ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কাররের বিষয়ে যা বললেন জোনাক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২৩
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কাররের বিষয়ে যা বললেন জোনাক শাহ জালাল জোনাক

ঢাকা: পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুরের কৃতী শিক্ষার্থী শাহ জালাল জোনাক। বাংলাদেশের প্রথম মহাকাশচারী হতে নিজেকে প্রস্তুত করছেন তিনি।

২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সরকারি স্কলারশিপে উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যান রাশিয়ায়। ভর্তি হন রাশিয়ার বাউমান মস্কো স্টেট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ‘রকেট কমপ্লেক্স অ্যান্ড স্পেস সায়েন্স’ বিষয়ে পড়াশোনা করছেন জোনাক।

তবে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জোনাককে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে একটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করা হয়।

ওই প্রতিবেদনে তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে বলা হয়েছে, জোনাকের বিশ্ববিদ্যালয় বাউমান মস্কো স্টেট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, রাশিয়া থেকে জানা যায়: প্রস্তুতিমূলক কোর্সগুলো পাশ করলেও আন্ডার গ্রাজুয়েশন লেভেলে রকেট কমপ্লেক্স অ্যান্ড স্পেস সায়েন্স প্রথম বর্ষে ১১টি আলাদা আলাদা বিষয়ের কোনটিতেই পাশ করতে পারেননি তিনি। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় তার ছাত্রত্ব বাতিল করেছে। আরও নিশ্চিত হতে বাউমান মস্কো স্টেট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি’র কয়েকজন শিক্ষার্থী-যারা  বাংলাদেশ থেকে স্কলারশিপ নিয়ে সেখানে পড়াশোনা করছেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারাও একই রকম তথ্য জানান।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সবশেষ বাউমান মস্কো স্টেট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ই-মেইল যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হয় শাহ জালাল জোনাকের পড়াশোনা এবং ছাত্রত্ব বাতিলের সত্যতা প্রসঙ্গে। ১৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডমিশন অফিসে বরাবর ই-মেইলটি পাঠানো হয়। মেইলের জবাব আসে ২১ জুন। ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্টিফিক অ্যাডুকেশনাল কোঅপারেশন ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সেবা বিভাগের ডেপুটি হেড ইয়াকোলেভ কনস্ট্যান্টিন মেইলের জবাব দেন। সেখানে ইয়াকোলেভ জানান- জোনাক ২০১৮ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রাশিয়া সরকারের স্কলারশিপে রকেট কমপ্লেক্স অ্যান্ড স্পেস সায়েন্স বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পান। মোট পাঁচ বছরের প্রোগ্রামের প্রথম বছর প্রস্তুতিমূলক কোর্স হিসেবে ধরা হয়, যা ২০১৯ সালে জোনাক সফলভাবে সম্পন্ন করেন। পরবর্তী চার বছর মূল আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেলে তিনি প্রথম ও দ্বিতীয় সেমিস্টারের কোন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি, ১১টি বিষয়ের মধ্যে সবকটিতে অকৃতকার্য হন। এমন পরিস্থিতিতে তৃতীয় দফায় জোনাককে একাডেমিক সুযোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় যেন তিনি পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারেন। জোনাক ক্লাসে উপস্থিত থাকতেন না। কোনো ব্যবহারিক কাজ করতেন না। মূল পড়াশোনার বাইরে পার্সোনাল কাজ ও এক্সট্রা কারিকুলারে বেমি মনেযোগী ছিলেন। আমরা অবশ্যই এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজকে স্বাগত জানাই। কিন্তু তা অবশ্যই মূল পড়াশোনার ক্ষতি না করে। প্রথম ও দ্বিতীয় সেমিস্টারে কৃতকার্য হতে না পারায় এবং পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ পাওয়ার পরও কোনো কোর্স সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে।

ওই প্রতিবেদনে জোনাক জানিয়েছেন, তিনি তৃতীয় বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে চলতি বছর এপ্রিলে বাংলাদেশে আসেন। চতুর্থ বর্ষের সপ্তম সেমিস্টারের ক্লাস শুরু করতে আগস্ট বা সেপ্টেম্বরে রাশিয়া যাবেন। তিনি ২০২৪ সালে গ্র্যাজুয়েট হবেন! আর রকেট সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা জিও পলিটিক্সের বড় একটা অংশ। এক্ষেত্রে সিকিউরিটি মেইন্টেইন করার জন্য তারা (বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ) এমন রিপ্লাই করে।

এদিকে প্রতিবেদন প্রকাশের পর নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন শাহ জালাল জোনাক। তিনি সেখানে বলেন, গণমাধ্যমে আমাকে নিয়ে যে সংবাদটি প্রচার হয়েছে, তা নিয়ে আমি আগে থেকেই অবগত ছিলাম। আমার সাথে যোগাযোগ করা হয়, আমি আমার অবস্থান সম্পর্কে তাঁদেরকে সব তথ্য জানাই। তাঁদের প্রশ্ন এবং যোগাযোগের ধরণ আমার মধ্যে সন্দেহ তৈরি করার ফলে আমি বিষয়টি এড়িয়ে যাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ইমেইলটি তাঁরা আমাকে দেখিয়েছে, আমি খুবই অবাক হয়েছি যে এতো আনপ্রোফেশনালি পুরো ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইমেইল দেওয়া হয়েছে। এটা যারা দেখবে তাঁদের আর বুঝার বাকি থাকবে না যে এটা লেখানো হয়েছে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এভাবে ইমেইল করতে পারে না।

