখানে মন্দির থাকায় সনাতন ধর্মালম্বীরা বেশি আসেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি লালমাটি টিলায় পর্যটনকেন্দ্র করা গেলে স্থানীয়রা উপকৃত হতেন। এ বিষয়ে সরকারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

এই পাহাড়ি জনপদে পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত অঞ্চলের উন্নয়নের পাশাপাশি অনেক লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে বলে জানান স্থানীয়রা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২৫
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।