ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

যুবলীগ কর্মী খুন, প্রতিপক্ষের ২০ বাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২৩
যুবলীগ কর্মী খুন, প্রতিপক্ষের ২০ বাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

নড়াইল: নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পেড়লী গ্রামে গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তারের জেরে খুন হন ইউনিয়ন যুবলীগ কর্মী আজাদ শেখ (৩০)।

বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) খুলনার যুবলীগের “তারুণ্যের জয়যাত্রা” সমাবেশ শেষে বাড়ি ফেরার পথে সন্ধ্যা ৭টার দিকে পেড়লী মোহসীন মোড় নামক স্থানে প্রতিপক্ষের লোকেরা তাকে হাতুড়ি আর রড দিয়ে পিটিয়ে দিকে মারাত্মক জখম করেন।

পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজে নিলে সেখানে রাত ৯টার দিকে আজাদের মৃত্যু হয়। তিনি পেড়লী গ্রামের কুদ্দুস শেখের ছেলে ও পেড়লী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সাজ্জাদ শেখের বড় ভাই।

এ ঘটনার পরপরই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিজ কর্মীকে দেখতে যান নড়াইল ১ আসনের সংসদ সদস্য বি এম কবীরুল হক মুক্তি। এ হত্যার পেছনে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীরা দায়ী বলে দাবি করেন তিনি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্তারিতও লেখেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পেড়লী ইউনিয়নে দুইটি গ্রুপ সক্রিয় আছে। এর একটি গ্রুপে নেতৃত্ব দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আনিসুল ইসলাম বাবু। শেখ বংশের পুরোটাই এই গ্রুপে যুক্ত আছে। অপর পক্ষে কালিয়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল মোল্যা ও কালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য মৃত সালাম ভূঁইয়ার ছেলে লাভলু ভুঁইয়াসহ তার বংশের লোকেরা যুক্ত।

বিগত ইউপি নির্বাচনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আনিসুল ইসলাম বাবু ও ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক জারজীদ মোল্যা প্রতিদ্বন্দিতা করেন। নির্বাচনে শেখ আনিসুল ইসলাম বাবু পরাজিত হলে স্থানীয় কোন্দল আরও জোরালো হয়। বর্তমান চেয়ারম্যান জারজীদ মোল্যা বর্তমানে প্রতিপক্ষ শহীদুল মোল্যার পক্ষ অবলম্বন করেছেন।

২০১৭ সালে ইউপি নির্বাচন পরবর্তী সময়ে কালিয়া উপজেলা আ.লীগের  তৎকালীন সহ-সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন খুন হন। সেই হত্যাকাণ্ডের আসামি ছিলেন নিহত যুবলীগ কর্মী আজাদ শেখ ও তার ভাই সাজ্জাদ শেখ। সেই মামলা এখনও চলমান আছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে আজাদ শেখের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত হয়ে ওঠে বিরোধী পক্ষ। প্রতিপক্ষ যুবদল নেতা শহীদুল মোল্যা, আওয়ামী লীগ নেতা লাবলু ভূঁইয়ার বাড়িসহ অন্তত ২০ বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। প্রাণভয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নারী ও শিশুরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। আলমগির মোল্যা, মফিজুর মোল্যা, শবির মোল্যা, রেজাউল মোল্যা, খোকন মোল্যা, রাসেল মোল্যা, শাহিদুল মোল্যা, জিল্লু মোল্যা, জাহাঙ্গির মোল্যা, কওছার ভুঁইয়া, আছাদ ভূইয়া, নিছার ভুঁইয়া, মিজানুর ভুঁইয়া, শহিদুল ভুঁইয়া, জহিরুল ভুঁইয়া, রবিউল ভুঁইয়া, জুয়েল ভুঁইয়া ও রকিব ভুঁইয়ার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে তাদের বাড়িঘরসহ সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শুক্রবার (২১ জুলাই) সকালে পেড়লী মোহসীন মোড়ে পুলিশের অবস্থান। এখানে প্রতিপক্ষ শহীদুল মোল্যাদের দোকানপাট বন্ধ। ক্ষুব্ধ কথা বললেন বাবু শেখ গ্রুপের লিটন সর্দার। তিনি বলেন, এই বাজারের বিএনপির লোকেরা আজাদকে বড় হ্যামার দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। তারা একেবারে জালেম, তাদের বিচার চাই।

