ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শেষ মুহূর্তে জমজমাট পশুর হাট, তবে কমছে না দাম

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৩
শেষ মুহূর্তে জমজমাট পশুর হাট, তবে কমছে না দাম

রাজশাহী: রাজশাহীতে এবার পশুর হাট জমতে ঢের সময় লেগেছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থী ও ভোটাররা যেন ব্যস্ত ছিলেন অন্য জগৎ নিয়ে।

প্রায় এক মাস থেকে রাজশাহীর বিভিন্ন হাটে কোরবানির পশু ওঠেছে। তবে হাটগুলো ছিল ক্রেতা শূন্য। এতে অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন এ অঞ্চলের খামারিরা। তবে গেল ২১ জুন সিটি করপোরেশন নির্বাচন শেষ হয়েছে। মূলত এর পর গত শুক্রবারই (২৩ জুন) প্রথম ভিড় লক্ষ্য করা যায় পশুর হাটে। শনিবার (২৪ জুন) থেকে সেই ভিড় পূর্ণতা পায়। আর রোববার (২৫ জুন) রাজশাহীর পশুর হাট যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ সিটি হাটে যেন আজ তিল ধারণের ঠাঁই নেই।

আর মাত্র তিন দিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। তাই শেষ মুহূর্তে জমজমাট হয়ে ওঠেছে পশুর হাট। তবে এখনও দাম কমছে না কোরবানির পশুর। তাই মানুষের ভিড়ে পশুর হাট জমে ওঠলেও কেনাবেচা হচ্ছে কম। মানুষ দর-দাম করেই হাট মাতিয়ে তুলেছেন।

আগামী ২৯ জুন ত্যাগের মহিমায় ঈদ উদযাপিত হবে। মঙ্গলবার (২৭ জুন) থেকেই শুরু হয়ে যাবে ঈদের ছুটি। সময় খুবই কম। তাই কোরবানির জন্য পছন্দের পশুটি কিনতে এখন বেশিরভাগ মানুষই হাটে ছুটছেন। তবে যাদের কোরবানির পশু রাখার জায়গা নেই তারা এখনও রয়েছেন চাঁদরাতের অপেক্ষায়।  

হাটে একদিকে যেমন দর-দাম চলছে অন্যদিকে তেমন পশু কেনাবেচাও চলছে। তবে বাজারে মাংসের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় কোরবানির পশুর দামও প্রায় দ্বিগুণ। খামারি ও ব্যবসায়ীরা মাংসের দামের কেজি হিসেবে পশুর দাম নির্ধারণ করছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি দাম হাঁকছেন। আর দাম বেশি হওয়ায় কম বাজেটে কোরবানির পশু কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকেই সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটাতে ব্যর্থ হয়ে খালি হাতেই ফিরছেন বাড়ি।

তবে যাদের সামর্থ্য রয়েছে- আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তারা বেশি দাম দিয়েই কোরবানির জন্য হাটের সেরা পশুটিই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। রোববার দুপুরের পর তাই মানুষের ভিড় বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

রাজশাহী সিটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির জন্য সবাই ছোট ও মাঝারি আকৃতির গরুই বেশি খুঁজছেন। আর তাই বড় গরুর চেয়ে ছোট ও মাঝারি আকৃতির গরুর দামই বেশি। তবে এক লাখ টাকার নিচে গরুই যেন নেই। গরুর গায়ে হাত রাখলেই যেন এক লাখ টাকা দাম চাওয়া হচ্ছে। মাঝারি আকৃতির গরুগুলো এক লাখ টাকার ওপরে দাম হাঁকা হচ্ছে। আর হাটে বড় আকৃতির গরুগুলোর দামই শুরু হচ্ছে দুই লাখ থেকে। শেষ সময়ে দাম কমতে শুরু করলেও এবারের চিত্র যেন সম্পূর্ণ উল্টো। তাই দাম নিয়ে এক ধরনের অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে পশুর হাটে। শনিবার রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে পশুর হাট বসেছিল। আজ বসেছে সিটি হাটে। সপ্তাহে দুদিন বসলেও আজ থেকে রোজই পশু মিলবে এ হাটে।

