ঢাকা: জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনকে ঘরে ফিরে যাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রখ্যাত কীটতত্ত্ববিদ মনজুর আহমেদ চৌধুরী।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইস্কাটনে বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে জনপ্রশাসন সংস্কারকে ভিন্নপথে পরিচালিত করে দেশকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভায় উপসচিব থেকে তদূর্ধ্ব পদে প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া বাকি ২৫ ক্যাডারদের ৫০ শতাংশ কোটা ইস্যুতে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান মনজুর এ চৌধুরী বলেন, কোটা প্রথার জন্য এতো আন্দোলন হলো, এতোগুলো জীবন চলে গেল। সেই কোটা প্রথা রয়ে গেল। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি কোটা প্রথা থাকা উচিৎ না। প্রশাসনের ভেতরে দ্বন্দ্ব যাতে না থাকে সেই উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি বলেন, সংস্কার কমিশন প্রশাসনের ভেতরে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রভাব মুক্ত নিয়ে কোনো কথা বলেনি। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনকে ঘরে ফিরে যাওয়া উচিত। নির্বাচন কমিশন হয়ে গেছে। কমিশনগুলোয় শুধু কালক্ষেপণের পায়তারা হচ্ছে।
মনজুর এ চৌধুরী আরও বলেন, প্রশাসনকে কি রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত করতে পেরেছেন? একটা আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ছাত্রকে এতো বড় একটা স্থানে কেন নেওয়া হলো। যদি চাপিয়েই দেওয়া হয় তাহলে মুয়ীদ সাহেব সেটা অস্বীকার করতে পারতো। কিন্তু তিনি সেটা করেনি।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আপনারা অনেকেই জানেন চাঁদপুরের একটি ঘটনা। সেখানে বালুখেকো একটি গ্রুপকে নিয়ন্ত্রণ করতে সেখানের জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং একজন মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা আমাদের এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাদের একজনকে ওএসডি এবং বাকি দুইজনকে পানিশমেন্ট পোস্টিং দিয়েছিলেন৷ এভাবেই রাজনৈতিক নেতারা প্রশাসনের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেই চলছে।
৮৪ ব্যাচের ড. মো. আবু ইউসুফ বলেন, এই সংস্কার কমিশনের উদ্দেশ্য আছে। দেশে এখন ক্রান্তিকাল চলছে। সেজন্য সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু সংস্কার কমিশন প্রয়োজনীয় স্থানে সংস্কারের কোনো উদ্যোগ দেখিনি। তাদের রিপোর্ট এখনও জমা দেওয়া হয়নি। এজন্য আমাদের এখনই সোচ্চার হতে হবে।
বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের এবিএম আব্দুস ছাত্তার বলেন, আগামী ৪ জানুয়ারি মহাসমাবেশ ডাকতে পারি। সেদিন অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হবে। আমরা অনশন ঘোষণাও করতে পারি। এই ষড়যন্ত্র ঠেকাতে দুটি বিষদাঁতের অঙ্কুরিত হয়েছে। এর একজন মুয়ীদ সাহেব। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই মুয়ীদের অপসারণ চাই৷ যদি না হয় কীভাবে করতে হয় সেটা আমরা জানি। আমরা প্রয়োজনে কালো ব্যাজ ধারণ করতে পারি, কলম বিরতি, ৪ জানুয়ারি মহাসমাবেশ করবো। মোট কথা আমরা বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস গঠন ও মুয়ীদের অপসারণ চাই।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর ইস্কাটনে বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে এ সভা শুরু হয়। বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড এবং বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বাসা) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করছেন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ্। উপস্থিত আছেন বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি এ বি এম আব্দুস সাত্তার ও বাসা মহাসচিব মাহবুবুর রহমান।
সম্মানিত আলোচক হিসেবে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর নিয়াজ আহমেদ গান, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. এ. বি. এম. ওবায়দুল ইসলাম, বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, ডিইউজের প্রেসিডেন্ট শহীদুল ইসলাম, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ এবং দৈনিক যুগান্তর উপ সম্পাদক বি এম জাহাঙ্গীর।
আলোচক হিসেবে আরও রয়েছেন, বিসিএস ১৯৭৩ ব্যাচের মাহমুদ হোসেন আলমগীর, ১৯৭৯ ব্যাচের উপদেষ্টা, বিয়াম ফাউন্ডেশন পরিচালনা পর্ষদের উপদেষ্টা এস এম জহরুল ইসলাম, ১৯৮১ ব্যাচ হেলালুজ্জামান, ১৯৮২ ব্যাচের ও বিসিএস (প্রশাসন) কলাপ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড সভাপতি এ. বি. এম. আবদুস সাত্তার, ১৯৮২ ব্যাচের ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সভাপতি বিজন কান্তি সরকার, ১৯৮৩ ব্যাচের ও প্রত্যাশা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মোঃ আব্দুল বারী, ১৯৮৪ ব্যাচের ও অফিসার্স ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ এম এ খালেক, ১৯৮৪ ব্যাচের ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া, ১৯৮৪ ব্যাচ শেখ আলাউদ্দিন, ১৯৮৫ ব্যাচের ও বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সম্পাদক মোহাম্মদ মসিউর রহমান, ১৯৮৫ ব্যাচের ও বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড সদস্য মোঃ তৌহিদুর রহমান, ১৯৮৫ ব্যাচের ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, ১৯৮৬ ব্যাচের মোঃ জাকির হোসেন কামাল, ১৯৮৬ ব্যাচের মঞ্জুর মোর্শেদ,১৯৮৬ ব্যাচের শামীম আল মামুন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী জানান, উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ৫০ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করবেন তারা। বর্তমান বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪
জিসিজি/এমজে