ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিজুতে সুস্বাদু খাবারের নাম ‘পাজন’, আছে ঔষধি গুণ

মঈন উদ্দীন বাপ্পী,  ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৪
বিজুতে সুস্বাদু খাবারের নাম ‘পাজন’, আছে ঔষধি গুণ

রাঙামাটি: পাহাড়ের বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু উৎসবে ঘরে আগত অতিথিদের ভোজন শুরু হয় পাজন দিয়ে। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে কথিত আছে, এ পাজন তৈরি করতে প্রায় ১০৭ প্রকার পাহাড়ি সবজি লাগে।

তবে সময়ের বিবর্তনে অনেক সবজি বাজারে পাওয়া না যাওয়ায় বর্তমানে ৩০-৪০ প্রকার সবজি দিয়ে সুস্বাদু খাবার ‘পাজন’ রান্না করা করা হয়।

প্রচলন আছে, কারো বাড়িতে গেলে বাধ্যতামূলক খেতে হবে ‘পাজন’। কেবল একটি বাড়ি নয়, গুণে গুণে খেতে হবে দশটি বাড়িতে। না খেলে পরের জন্ম মানবকুলে নাও হতে পারে এটাই তাদের বিশ্বাস।

পাজন রান্নার ইতিহাস কয়েকশো বছরের পুরনো। পাহাড়ের অন্যান্য সম্প্রদায় খাবারটিকে ভিন্ন ভিন্ন নামে অভিহিত করলেও চাকমা জনগোষ্ঠীর দেওয়া ‘পাজন’ শব্দটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে বেশি। পাহাড়ি সম্প্রদায় বিজুর দিনে এ খাবারটি রান্না করবেই।  

অনেকের মতে, পাজন শব্দটি এসেছে বাংলা শব্দ ‘পাঁচন’ থেকে। শব্দগত মিল থাকলেও বাঙালির পাঁচনের সঙ্গে পাজনের পার্থক্য রয়েছে রন্ধনপদ্ধতি ও স্বাদে। পাজনে শুঁটকিসহ বিভিন্ন ধরনের শুকনো মাছও ব্যবহার করা হয়। তাই পাজনের স্বাদ একেবারেই আলাদা।  

পাজন রান্নায় বাজারে পাওয়া যায় এমন সবজি ছাড়াও স্বাদ বাড়ায় নানা ধরনের বুনো সবজি, আলু, কন্দ ও ফুল। সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৪০ প্রকার বা তারও বেশি সবজি দিয়ে পাজন রান্না করা হয়। হরেক রকমের সবজি মিশ্রণ করার কারণে খাবারটিতে রয়েছে ঔষধিগুণ।

শহরের গর্জনতলী এলাকার বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী শিখা ত্রিপুরা বলেন, ১০৭ প্রকার সবজি দিয়ে পাজন রান্না করা হয়। আজকের এ দিনে ত্রিপুরা সম্প্রদায় পাজন দিয়ে আপ্যায়ন করে। তিনি আরও বলেন, ত্রিপুরা সম্প্রদায় পাজনে কোনো শুঁটকি মেশাবে না। এইদিনে সম্প্রদায়ের সবাই নিরামিষ ভোজন করবে।

একই এলাকার বাসিন্দা স্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বিদ্যুৎ শংকর ত্রিপুরা বলেন, পাজন শুধু খাবার নয় এটি পিউর হারবাল ঔষধ। পাজন খেলে সব প্রকার রোগমুক্তি হওয়া যায়।

শ্রেয়া ত্রিপুরা বলেন, চাকমা জনগোষ্ঠী পাজন বললেও আমরা এই খাবারটিকে ময়দাল ঝাঁক বলে থাকি। আজকের এ দিনে আমরা স্বজন এবং বন্ধুদের বাড়িতে বাড়িতে বেড়াবো এবং ‘ময়দাল ঝাঁক’ ভোজন করবো।

পাহাড়িরা বিশ্বাস করে, বাড়ি বাড়ি ঘুরে পাজন খেলে শারীরিকভাবে সুস্থ ও রোগ ব্যাধিমুক্ত হয়। তাই এটি পাহাড়িদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। পাজন কেবল সুস্বাদু সবজির ঘণ্ট নয়, এটি চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিসত্তার উৎসব পালনের অন্যতম অনুষঙ্গ। তবে পাজনের পাশাপাশি অতিথিদের বিভিন্ন ধরনের পিঠা-পুলি, ফল-মূল দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।