রোববার হাটে গিয়ে দেখা যায়, দূর-দূরান্ত থেকে মিনিট্রাক, নসিমন, করিমন ও ভটভটিবোঝাই গরু নিয়ে আসছেন মালিক, খামারি ও ব্যাপারীরা। দুপুর ২টার পরে এ হাট কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, এবার একটুও দাম কমাচ্ছেন না বিক্রেতারা। তবে বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে গো খাদ্যের দাম বেশি। ফলে বছরজুড়ে গরু লালন-পালন করতে খরচ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। তাই কোরবানির পশুর দামও বেড়েছে। এখানে তাদের করার কিছু নেই। এজন্য ঊর্ধ্বমুখী বাজার ব্যবস্থাকেই দায়ী করছেন বিক্রেতারা।

রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের তেবাড়িয়া গ্রাম থেকে সিটি হাটে কোরবানির জন্য নিজের পোষা গরু বিক্রি করতে আসা গোলাম মোস্তফা বলেন, বাজারে সব পণ্যের দামেই আগুন লেগেছে। তাহলে গরুর দাম বাড়বে না কেন? গ্রামের বাড়িতে আগে নিজের ও পাড়া-প্রতিবেশীর নুন-ফ্যানেই গরু পালা হয়ে যেত। কিন্তু সেই সময় এখন আর নেই। গরুকে সবকিছুই বাজার থেকে কিনে খাওয়াতে হয়। সেই হিসেবে গরুর দামই ওঠে না অনেক সময়। আর খরচ হিসেবে গরুর দাম চাইলে ক্রেতারা বলছেন দাম বেশি। তাহলে আমরা কোথায় যাব? এক সময় খামারে গরুর উৎপাদন ও লালন-পালন কমে গেলে ভারত থেকে পশু আমদানি করা হত। এরপর পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করল। এখন গ্রামে এমন কোনো বাড়ি নেই যেই বাড়িতে অন্তত একটি গরু নেই। এখন গরু-ছাগলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠেছে দেশ। কিন্তু পশুর দাম না পেলে আবার আগের অবস্থা তৈরি হবে।

দাম নিয়ে কথা বলতে গেলে গরু নিয়ে হাটে আসা পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরের ব্যবসায়ী একরামুল হক বলেন, তার কাছে ৩ মণ ওজনের গরু আছে দাম ১ লাখ টাকা, ৪ মণ ওজনের গরুর দাম দাম ১ লাখ ২০ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আর ৫ মণ ওজনের গরু দেড় লাখ টাকা দাম চাইছেন। এছাড়া বড় গরুর দাম দুই লাখ টাকা থেকে শুরু।

কোরবানির পশু কিনতে আসা রাজশাহী মহানগরীর সপুরা এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, তীব্র গরম উপেক্ষা করে ভর দুপুরেই হাটে এসেছেন। হাটে প্রচুর মানুষের সমাগম। কিন্তু দাম বেশি। তাই হাটের ভিড় ঠেলে ঘুরে ঘুরে গরু দেখছেন। আজ অন্যান্য দিনের তুলনায় পশুর সরবরাহ বেশি। দর-দাম করে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছেন। ব্যাপারী জানিয়েছেন ওজন ৪ মণের একটু বেশি হবে। তবে ওজন দেখে তো আর কোরবানির গরু কেনা হয় না। পছন্দ হয়েছে তাই কিনেছি।

রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার ফারুক হোসেন ডাবলু বলেন, এবার নানা কারণেই কোরবানির পশুর দাম বেশি। সীমান্তও বন্ধ। হাটে ভারতীয় গরু নেই। তাদের হাটে দেশি জাতের গরুতেই ভরপুর। আর হাটে দেশি গরুই বেশি বিক্রি হচ্ছে। ঈদ ঘনিয়ে আসায় শেষ সময়ে হাটে ক্রেতার সংখ্যাও বেশি। আজ থেকে আগামী কয়েক দিন রোজই হাট বসবে। চাঁদরাত পর্যন্ত গরু কেনাবেচা চলবে। এবার শেষ মুহূর্তেও দাম কমবে না বলে মনে করেন সর্ববৃহৎ এ হাটের ইজারাদার।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৩
এসএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।