পেড়লী গ্রামের খালপাড় পশ্চিম পাড়ার মুখে টহল দিতে দেখা যায় ডিবি পুলিশের টহল দলকে। প্রায় এক কিলোমিটার দুরে পশ্চিম পাড়ায় কফসার ভুঁইয়া, নেছার ভুঁইয়া, আসাদ ভঁইয়া আর মিজান ভুঁইয়ার বাড়িঘর পুড়ে ছাই। সেই সময়েও খড়ের পালায় আগুন জ্বলছে। বাড়িতে কোনো মানুষ নেই। কালিয়া থেকে অবস্থা দেখতে এসেছেন কফসার ভুঁইয়ার আত্মীয় আকলিমা বেগম। তিনি ভয়ে কাঁদছেন। বললেন, আমাকে এসে শাসিয়ে গেছে এখানে যেন না থাকি। রাতেই সব লুট করে নিয়ে গেছে। আপনারা সামনে গেলে দেখবেন এখনও আগুন লাগাচ্ছে।

কাদা রাস্তায় আরও আধা কিলোমিটার দুরে দেখা গেলো রবিউল ভূঁইয়ার বাড়িতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। পাশের বাকি ভুঁইয়া আর জুয়েল ভূঁইয়ার বাড়িরও একই দশা। সকালেই আগুন দেওয়া হয়েছে এসব বাড়িতে। সামনেই আগুনে পুরো টিনের চালটি ধসে পড়লো। নিচে তখনও ফ্রিজসহ অন্যান্য আসবাবপত্র পুড়ছে। এই এলাকায় পুলিশ না থাকায় প্রতিপক্ষের ছোট ছেলেরাই বাড়িতে আগুন দেওয়ার কাজগুলো করছেন। কেউ আবার লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বাড়িঘর ভাঙার চেষ্টা করছেন।

এদিকে নিহত আজাদ শেখের বাড়িতে শোকের মাতম। বড় ভাই উজ্জ্বল শেখ, মা বাড়ির দরজায় বসে মাতম করছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ সুপার সাদিরা খাতুন আজাদের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে যান।

নিহত আজাদ শেখের চাচা হাফিুজুর রহমান বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সবার বিচার চাই। আমরা নিজেদের শোক নিয়ে ব্যস্ত আর ওদিকে ইউপি চেয়ারম্যান জারজীদ মোল্যা নেতৃত্ব দিয়ে আগুন দিচ্ছেন, লুটপাট করছেন। আমাদের দোষ হচ্ছে।

নিহত আজাদের ভাই উজ্জ্বল শেখ বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, অথচ সেই দল করার কারণে আজ আমার ভাইকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে বিএনপির লোকজন। আমি এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই। সবার ফাঁসি চাই।

এদিকে এ ঘটনায় বিএনপিকে জড়ানোর ঘটনায় হতবাক হন জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গির আলম। তিনি বলেন, আ.লীগের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে খুন হয়েছে। এর সঙ্গে বিএনপিকে জড়িয়ে সামনের নির্বাচনে সুযোগ নিতে চাচ্ছেন এমপি।

কালিয়া উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান কৃষ্ণ পদ ঘোষ বলেন, এখানে দীর্ঘদিন ধরে একটা অস্থিরতা চলছে। স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারেই এই খুন। নিহত ওই ব্যক্তি উপজেলা আ.লীগের সহ-সভাপতিকে খুনের আসামি। আ.লীগ নেতা লাভলু ভূঁইয়াদের পরিবারের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সুপার সাদিরা খাতুন বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে সবদিক বিবেচনা করেই আমাদের তদন্ত শুরু হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে যেমন অপরাধ, তেমনি পরবর্তী সহিংসতাও অপরাধ। আমরা চেষ্টা করছি আর যেন কোনো ঘটনা না ঘটে। আশা করি দ্রুতই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।