জোনাক বলেন, এই ইমেইল লেখানোর সাথে যেই বাঙালি যুক্ত তার ইমেইল এড্রেসও সেখানে সিসিতে দেওয়া ছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার খবরের সাথের স্ক্রিনশটে তারা সেটা মুছে দিয়ে প্রকাশ করেছে। তার মানে তারা এটি গোপন করতে চেয়েছে। কিন্তু সেই ব্যক্তি কেন আমার বিপক্ষে লেগেছে, তা নিচে উল্লেখ করবো। যেই বাঙালি ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসব ইমেইল পাঠানোর কাজ করেছে, তিনি রাশিয়ায় বেশ কিছু অনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। তিনি বিভিন্ন সময় আমাকে তার সাথে এসব কাজের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য বললে আমি কৌশলে এড়িয়ে আসি। উনি প্রচুর অর্থের প্রলোভন দেখালেও আমি সেগুলো না করাতে, উনি ব্যক্তিগতভাবে আমার উপর ক্ষিপ্ত হন। পরবর্তিতে উনি আতঙ্কে থাকেন যদি আমি তাঁর সবকিছু প্রকাশ করে দেই। এই মুহূর্তে আমি যেই পরিস্থিতির শিকার, তা পুরোপুরিই তার ক্ষোভ এবং অর্থের প্রভাবের কারণে। শুধু তাই নয়, আজকের মতো পরিস্থিতি আবারো এই ব্যক্তি তৈরি করেছিলেন যখন আমি করোনাকালীন সময় বাংলাদেশে ছিলাম। তখনও বলা হচ্ছিল আমাকে রাশিয়া থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে আমি শুধু রাশিয়াই যাই নি বরং রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা আমাকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র বিদেশি ছাত্র হিসেবে রকেট লঞ্চিং-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়ে যায়। আমার লেখা বই বাংলা ভাষার প্রথম বই হিসেবে তাঁরা মহাকাশেও পাঠায়। এছাড়া সেই একই ব্যক্তি বাংলাদেশে আমার ভাবমূর্তি বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মাঝে আমার জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে রাশিয়াতে স্টুডেন্ট ভর্তি করার ব্যবসা করতে চান। সেটিও আমি কৌশলে এড়িয়ে যাই। কারণ আমি শিক্ষার্থীদের সাথে অর্থের কোনো কার্যক্রমে যুক্ত হতে চাইনি।

জোনাক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, আমি যেহেতু এই মুহূর্তে ছুটিতে বাংলাদেশে এসেছি, ইউনিভার্সিটি সামার ভ্যাকেশনের জন্য বন্ধ, আমার কাছে আমার সব কাগজপত্র নেই। তবে যা আমি সব সময় নিজের সাথে রাখি, সেগুলো আপাতত প্রমাণস্বরূপ দিতে পারি, যেমন- বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি, ডর্মের আইডি ইত্যাদি। এছাড়া আমি বাংলাদেশে এসেছি ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল, ফেব্রুয়ারি মাসে আমার ছাত্রত্ব বাতিল হলে, সঙ্গে সঙ্গে আমার ভিসা ও রেজিস্ট্রেশনও বাতিল হয়ে যেত এবং ডর্মেও আমি থাকতে পারতাম না। আমার সকল প্রকার আইডি কার্ড তাঁদের কাছে জমা দিয়ে বাংলাদেশে আসতে হতো। ভিসা এবং রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে গেলে ২ মাস পরে আমি কোনোভাবেই দেশে ফিরতে পারতাম না বরং সাথে সাথেই আমাকে দেশে ফিরতে হতো। অন্যথায় আইন ভঙ্গের জন্য ইমিগ্রেশন পুলিশই আটকে রাখতো। বাংলাদেশে আসলে যে সময়টা আমি আমার পরিবার, বন্ধু ও কাছের মানুষদের না দিয়ে, কোনো পরিমাণ অর্থ না নিয়ে বিভিন্ন স্কুলের প্রোগ্রামে যাই, সেটা আমি এখন থেকে পুরোপুরি বন্ধ করে দিলাম। এ বিষয়টি নিয়ে আমি, আমার পরিবার ও আমার কাছের মানুষজন খুব বিব্রত। আমি এখন আমার পুরো সময় আমার কাছের মানুষদের দিতে চাই কারণ খুব শিগগিরই আমাকে রাশিয়ায় যেতে হবে। তাই আমি এটি নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করতে চাই না।

বাংলাদেশ সময়: ০০১৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২৩
এইচএমএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।