ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বাড়ি থেকে যাওয়ার ১০ দিনের মাথায় ফিরলেন লাশ হয়ে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
বাড়ি থেকে যাওয়ার ১০ দিনের মাথায় ফিরলেন লাশ হয়ে নিহতদের পরিবারে চলছে আহাজারি। ইনসেটে বাঁ থেকে সালাউদ্দিন মোল্যা ও আমিনুল মুন্সি

নড়াইল: চাঁদপুরের হাইমচরের ঈশানবালা খালের মুখ এলাকায় মেঘনা নদীর একটি ডুবোচরে নোঙর করা এম ভি আল–বাখেরা জাহাজে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হওয়া সাতজনের মধ্যে দুজনের বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়ায়।  

এদের একজন দক্ষিণ লোহাগড়া উপজেলার এগারোনলী গ্রামের সালাউদ্দিন মোল্যা।

তিনি ওই জাহাজের ইঞ্জিনচালক ছিলেন। আর অন্যজন একই উপজেলার উত্তর লোহাগড়ার পাংখারচর গ্রামের মজিবর মুন্সির ছেলে আমিনুল মুন্সি। তিনি ওই জাহাজের সুকানি হিসেবে কাজ করতেন।

জাহাজচালক সালাউদ্দিন এগারনলী গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে। ৪২ বছর বয়সের সালাউদ্দিন ২৪ বছর ধরে জাহাজে কাজ করতেন। এর মধ্যে আল-বাখেরা জাহাজটিতে কাজ করছেন চার বছর।

বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বৃদ্ধা মা ফাতেমা বেগম অঝোরে কাঁদছেন। কাঁদতে কাঁদতে আর বিলাপ করতে করতে তার গলা ভেঙে গেছে। বৃদ্ধার একমাত্র ছেলে ছিলেন সালাউদ্দিন। তার দুই মেয়ে এক ছেলে। ছেলের বয়স ১৮ বছর। পুরো পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সালাউদ্দিনকে হারিয়ে দিশেহারা স্ত্রী নার্গিস বেগম।

সালাউদ্দিনের ১৮ বছর বয়সী ছেলে সজীব মোল্যা বাংলানিউজকে জানান, আমার বাবার উপার্জনেই আমাদের ছয়জনের সংসার চলে। এখন কীভাবে চলবে আমাদের সংসার আমরা বুঝতে পারছি না।

সালাউদ্দিনের স্ত্রী নার্গিস বাংলানিউজকে বলেন, গত রোববার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে আমি আমার স্বামীর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছি। এরপর রাতে আবারও আমাকে কল দিলেও আমি ধরতে পারিনি। পরে সকালে ঘুম থেকে উঠে বাজারে গেলে খুনের বিষয়টি জানতে পারি। আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।  

গত ১৪ ডিসেম্বর ছুটি থেকে ফিরে কাজে যোগ দিয়েছেন সালাউদ্দিন। ১০ দিনের মাথায় লাশ হয়ে আবার বাড়িতে ফিরলেন। মঙ্গলবার রাতে সালাউদ্দিন ও আমিনুলের মরদেহ এলাকায় পৌঁছাবে বলে স্বজনরা জানান।

অন্যদিকে, পাংখারচর গ্রামে আমিনুলের পরিবারে চলছে একই অবস্থা। দুই বছরের হাসাইন মুন্সি আর সাড়ে চার বছরের হুসাইন মুন্সি ছোট্ট দুটি শিশু নিয়ে অঝোরে কাঁদছেন আমিনুলের মা জামেলা বেগম। স্ত্রী পপি আক্তার একেবারে বিমূর্ষ অবস্থায় কাঁদছেন আবার মূর্ছা যাচ্ছেন। ২৩ বছর ধরে জাহাজে কাজ করছেন আমিনুল। এর মধ্যে আল-বাখেরা জাহাজে সাত বছর। গত শুক্রবার বাড়ি থেকে কাজে যোগ দিয়ে ১০ দিনের মাথায় সেও এসেছেন লাশ হয়ে।

আমিনুলের মা জামেলা বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আল্লাহ আমাদের এ কোন পরিস্থিতির মধ্যে ফেললেন। ’ 

নিহত আমিনুলের বড় ভাই হুমাইন রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাটি আমরা ডাকাতি শুনলেও খুনের দৃশ্য টিভিতে দেখে মনে হচ্ছে, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারণ প্রত্যেকটি লাশের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। কাউকে আবার গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্রও জাহাজে রয়েছে। ডাকাতি হলেতো সবকিছু নিয়ে যাওয়ার কথা। আমরা এঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।  

মরদেহ আসার অপেক্ষায় পরিবার ও এলাকাবাসী। জাহাজের বকেয়া পাওনা, বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে এলাকার সচেতন মানুষজন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।