ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সাতক্ষীরায় খাওয়ার পানির সংকট, ভিটে ছাড়ছেন মানুষ 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২৪
সাতক্ষীরায় খাওয়ার পানির সংকট, ভিটে ছাড়ছেন মানুষ 

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় জলাবদ্ধতা ক্রমেই ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। জলাবদ্ধ এলাকায় দেখা দিয়ে চরম খাওয়ার পানি সংকট।

ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত নানা রোগ। ইতোমধ্যে অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।

জানা গেছে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের দামারপোতা, বড়দল, বাগডাঙ্গা, জিয়ালা, গোবিন্দপুর, নাথপাড়া, তালতলা, কাজিরবাশা, বালুইগাছা, ধুলিহর সানাপাড়াসহ জেলার প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম প্রায় দুই মাস যাবত পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ বাধ্য হয়ে গরু ছাগল হাঁস-মুরগি নিয়ে ভিটে ছেড়েছে। হাঁস-মুরগি ও ছাগল মরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে সর্বত্র। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। মলমূত্র পানিতে ভেসে একাকার হয়ে গেছে।

উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকার গভীর নলকূপ পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে খাবার পানির সংকটে ভুগছে এলাকাবাসী।

ধুলিহরের গোবিন্দপুর গ্রামের জরিনা বেগম জানান, একদিন ভাত না খেয়ে বেঁচে থাকা যায়। কিন্তু পানি না খেয়ে থাকা যায় না। এখন কোথাও খাওয়ার পানি নেই। ভেলায় করে তিন থেকে চার কিলোমিটার দূর থেকে পানি আনতে হচ্ছে।

আব্দুল মান্নান নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমাদের এলাকায় খাবার পানির সংকট প্রকট আকারে ধারণ করেছে। সেই সঙ্গে রান্না খাওয়ার পানিও নেই।

ধুলিহরের বালুইগাছা গ্রামের সাংবাদিক সাহাদাত হোসেন বাবু বলেন, গত ৫-৬ বছর ধরে আমরা জলাবদ্ধতায় ভুগছি। তবে এবারের জলাবদ্ধতা ভয়াবহ বন্যায় রূপ নিয়েছে। অনেক মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে খাবার পানির সংকটে ভুগছে এলাকাবাসী।  

বড়দল গ্রামের ইউপি সদস্য এনামুল হক খোকন বলেন, বর্তমানে এলাকায় কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে দাফন করার মতো জায়গা নেই। সব পানিতে প্লাবিত।

দামারপোতা গ্রামের রবিউল ইসলাম জানান, আমার ঘরের ভেতরে পানি, রান্না ঘরে পানি, পায়খানা ঘরেও পানি। অপরিকল্পিত মাছের ঘের আর পাউবোর অপরিকল্পিত স্লুইস গেট এই সর্বনাশ ডেকে এনেছে। বেতনা নদী খননের কাজ শুরু হলেও তিন বছরে তা শেষ হয়নি। এ কারণে বিগত কয়েক বছরের মতো চলতি বছরেও বেতনা নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে বেতনা নদীর তীরবর্তী ২৫-৩০ গ্রামের ফসলি জমি, মৎস্য ঘের ও পুকুর পানিতে ডুবে গেছে।

এদিকে, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দপ্তর জানায়, জলাবদ্ধতায় নাকাল হয়ে পড়েছে বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর মধ্যবর্তী বল্লি, ঝাউডাঙ্গা, লাবসা, ব্রহ্মরাজপুর, ধুলিহর ও ফিংড়ী ইউনিয়নের মানুষ। এছাড়াও সাতক্ষীরা পৌরসভার পূর্বাংশের মানুষ জলাবদ্ধতায় নাকানিচুবানি খাচ্ছে। তালার নগরঘাটা, ধানদিয়া, খলিলনগর, মাগুরা ইউনিয়নেও একই অবস্থা। জলাবদ্ধতা এ অঞ্চলের মানুষের অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী জিএম আমিনুল হক বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার নদী খননের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয় কিন্তু অপরিকল্পিত খননের কারণে তা কোনো কাজে আসেনি। কাজের কাজ কিছুই হয় না। রাস্তাঘাট, মসজিদ, মন্দির, স্কুলকলেজ সব পানিতে ডুবে জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় ধুলিহর গ্রামের গবাদিপশু চাষি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, গোয়াল ঘরে পানি উঠায় গরু ছাগল নিয়ে চরম বিপাকে আছি। একই সঙ্গে গো খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।  

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, জলাবদ্ধতায় সাতক্ষীরা পৌরসভার বিভিন্ন অংশসহ আশপাশের ইউনিয়নে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। মানুষ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। অপরিকল্পিত মৎস্য ঘের ও অপরিকল্পিত নদী খননই এর জন্য দায়ী। রোদে পানি শুকানো ছাড়া জলাবদ্ধতা মানুষের মুক্তি নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।