ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মেধাভিত্তিক-আধুনিক ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠার দাবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪
মেধাভিত্তিক-আধুনিক ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠার দাবি বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত প্রতিবাদ সভা। ছবি: ডি এইচ বাদল

ঢাকা: নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন বিনির্মাণের অংশ হিসেবে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো বাংলাদেশেও সিভিল প্রশাসনকে অন্যান্য টেকনিক্যাল বা প্রফেশনাল ক্যাডারের সংমিশ্রণ থেকে পৃথক রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান কার্যালয়ে বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় এসব দাবি ওঠে।

সভায় বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত এবং কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা আলোচনায় অংশ নেন। আমন্ত্রিত আলোচকদের মধ্যে ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, ডিইউজের প্রেসিডেন্ট শহীদুল ইসলাম, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ও দৈনিক যুগান্তরের উপ-সম্পাদক বি এম জাহাঙ্গীর। তারা প্রাণবন্ত আলোচনা করেন।

আলোচকেরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, সেই অকুতোভয় বীরদের, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ পেয়েছে লাল সবুজের পতাকা, পেয়েছে স্বাধীনতা। একইসঙ্গে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অকাতরে প্রাণ দেওয়া এবং আহত হাজারো ছাত্র-জনতার ত্যাগ, যাদের ভয়শূন্য চিত্ত ও সুউচ্চ শির উপহার দিয়েছে এক নতুন বাংলাদেশ।

সভায় আলোচকেরা বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সরকারের উপ-সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য বিদ্যমান ৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশ করার সুপারিশের কথা বলেছেন। উচ্চ আদালতে মীমাংসিত একটি বিষয়ে এ ধরনের বক্তব্য সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত, কমিশনের আওতাবহির্ভূত এবং সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

তারা বলেন, উপ-সচিব পদে পদোন্নতি প্রত্যাশী প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোনো প্রকার মতবিনিময় বা পর্যাপ্ত বিচার-বিশ্লেষণ না করে দেওয়া উল্লিখিত সিদ্ধান্তে মাঠ প্রশাসনসহ সব স্তরে কর্মরত বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন কমিশন প্রধানের এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানায়।  

আলোচকেরা আরও বলেন, কোটার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া জুলাই বিপ্লব পরবর্তী গঠিত সংস্কার কমিশনের এই বক্তব্য জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট এবং কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক মর্মে প্রতীয়মান হয়। প্রকৃতপক্ষে একটি জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন বিনির্মাণের অংশ হিসেবে সার্ভিসের এন্ট্রি পদ থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত পদগুলোর সমন্বয়ে একটি মেধাভিত্তিক এবং আধুনিক প্রশাসন ব্যবস্থার উপযোগী বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।

প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন সার্ভিসের কর্মকর্তারা যখন অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলাসহ স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নকল্পে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, সেখানে এ ধরনের বক্তব্য আন্তঃসার্ভিস দ্বন্দ্বকে উসকে দিতে পারে। এ জন্য কমিশনের লিখিত রিপোর্ট সরকারের কাছে দাখিলের আগেই আকস্মিকভাবে এ ধরনের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কেন প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হলো এবং তা রহস্যজনক বিধায় কমিশনের অভিপ্রায় খতিয়ে দেখার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানানো হয়।

তারা আরও বলেন, সরকারের উচ্চতর সিভিল প্রশাসনের স্বাতন্ত্র্য ও গুরুত্ব উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। কিন্তু তা উপেক্ষা করে অন্যান্য টেকনিক্যাল বা বিষয়ভিত্তিক সার্ভিসের সঙ্গে প্রশাসন-কে একত্রে ক্যাডারভুক্তকরণ করা যথাযথ হয়নি। তদুপরি সার্ভিসগুলোর বিভিন্নতা ও বৈচিত্র্যকে গুরুত্ব না দিয়ে এভাবে একত্রে ক্যাডারভুক্তকরণের নজির সম্ভবত বিশ্বের কোথাও পাওয়া যাবে না।

মূলত এই অসামঞ্জস্যতাপূর্ণ সংমিশ্রণ থেকেই জটিলতার সূত্রপাত এবং প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে তুলনা করে অবাস্তব বৈষম্য নিরসন বা সমতার দাবি তোলার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। সুতরাং বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো বাংলাদেশেও সিভিল প্রশাসনকে অন্যান্য টেকনিক্যাল বা প্রফেশনাল ক্যাডারের সংমিশ্রণ থেকে পৃথক রাখা প্রয়োজন ছিল।

আলোচকেরা বলেন, বিশ্বের যেসব দেশে আধুনিক জনকল্যাণমুখী প্রশাসন বিদ্যমান, সেখানে কোথাও বিভিন্ন টেকনিক্যাল বা প্রফেশনাল সার্ভিসের কর্মকর্তাদের কোটা-ব্যবস্থার মাধ্যমে সিভিল প্রশাসনে অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা নেই। তদুপরি, সিভিল প্রশাসনের স্বাতন্ত্র্যকে উপেক্ষা করে, বিভিন্ন সার্ভিসের কাজের ধরন, বৈশিষ্ট্য, ইত্যাদির পার্থক্য বিবেচনায় না নিয়ে সব জেনারেল বা টেকনিক্যাল বা প্রফেশনাল সার্ভিসকে একত্রে ক্যাডারভুক্তকরণ ব্যবস্থাও আধুনিক প্রশাসনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং নজিরবিহীন। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে নানাবিধ জটিলতা ও আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্বের বীজ রোপিত হয়েছে, যার নিরসন একান্ত প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪
জিসিজি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।