ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নরসিংদীতে জীবিত আসামিকে মৃত দেখিয়ে হত্যা মামলা থেকে খালাস

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২৪
নরসিংদীতে জীবিত আসামিকে মৃত দেখিয়ে হত্যা মামলা থেকে খালাস

নরসিংদী: নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার খালিয়াবাইদ গ্রামের বাসিন্দা শ্যামল। বয়স ২০।

জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে চাচাত ভাইয়ের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর বেড়িয়ে আসে থলের বেড়াল।  

শ্যামলকে একটি হত্যা মামলায় মৃত দেখিয়ে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। চলতি বছরের ২০ মার্চ এ রায় প্রদান করেন নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালত। সম্প্রতি এই বিষয়টি জানাজানির পর আলোচনার সৃষ্টি হয়।

এঘটনায় ঘটনায় হতবাক আইনজীবী, সুশীল সমাজসহ সচেতন মহলের লোকজন।  

অভিযোগে জানা গেছে, ২০০৬ সালের ১৬ মার্চ কমলা বানু নামে এক নারী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। কমলা বানু হত্যার অভিযোগে মনোহরদী থানায় তার ভাই আব্দুল বাতেন বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় মনোহরদী উপজেলার খালিয়াবাইদ গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে শ্যামল ও নিহত কমলা বানুর ছেলে শরীফ মিয়াকে অভিযুক্ত করে পুলিশ চার্জশিট প্রদান করেন। মামলাটি বিচারের জন্য নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে বদলি হয়। বিজ্ঞ আদালত উল্লেখিত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পুলিশ শ্যামল ও শরীফকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে। পরে শ্যামল আদালত থেকে জামিন নিয়ে আর আদালতে হাজির হননি। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে শ্যামলকে মৃত দেখিয়ে সার্টিফিকেট জমা দেয়া হয়।

পরে চলতি বছরের ২০ মার্চ নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। উক্ত রায়ে ১ নম্বর আসামি শরীফ মিয়াকে প্রমাণের অভাবে খালাস দেওয়া হয়। আসামি শ্যামল ‘মৃত্যুবরণ’ করায় তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এ মামলার রায় নিয়ে বিপত্তি ঘটে তখন, যখন অন্য একটি মারামারির মামলায় চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর মনোহরদী থানা পুলিশ শ্যামলকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করে। বিজ্ঞ আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। তখনই নতুন করে আলোচনা শুরু হয় মৃত ব্যক্তি আবার গ্রেপ্তার হয় কিভাবে। অন্য দিকে বিচারের এমন গাফিলতিতে অনেকটা হতবাক হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষসহ সুশীল সমাজের লোকজন।

এব্যাপারে শ্যামলের বাবা লিয়াকত আলী বলেন, আমার ছেলেকে মৃত দেখিয়ে কেন খালাস দেয়া হবে। আমার ছেলে কি মৃত। এটা শত্রুতামি করে করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা এত কিছু জানি না। আমার ছেলের কোনো মৃত্যু-সনদ আমরা কাউকে দেইনি।

নতুন মামলার বাদি মহিউদ্দিন বিদুৎ বলেন, শ্যামল আমার চাচাত ভাই। সে সেপ্টেম্বরের ২ তারিখ তার সন্ত্রাসী নিয়ে আমাদের বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে। আর আমার ভাইকে পিটিয়ে আহত করে। পরে এ ঘটনায় ৩ তারিখ মামলা করলে ২৬ অক্টোবর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এর আগেও সে আমাদের পরিবারের উপর হামলা করে যার কারণে তার বিরুদ্ধে আমাদের পরিবারের দুইটি মামলা চলমান রয়েছে। এই মামলার পর খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তার বিরুদ্ধে শুধু ৩টি মামলা আছে কিন্তু কোনো হত্যা মামলা নাই। পরে আমি আইনজীবীর মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সে নিজেকে মৃত দেখিয়ে একটি হত্যা মামলা থেকে খালাস নিয়েছে। সে আমাদের বাড়ি ঘরে হামলা করছে, মারধর করছে আর কাগজপত্রে সে এখন মৃত। সে খুবই ভয়ংকর অপরাধী। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।  

এই বিষয়ে নতুন মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া বাদী পক্ষের নরসিংদী জজ কোর্টের আইনজীবী মোশাররফ হোসেনের কাছে শ্যামল এর নথিসহ তার মৃত্যু সনদ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, নথিতে অন্যান্য কাগজপত্র রয়েছে, তবে মৃত্যু সনদ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র নেই।  

এব্যাপারে মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: জুয়েল হোসেন বলেন, চলমান একটি মারামারি মামলায় শ্যামলকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ ৩টি মামলা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২৪
এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।