ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

একদিকে উচ্ছেদ অভিযান, পাশে সব হারানোর আহাজারি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০২৪
একদিকে উচ্ছেদ অভিযান, পাশে সব হারানোর আহাজারি ছবি: বাংলানিউজ

সাতক্ষীরা: একদিকে চলছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উচ্ছেদ অভিযান, অন্যদিকে আশ্রয় হারানো ভূমিহীনদের আর্তনাদ। পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় যাবেন, কোথায় পাবেন মাথাগোঁজার ঠাঁই, তা নিয়ে বিলাপ করতে করতে অনেকেই যাচ্ছেন মূর্ছা।

তাদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ।

সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়ক উন্নয়নের লক্ষ্যে সোমবার (১ জুলাই) সড়ক ও জনপথ বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানের সময় সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা-বাঙালের মোড় এলাকায় এ চিত্র দেখা যায়।

অভিযানকালে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয় সব অবৈধ স্থাপনা। এতে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়েছে ইটাগাছা বস্তির শতাধিক পরিবার। পরনের পোশাকও বের করতে পারেননি অনেকে।

ইটাগাছা বস্তির জবেদা বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, বৃষ্টির দিনে প্রতিবন্ধী মেয়েদের নিয়ে কোথায় যাবো? কোথায় থাকবো? কী হবে আমাদের? ভিক্ষা করে সংসার চালাই। দুই প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে খুপড়ি ঘর বেঁধে বহু বছর ধরে এখানে থাকি। স্বামী ছিল, সেও ছেড়ে চলে গেছে। যে ঘরখানা ছিল তাও কেড়ে নিল। এখন যাব কোথায়?

অভিযানের কারণে জবেদার মতো গৃহহীন হয়ে পড়েছে রোকেয়া, লিলি, জাহারানা, রিক্তাসহ অসংখ্য নারীপ্রধান পরিবার। এদের কেউ স্বামী পরিত্যক্তা, কেউবা বিধবা।  

জানা গেছে, রাস্তার পাশের সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমিতে সন্তানাদি নিয়ে বসবাস করতেন তারা। এক-দুই বছর নয়, এদের কেউ কেউ এই বস্তিতে ঠাঁই নিয়েছেন দুই-তিন যুগ আগে।

জবেদার একটু পাশে ঘর থেকে জিনিসপত্র বের করে নিয়ে মাঠের ধারে নাতনিকে নিয়ে বসে ছিলেন জামের আলী। কান্নাজিড়ত কণ্ঠে তিনি বলেন, পথে বসে গেছি। এই ছোট বাচ্ছা নিয়ে কোথায় যাবো জানি না। যা ছিল সব ভেঙে চুরে দিয়েছে। সব শেষ। আল্লাহই জানে আমাদের কপালে এখন কী আছে।

রেশমা নামে আরেক নারী বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এই জায়গায় থাকি। এখন আমাদের আর মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই।

সোমবার শুরু হওয়া উচ্ছেদ অভিযানে সওজের জায়গায় থাকা গ্যারেজ, কলেজের গেট, বাসাবাড়ি ও দোকানপাট ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ানুর রহমান এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন।

তিনি বলেন, এর আগে কয়েকবার সবাইকে তাদের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে মাইকিং করা হয়। নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু কেউ তাতে কর্ণপাত করেনি। সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগর পর্যন্ত এই অভিযান চলবে এবং খুব দ্রুতই সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ-শ্যামনগর সড়ক উন্নয়নের কাজ শুরু হবে।  

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, সড়ক উন্নয়ন খুবই কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু আশ্রয় হারানো মানুষগুলো যাবে কোথায়? বারবার বলা সত্ত্বেও তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, মানুষগুলোকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২১ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২৪
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।