ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রেললাইনে পাওয়া ছিন্নভিন্ন ৫ মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২৪
রেললাইনে পাওয়া ছিন্নভিন্ন ৫ মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন

নরসিংদী: পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় নরসিংদীর রায়পুরায় রেললাইনে পাওয়া ছিন্নভিন্ন পাঁচ মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছে রেলওয়ে পুলিশ।  

সোমবার (৮ জুলাই) রাত ১২টায় নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে নরসিংদী রেলস্টেশন সংলগ্ন রেলওয়ে কবরস্থানে মরদেহগুলো দাফন করা হয়।

 

এ ঘটনায় ভৈরব রেলওয়ে থানায় অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে।

এর আগে সোমবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথের রায়পুরা উপজেলার কমলপুর এলাকা থেকে ছিন্নভিন্ন পাঁচ মরদেহ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথের রায়পুরা উপজেলার মেথিকান্দার রেলগেইট এলাকায় পলাশতলী ইউনিয়নের কমলপুরে রেললাইনের আশপাশে ছিন্নভিন্ন পাঁচটি মরদেহ দেখে স্থানীয়রা রেলওয়ে পুলিশে খবর দেন। পরে রেলওয়ে পুলিশ, পিবিআই, রায়পুরা ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহগুলো উদ্ধার করেন। নিহত সবাই পুরুষ। তাদের বয়স আনুমানিক ১৫ থেকে ২৫ এর মধ্যে হবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।  

লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে মরদেহের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে জাতীয় সার্ভারে ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলায় তাদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এমনকি রাত পর্যন্ত কোনো স্বজন পরিচয় শনাক্ত করেননি। সবগুলো মরদেহ কাছাকাছি হওয়ায় মৃত্যুর কারণ নিয়ে জনমনে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

এ ঘটনায় রায়পুরা উপজেলার মেথিকান্দা স্টেশনের স্টেশন মাস্টার আশরাফ আলী বাদী হয় ভৈরব রেলওয়ে থানায় অপমৃত্যু মামলা করেছেন।

নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, পিবিআই হাতের ছাপ সংগ্রহ করলেও তদের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের কোনো জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। আমরা মরদেহগুলোর ডিএনএ ও ভিসেরা সংগ্রহ করেছি। এগুলো ঢাকার মালিবাগের সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হবে। ডিএনএ পরিচয় শনাক্তে ও ভিসেরা মাধ্যমে তারা কোনো নেশা করেছিলেন কিনা শনাক্ত করা যাবে। আর মরদেহগুলো ময়নাতদন্ত শেষে রেলওয়ে কবরস্থানে সিরিয়ালি দাফন করা হয়েছে। আর এটি হত্যা না দুর্ঘটনা তা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এলেই বলা যবে। এ ঘটনাটি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রায়পুরা মেথিকান্দা স্টেশন থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে ঘটনাস্থল কমলপুর। এর ঢাকামুখী রেললাইনের এক পাশে জলাশয়ের সঙ্গে খাকচর দক্ষিণ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অপর পাশে নরসিংদী-রায়পুরা আঞ্চলিক সড়ক। এ সড়কে সিএনজি চালিত যানবাহন চলাচল করলেও স্থানীয় লোকজনের তেমন চলাচল নেই। ঘটনাস্থলের পাশে ঝোপঝাড়। দুই পাশে প্রায় আধা কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বাড়িঘর বা দোকানপাটও নাই। ঘটনাস্থলে কোনো সংযোগ সড়ক নেই। এখানে রাস্তা পারাপার হওয়ার সময় কারো ট্রেনে কাটা পরার কথা না। তাই এ মৃত্যু নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়দের কেউ কেউ ধারণা করছেন, নিহত তরুণদের পোশাক দেখে টোকাই শ্রেণির মনে হয়েছে। ট্রেনের ছাদে বা ইঞ্জিনে বসে তারা হয়তো যাচ্ছিলেন। হয়তো দুই বগির মাঝখানে বা ইঞ্জিন থেকে পড়ে গিয়ে তারা ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন। তবে এভাবে একসঙ্গে পাঁচজনের মৃত্যুর বিষয়টি সন্দেহজনক।  

আবার কেউ বলছেন, হত্যার পর তাদের মরদেহ এখানে ফেলে গেছেন দুর্বৃত্তরা।  

মেথিকান্দা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আশরাফ আলী বলেন, সোমবার ভোর ৫টা ২২ মিনিটে উপবন, ৫টা ৪৮ মিনিটে  ঢাকা মেইল ও সাড়ে ৬টায় তিতাস ঢাকার উদ্দেশ্যে মেথিকান্দা স্টেশন পার হয়েছে। এর মধ্যে কোনো ট্রেনে কাটা পড়ে তাদের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তারা ট্রেনের ছাদ থেকে পিছলে পড়ে কাটা পড়েছেন, নাকি রেললাইনে বসে থাকা অবস্থায় কাটা পড়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে নিহত ব্যক্তিরা স্থানীয় কেউ নন বলে জানা গেছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২৪
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।