ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সিরাজগঞ্জে গত ৫ মাসে ৮২ গরু চুরি

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৩ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৪
সিরাজগঞ্জে গত ৫ মাসে ৮২ গরু চুরি

সিরাজগঞ্জ: জেলায় আশংকাজনক হারে বেড়েছে গরু চুরির ঘটনা। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন ভুক্তভোগী কৃষক।

চলতি বছরের পাঁচ মাসেই জেলায় ১৯টি গরু চুরির ঘটনায় ৭৬টি গরু ও চারটি মহিষ চুরি হয়েছে। সর্বোচ্চ ৪০টি গরু ও মহিষ চুরি হয়েছে তাড়াশ উপজেলায়।  

এদিকে পুলিশি তদন্তে চুরির ঘটনায় জড়িত একাধিক আন্তঃজেলা গরুচোর চক্রের নাম বেরিয়ে এসেছে। ইতিমধ্যে চক্রের বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। এদের অনেকের নামে ১০ থেকে ২৫টি করে গরু চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে।  

সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত অন্তত ১৯টি গরুচুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ গরু চুরি হয়েছে চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলায়। তাড়াশ থানার তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ মাসে ছয়টি ঘটনায় ৩৬টি গরু ও একটি ঘটনায় চারটি মহিষ চুরি হয়েছে। প্রত্যেকটি ঘটনায় মামলাও হয়েছে। এসব মামলায় ইতিমধ্যে ১৫ জন গ্রেপ্তার হলেও এখন পর্যন্ত চুরি যাওয়া গরু বা মহিষ উদ্ধার হয়নি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সলঙ্গা থানায় পাঁচটি ঘটনায় ১৮টি গরু চুরি হয়েছে। এছাড়াও কামারখন্দ থানায় তিন ঘটনায় ১৫ গরু চুরি হয়। এর মধ্যে পাঁচটি গরু উদ্ধার ও পাবনা বেড়া থেকে একটি পিকআপভ্যানসহ তিন চোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  

অপরদিকে সদর থানায় একটি ঘটনায় পাঁচটি গরু চুরি হয়। উল্লাপাড়া, কাজিপুর, চৌহালী ও এনায়েতপুর থানা এলাকায় একটি করে গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে কাজিপুর, উল্লাপাড়া ও চৌহালী থানা পুলিশ চুরি যাওয়া গরু উদ্ধারসহ চোরকে গ্রেপ্তার করেছে।  

এদিকে গরু চুরি ঠেকাতে তাড়াশ ও কামারখন্দে রাত জেগে এলাকা পাহারার ব্যবস্থা করেছে স্থানীয়রা। এসব অঞ্চলে পালাক্রমে কৃষকেরা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন।  

সদর উপজেলার চন্ডিদাসগাঁতী গ্রামের কৃষক বেল্লাল হোসেন জানান, গত মে মাসের প্রথমদিকে তার গোয়াল ঘরের তালা কেটে দুইটি ষাঁড় ও তিনটি গাভি চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা। এতে প্রায় নয় লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তিনি।  

তাড়াশের লালুয়া মাঝিড়া এলাকার কৃষক হায়দার আলী বলেন, গত ১৯ এপ্রিল রাতে তার গোয়াল ঘরের তালা ভেঙে ছয় লাখ টাকা মূল্যেল চারটি গরু চুরি করে। একই রাতে তাড়াশ পৌর শহরের থানা পাড়ার মোনায়েম হোসেনেরও গোয়াল থেকেও দুটি গরু নিয়ে যায় চোর চক্রটি। এপ্রিল মাসের শুরুতেই তাড়াশের মথুরাপুর গ্রামে তমিজ উদ্দিনের গোয়াল থেকে পাঁচ গরু চুরি হয়। ওইদিন রাতেই কালিদাসনীলি গ্রামের মজনু মিয়ার ছয় গরু চুরি করে।  

নওগাঁ ইউনিয়নের কালিদাসনীলি গ্রামের আজাদ বলেন, গত ২০ জানুয়ারি তার গোয়াল ঘরের তালা ভেঙে পাঁচটি ষাঁড় চুরি করে। ১৪ জানুয়ারি তালম ইউনিয়নের বড়ইচড়া ভেংরী গ্রামের আলতাফ হোসেনের গোয়ালঘরের ইটের গাঁথুনি ভেঙে পাঁচটি গরু চুরি হয়। ৯ জানুয়ারি একই ইউনিয়নের রোকনপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের গোয়াল থেকে সাতটি গরু চুরির ঘটনা ঘটে।  

কামারখন্দের রায়দৌলতপুর ইউনিয়নের কাজিপুরা গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলামের গোয়াল থেকে সাতটি গরু চুরি হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।  

সলঙ্গা থানার নলকা ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামের কৃষক আল-মাহমুদ বলেন, গত ২৭ মে তার গোয়াল থেকে পাঁচটি গরু চুরি হয়েছে। প্রায় ১০ লাখ টাকা মূল্যের এসব হারিয়ে তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন বলে জানান।

সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক বলেন, সলঙ্গা থানায় চারটি ঘটনায় ১৮টি গরু চুরি হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। গত ৩১ মে আমরা রোকন নামে পাবনা জেলার ফরিদপুরের কুখ্যাত গরুচোরকে গ্রেপ্তার করেছি। তার নামে অস্ত্র, ডাকাতি ও চুরির মামলা রয়েছে ২৫টি।  

তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম জানান, গত পাঁচ মাসে ছয়টি ঘটনায় ৩৬টি গরু চুরি ও একটি ঘটনায় চারটি মহিষ চুরি হয়েছে। সব মিলিয়ে মামলা হয়েছে সাতটি। দুটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে এজাহার নামীয় চার আসামি। এছাড়াও পূর্বে চুরির রেকর্ড ছিল এমন পাঁচজন এবং ট্রাকসহ গরুচোর চক্রের আরও পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  

সম্প্রতি থানা পুলিশ ও ডিবির যৌথ অভিযানে জিয়াউর রহমান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিয়াউর রহমান চুরির আগে রেকি করতো। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কয়েকজনের নাম পেয়েছি। এরা আন্তঃজেলা চোরচক্রের সক্রিয় সদস্য। তাদের প্রত্যেকের নামে ১০টারও বেশি চুরি-ডাকাতির মামলা রয়েছে।  

তিনি আরও জানান, চুরি করা গরুগুলো তারা একজন আরেকজনের বাড়িতে রেখে আসে। ষাঁড় ও মহিষ জবাই করে। গাভিগুলোকে বাইরে পাঠিয়ে দেয়। ফলে গরুগুলো উদ্ধার করা যাচ্ছে না।  

সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, আমরা মামলাগুলোর তদন্ত করছি। ইতিমধ্যে অনেক চোরকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তাদের নামে একাধিক চুরির মামলা রয়েছে। এসব চুরির ঘটনার সঙ্গে আন্তঃজেলা চোরচক্রের সক্রিয় সদস্যরা জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই ভালো ফলাফল আসবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯০২ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।