বগুড়া: বগুড়ায় এক মাসে কারাগারে আটক চারজন আওয়ামী লীগ নেতা অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। মারা যাওয়া নেতাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ তোলায় এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বগুড়া জেলার ১২টি থানায় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে অসংখ্য মামলা হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে অধিকাংশ নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে যান। এর মধ্যে গত তিন মাসে গ্রেপ্তার হন অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী। গত ১২ নভেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত কারাবন্দিদের মধ্যে চারজন আওয়ামী লীগ নেতা অসুস্থ হয়ে মারা যান।
মারা যাওয়া নেতারা হলেন- বগুড়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম রতন, শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদত আলম ঝুনু ও গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য আব্দুল মতিন মিঠু।
মারা যাওয়া নেতাদের পরিবারের অভিযোগ, কারাগারে চিকিৎসাজনিত অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে। কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়নি।
কারাগারে মারা যাওয়া বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদত আলম ঝুনুর ছোট ভাই তামজিদ আলম দিপু বলেন, আমার ভাই মারা যাওয়ার দুদিন আগেও দেখা করেছি। তখনও তিনি কোনো অসুস্থতার কথা বলেননি। তার কখনও হৃদরোগ ছিল না। কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে অনেক দেরিতে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এছাড়া কারাগারে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম তুহিন।
বগুড়া জেলা কারাগারের জেল সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, যারা মারা গেছেন তারা বয়স্ক এবং তারা কারাগারে আসার আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। কারাগারে তাদের প্রতি বিন্দুমাত্র অবহেলা হয়নি। কারাগারের পরিবেশ আগের তুলনায় অনেক ভালো।
বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, আমাদের কাছে সব রোগী সমান। আমরা সাধ্যমতো রোগীদের সেবা দিয়ে থাকি। কারাগার থেকে যেসব রোগী আসেন তাদের বেশির ভাগ কার্ডিওলজি বিভাগের সিসিইউতে ভর্তি হয়। তারপরও যদি কারো উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠাতে হয় আমরা সেই ব্যবস্থাও করে থাকি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, কারাগারে চারজনের মৃত্যুর কারণ সঠিক জানি না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে কারণ জানা যাবে। তবে এক মাসে কারাবন্দি চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যদি কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে আসামিদের মৃত্যু হয় অবশ্যই তাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪
আরবি