ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

অপসাংবাদিকতা ও তথ্য সন্ত্রাস সাংবাদিকতার মর্যাদাকে ম্লান করে দিচ্ছে: কাদের গনি 

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪
অপসাংবাদিকতা ও তথ্য সন্ত্রাস সাংবাদিকতার মর্যাদাকে ম্লান করে দিচ্ছে: কাদের গনি  কাদের গনি চৌধুরী

ঢাকা: বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, দলবাজি, অপসাংবাদিকতা, হলুদ সাংবাদিকতা এবং তথ্য সন্ত্রাস সাংবাদিকদের মর্যাদা ম্লান করে দিচ্ছে। বস্তুনিষ্ঠ,সৎ, নির্ভীক সাংবাদিকতা দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনে।

বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার প্রশ্নে কোনো আপোস করা চলবে না।  

শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাব অডিটোরিয়ামে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা আয়োজিত সাংবাদিক মহাসম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম নানা সংকটে আবর্তিত। এই সংকট তৈরি করেছে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার। বিগত ১৫ বছর এ দেশের গণমাধ্যম সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে পারে নাই। এ দেশের গণমাধ্যম ফ্যাসিস্ট সরকারের খুন, গুম, লুটপাট, হত্যার তথ্য তুলে ধরতে পারে নাই। বরাবরই স্বৈরশাসকরা গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করে, যেন মানুষ তাদের দুঃশাসনের তথ্য জানতে না পারে। তাই অনেকে এখন গণমাধ্যমের প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারছে না। এটা আমাদের একটা দৈন্যতা।

কাদের গনি বলেন, গণমাধ্যমের সবসময় জনগণের পক্ষে থাকার কথা ছিল। কিন্তু কীভাবে জানি না জনগণের সঙ্গে গণমাধ্যমের একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষের গালির তালিকায় আগে পুলিশ ও ডাক্তারের নাম থাকতো, এখন সাংবাদিকদের নামও থাকে।

এই সাংবাদিক নেতা বলেন, গত ১৫ বছর অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিউজ বাংলাদেশের পত্রিকা ছাপেনি। সে সব নিউজ ছাপা হয়েছে বিদেশি গণমাধ্যমে এবং বাংলাদেশি নিউজ ছেপে বিদেশি গণমাধ্যম পুরস্কারও পেয়েছে। আমাদের সাংবাদিকরা আয়না ঘরের খবর ছাপাতে পারলে আয়না ঘর হয়তো গড়ে উঠতো না। এটা বিদেশি গণমাধ্যমে এসেছে। আপনি যদি সত্য তুলে ধরতে না পারেন, তবে আপনার ওপর বিশ্বাস থাকবে না।

কাদের গনি বলেন, সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে গুম, খুনের কথা জিজ্ঞাসা না করে তৈল মর্দন করতেন অনেক ‘দালাল সাংবাদিক’। সেটা প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা সভায় পরিণত হতো। এভাবে শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার থেকে মহা-স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট থেকে মহা-ফ্যাসিস্ট বানানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন তারা। এ সত্য আমাদের স্বীকার করতে হবে।  

আবেগাপ্লুত হয়ে কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ছাত্ররা মেধার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়ার দাবি নিয়ে এসেছিল। সেই ছাত্রদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা দেখলাম, উত্তরা ও যাত্রাবাড়ীতে শিশুদের, আমাদের সন্তানতুল্য শিশুগুলোর বুক ঝাঁঝরা করে দেওয়া হলো। আমরা দেখলাম, তাদের রক্ত পিচঢালা রাস্তায় গড়িয়ে যাচ্ছে। একাত্তরের সেই দৃশ্য আমরা দেখলাম জুলাই-আগস্টে। ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর কী অপরাধ? তারাই তো আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদেরই এই বাংলাদেশের নির্মাতা হওয়ার কথা ছিল।  
অপসাংবাদিকতা ও হলুদ সাংবাদিকতা চর্চা থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে কাদের গনি চৌধুরী বলেন, হলুদ সাংবাদিকতা ম্লান করে দিচ্ছে সাংবাদিকতার গৌরব। সাংবাদিকরা হবে দেশের জন্য, জনগণের জন্য। সাংবাদিকরা একমাত্র দেশের জনগণের কাছে দায় বন্ধ। আর কারও কাছে তাদের দায়বদ্ধতা নেই।  

অনেকে অপসাংবাদিকতা করে অনেকে অর্থ-বিত্তের মালিক হয়ে যাচ্ছেন। নানা অজুহাত নিয়ে টাকা চাই। এসব ভুয়া সাংবাদিকরা যেন জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে কাজ করার সুযোগ না পায় উল্লেখ করে এ সময় সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্য অটুট রাখার আহ্বান জানান কাদের গণি চৌধুরী।


জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি মমিনুর রশিদ শাইনের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহিন, সিনিয়র সহকারী মহাসচিব বাছির জামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, শাহজান মোল্লা, আলমগীর গনি, খায়রুল ইসলাম, মিজানুর রহমান প্রিন্স, জামাল হোসেন, আরিফুর রহমান আজাদ ও হাসান সরকার জুয়েল।  

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার মহাসচিব কামরুল ইসলাম।

ওবায়দুর রহমান শাহিন বলেন, দেশে প্রকৃত অর্থেই জনস্বার্থে সাংবাদিকতার সংকট রয়েছে এবং এ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে সংস্কার জরুরি। দেশে বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার রয়েছে এবং এই আমলেই সাংবাদিকতারও সংস্কার হওয়া উচিত।


বাছির জামাল বলেন, সাংবাদিকদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে নতুন গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনকে সারা দেশের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তৃণমূল থেকে সংবাদমাধ্যমে সংস্কারের তাগিদ জানিয়েছেন তিনি।

মমিনুর রশিদ শাইন বলেন, ঢাকার বাইরে মফস্বলের সাংবাদিকতা এখনো পেশাগত স্বীকৃতি অর্জন করতে পারেনি। সাংবাদিকতার মর্যাদা ও অর্থনৈতিক সচ্ছলতা তৈরি না হলে প্রকৃত অর্থে সাংবাদিকতার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

শহিদুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যার ১২ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা কোনো বিচার পাইনি। যেহেতু ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে, তাই বর্তমান সরকারকে বলতে চাই-অবিলম্বে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। আমরা যেমন সাংবাদিক সুরক্ষা আইন চাই, ঠিক একইভাবে আর কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে গিয়ে যেন কোনো সাংবাদিক আহত না হয় সেটাও চাই।

এই পরিস্থিতিতে গণমানুষের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে লেজুড়বৃত্তি ছেড়ে আদর্শ ও নৈতিকতার মানদণ্ডে সাংবাদিকতার সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহ্বান সারা দেশ থেকে আসা সাংবাদিক প্রতিনিধিদের। একইসঙ্গে গণ-অভ্যুত্থানের পাঁচ মাস পরেও সাংবাদিকতা সংস্কারে উদ্যোগ নেই জানিয়ে ক্ষোভ ও আক্ষেপ জানান তারা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।