ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শেষ দিনেও জমেনি গাবতলী হাট, পশু ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যাপারীরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩১ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২৩
শেষ দিনেও জমেনি গাবতলী হাট, পশু ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যাপারীরা

ঢাকা: রাত পোহালেই উদযাপিত হবে মুসলিম ধর্মালম্বীদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। শেষ মুহূর্তে কোরবানির পশু কিনতে হাটগুলোতে ছুটছেন ক্রেতারা।

তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে গাবতলী পশুর হাটে।

শেষ দিনেও জমেনি রাজধানীর অন্যতম বড় স্থায়ী এই হাট। ক্রেতা ও বেচাবিক্রি না থাকায় এবং পশুর মন মতো দাম না পাওয়ায় অনেক ব্যাপারী তাদের পশুগুলো ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

বুধবার (২৮ জুন) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গাবতলী স্থায়ী গবাদি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে পর্যপ্ত কোরবানির পশু আছে। তবে সেই তুলনায় নেই ক্রেতা। ফলে অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা। আবার টুকটাক যাও ক্রেতা আসছেন, তারও বিক্রেতাদের মন মতো দাম বলছেন না। এতে অনেক বিক্রেতা লোকসানে তাদের গরু বা ছাগল বিক্রি করছেন। আবার অনেকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের পালিত পশুগুলো।

এদিন সন্ধ্যার পর হাট পরিচালনা কমিটির অফিসের সামনে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত ৫০-৭০ জন ব্যাপারী তাদের  পশু ফিরিয়ে নেওয়ার টোকেন নিতে ওই অফিসের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। একজন একজন করে ভেতরে ঢুকে তারা টোকেন নিচ্ছেন।

সেখানে রাজবাড়ী থেকে আসা ব্যাপারী ইউনূসের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, গত রোববার (২৫ জুন) মাঝারি সাইজের নয়টি গরু নিয়ে হাটে এসেছি। এখন পর্যন্ত চারটি বিক্রি করেছি। তাও আবার লসে। বৃষ্টির কারণে হাটে ক্রেতা নেই। আবার কাদা পানিতে গরুরও কষ্ট হচ্ছে। নিজেরাও তিন দিন ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। তাই বাকি পাঁচটি গরু ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

কুড়িগ্রাম থেকে আসা ব্যাপারী নূর আলম সিদ্দিক বলেন, সাতটি গরু নিয়ে হাটে আসছি। তার মধ্যে ছয়টি বিক্রি হয়েছে৷ একটি আর বিক্রি হচ্ছে না। যে ছয়টি বিক্রি করেছি, সেগুলোতেও ১০ হাজার করে লস দিতে হয়েছে। হাটে ক্রেতা নেই। যারা আসছেন তারাও অনেক কম দাম বলছেন। এক লাখ ২০ হাজার টাকার গরু ৭০ হাজার টাকা বলছেন। কিন্তু বর্তমানে গরুর খাবারের যে দাম, তাতে আমাদের পুঁজিই উঠছে না। তাই একটি গরু ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

মানিকগঞ্জ থেকে ১৪টি গরু নিয়ে গাবতলী হাটে এসেছেন ব্যাপারী আজিজুল হাকিম। গত তিন দিনে তিনি ছয়টি গরু বিক্রি করেছেন। হাটে ক্রেতা না থাকায় বাকি আটটি ফিরিয়ে নিতে হাট পরিচালনা কমিটির অফিসের সামনে দাঁড়িয়েছেন তিনি। আজিজুল বলেন, ক্রেতারা গরুর দাম ঠিকঠাক বলছেন না। ১৫-১৬ মণের গরুর দাম বলছেন দেড়-দুই লাখ টাকা। এতে গরু লালন পালনের দামই উঠছে না। তাই যেগুলো থেকে গেছে, সেগুলো ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

যশোর থেকে ৯০টি গরু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারী মামুন। তার ৮৬টি গরু বিক্রি হয়েছে৷ তিনি বলেন, হাটে ক্রেতা নেই। আবার পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে হবে। তাই চারটি গরু বিক্রি না করেই চলে যাচ্ছি। আমার মাঝারি আকারের গরুগুলো বিক্রি হয়ে গেছে। বড় চারটি থেকে গেছে।

তবে ক্রেতারা বলছেন, হাটে গরুর তুলনায় ক্রেতা একেবারে কম হলেও ব্যাপারীরা দাম ছাড়ছেন না৷ যার কারণে গরু বিক্রি কম হচ্ছে।

মিরপুর থেকে আসা মনির হোসেন গত এক ঘণ্টা ঘুরেও কোনো গরু কিনতে পারেননি। তিনি বলেন, অনেক গরুই পছন্দ হয়েছে। তবে দাম না মেলায় এখনও কিনতে পারিনি। মাঝারি আকারের গরু কেনার ইচ্ছা ছিল। তবে দামের কারণে ছোট আকারের গরু কিনেই ফিরতে হবে মনে হচ্ছে।

হাসিল ঘরের সামনে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী জামিল আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ৭১ হাজার টাকায় একটি ছোট গরু কিনেছি। মোটামুটি কম দামেই পেয়েছি।

কলাবাগান থেকে আসা ইকবাল হোসেন হৃদয় বলেন, এক লাখ ১৫ হাজার টাকায় মাঝারি সাইজের একটি গরু কিনেছি। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে দাম মোটামুটি বলা চলে। তবে অন্যান্য বছরের সঙ্গে তুলনা করলে দাম বেশি।

গাবতলী গবাদি পশুর হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিবার শেষ দিনে হাট জমে ওঠে। বেচাবিক্রি হয়ে হাট পুরো খালি হয়ে যায়। তবে এবার বৃষ্টির কারণে ক্রেতা কম। হাটে এখনও অনেক গরু। বিক্রি না হওয়ায় অনেক ব্যাপারী তাদের গরু-ছাগল ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

এখন পর্যন্ত ১৫-২০ হাজার কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এবার মাঝারি ও ছোট আকারের গরু বেশি বিক্রি হয়েছে। বড়গুলো থেকে গেছে। বৃষ্টি না হলে বেচাবিক্রি আরও বেশি হতো। তবে এখনও রাত বাকি। দেখা যাক কি হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৮ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০২৩
এসসি/এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।