ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সীমান্তে হাতি আতঙ্কে মশাল নিয়ে রাত পাহারায় গ্রামবাসী!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪
সীমান্তে হাতি আতঙ্কে মশাল নিয়ে রাত পাহারায় গ্রামবাসী!

পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে ভারতীয় বন্য হাতির তাণ্ডবে নুরুজ্জামান (২৩) নামে এক বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যুর পর আবারও উপজেলার সীমান্তের তিন গ্রামে হাতির আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এদিকে হাতি তাড়াতে রাতে সীমান্ত এলাকায় মশাল প্রজ্বলন করে অবস্থান নিয়েছে গ্রামবাসীরা।

আতঙ্কের ঘটনাটি ঘটেছে জেলার তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের তেলিপাড়া, সিদ্দিকনগর, খুনিয়াভিটা গ্রামের। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বন্য হাতি দুটি তেঁতুলিয়ার তেলিপাড়া গ্রামের সীমান্ত থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরে ভারতের হাফতিয়াগছ বিএসএফ ক্যাম্প সংলগ্ন ভারতীয় ফরেস্টের জিরো সীমানায় অবস্থান করছে।  

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গ্রামবাসীরা আগুন ও মশাল নিয়ে অবস্থান করছে। সঙ্গে জানমালের নিরাপত্তায় গ্রাম পুলিশ ও সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের পাশাপাশি ভারতের অভ্যন্তরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও ভারতীয় বন বিভাগকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।  

এর আগে এদিন সকাল থেকে উপজেলা সদরের তেলিপাড়া, সিদ্দিকনগর, খুনিয়াভিটাসহ গ্রামগুলোতে ভারতীয় বন্য হাতি আসার খবর নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে সচেতন ও হাতিকে বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক প্রচারণা করা হয়েছে।  

জানা গেছে, হাতির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে সকালে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের তেলিপাড়া ও ভারতের হাফতিয়াগছ ফরেস্টের জিরো সীমানায় উপস্থিত হয়ে ভারতীয় বন দপ্তরের প্রতিনিধির সঙ্গে জরুরি সাক্ষাৎ করেন এবং হাতি দুটিকে ট্রাংকুলাইজার ব্যবহার করে হাতিগুলোকে দ্রুত উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।

স্থানীয় গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দু-দিন আগে বাংলাবান্ধায় হাতি দুটি তাণ্ডব চালিয়ে একজনকে মেরে ফেলেছে। এবার আমাদের এলাকার পাশে সীমান্তের ভারতীয় অভ্যন্তরে একটি জঙ্গলে হাতি দুটি অবস্থান করছে। না জানি কখন বাংলাদেশে প্রবেশ করে আমাদের ওপর হামলা করে। তাই আমরা সবাই আতঙ্কে রয়েছে। হাতি দুটি ভারতীয় ফরেস্ট জঙ্গলে অবস্থান করছে। এদিকে জঙ্গল থেকে বের হলে আমাদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি করতে পারে। তাই আমরা আগুন নিয়ে অবস্থান করছি। কারণ হাতি দুটি আমাদের গ্রামের দিকে এলে আগুন দেখে পালিয়ে যাবে। তাই রাত পাহারায় রয়েছি গ্রামের সবাই।

এ বিষয়ে ইউএনও ফজলে রাব্বি বাংলানিউজকে বলেন, দু-দিন পর আবারও বাংলাদেশে প্রবেশের আশঙ্কা থাকায় আমরা ভারতের বন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে আলোচনা করেছি। হাতি দুটি যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে। বন্য হাতিকে দেখে কেউ যেন বিরক্ত না করে এবং মানুষকে নিরাপদে থাকতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক প্রচারণা করা হচ্ছে। আশা করছি ভারতীয় বন বিভাগ তাদের কৌশল অবলম্বন করে হাতি দুটিকে উদ্ধার করে দ্রুত নিয়ে যাবে।

এর আগে গত মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের রওশনপুর বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমান্ত পিলার ৭৩৫/২ এস এর মধ্যবর্তী ইসলামবাগ এলাকা দিয়ে দুটি ভারতীয় বন্য হাতি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পরে হাতি দুটি তিরনইহাট এলাকা হয়ে গোয়ালগছ বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্তে কাশিমগঞ্জ এলাকায় এসে অবস্থান নিয়ে তাণ্ডব চালিয়ে কিছু বাড়ি ঘরে হামলা করে এবং সন্ধ্যায় হাতির তাণ্ডবে নুরুজ্জামান (২৩) নামে এক বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু হয়। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় বিকেলে কাশিমগঞ্জ সীমান্ত এলাকার ৭৩০ পিলারে বাংলাদেশ ও ভারতীয় বনবিভাগের প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধনের জন্য পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পতাকা বৈঠকে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা হাতি দুটি ভারতে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশি বনবিভাগের সদস্যদের সঙ্গে ভারতীয় বনবিভাগ বিভাগের সদস্যদের প্রয়োজনীয় আলোচনা হয়। পরে রাতে গোয়ালগছ ক্যাম্পের বিপরীতে ৭৩০ এর নিকটবর্তী বিএসএফ ব্যাটালিয়নের ফাঁসিদেওয়া ক্যাম্প এলাকা দিয়ে নদী পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করে হাতি দুটি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।