ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

টাকা নিয়ে উধাও রপ্তানিকারক, সংকটে রাজ্জাক জুট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৩
টাকা নিয়ে উধাও রপ্তানিকারক, সংকটে রাজ্জাক জুট

ঢাকা: দেশের পাটজাত শিল্পের বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাজ্জাক জুট ইন্ডাস্ট্রিজ। জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির ৭০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অর্ক এন্টারপ্রাইজ ও এক্সিলেন্স ইমপেক্সের কর্ণধার বিবেক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এ ঘটনায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া জালিয়াতির ঘটনায় মামলা হয়েছে পৃথক তিনটি। কিন্তু আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ অবস্থায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শ্রমিক নিয়ে সংকটে পড়তে যাচ্ছে পাট শিল্প প্রতিষ্ঠানটি।

মামলার এজাহার ও রপ্তানিসংক্রান্ত সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সাল থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সুতা রপ্তানি করে আসছে রাজ্জাক জুট ইন্ডাস্ট্রিজ। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি সুতা রপ্তানি করে আয় করে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। ২০২০ সালে রাজ্জাক জুট মিলে উৎপাদিত সুতা রপ্তানির প্রস্তাব দেন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অর্ক এন্টারপ্রাইজ ও এক্সিলেন্স ইমপেক্সের সত্ত্বাধিকারী বিবেক সাহা। ব্যবসায়িক আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ২০২১ সালে বিবেক সাহার নিয়োজিত শিপিং এজেন্ট বিএস শিপিং লাইনস লিমিটেডের মাধ্যমে ৫৫টি ও অন্যান্য শিপিং লাইন্সের মাধ্যমে ২১টি ক্রয়াদেশে ৩ হাজার ১৭৮ টন সুতা রপ্তানি করে। যার বাজারমূল্য ৬৬ লাখ ৪ হাজার ১০২ মার্কিন ডলার। রাজ্জাক জুট ইন্ডাস্ট্রিজ ৭৬টি কমার্শিয়াল ইনভয়েসের মাধ্যমে এ পরিমাণ সুতা কাস্টম ক্লিয়ারেন্স ও রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় ডিক্লারেশন সম্পন্ন করে।

রপ্তানি করা পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে ব্যাংক এশিয়ার উত্তরা শাখার ইস্যু করা ৭৬টি বিল অব লেডিং ও অন্যান্য শিপিং ডকুমেন্ট অর্ক এন্টারপ্রাইজ ও এক্সিলেন্স ইমপেক্স সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল লোকাল অফিসে জমা দেয়। এরমধ্যে একাধিকবার ব্যাংক এশিয়া উত্তরা শাখার মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসে রপ্তানি বিলের বিপরীতে দ্রুত মূল্য পরিশোধ করতে তাগাদা দেওয়া হয়।

বিল না পেয়ে রাজ্জাক জুট ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষ থেকে বিবেক সাহা ও বিএস শিপিং লাইনস লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা রপ্তানিকৃত পণ্যের অবস্থা গোপন রেখে নানাভাবে হয়রানি করে। তাদের পারস্পরিক যোগসাজশে বিল অব লেডিংগুলোর বিপরীতে রপ্তানি করা বিপুল পরিমাণ পাটের সুতা জালিয়াতির মাধ্যমে জাহাজ থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ৫৫টি ডকুমেন্টের অনুকূলে পাঠানো পণ্যের বিপরীতে বাংলাদেশে কোনো মার্কিন ডলার আসেনি। এই পরিমাণ অর্থ বিবেক সাহা ও বিএস শিপিং আত্মসাৎ করেছে।

অপরদিকে, বাকি ২১টি ডকুমেন্টের অনুকূলে পাঠানো পণ্যের বিপরীতে রপ্তানি মূল্যের কিছু অংশ সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসে বিবেক সাহার ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। পরবর্তীতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তিনি প্রায় ১৪ লাখ ৪৩ হাজার ৯৩৮ ডলার ওই অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেন। অবশিষ্ট ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৩৯৩ ডলার তুরস্ক থেকে এখনও আসেনি। এসব টাকার কিছুই রাজ্জাক জুট ইন্ডাস্ট্রিজ পায়নি।

এছাড়া, ওই ডলার দেশে আসার আগেই নিয়ম বহির্ভূতভাবে সোনালী ব্যাংক তুরস্কের ব্যাংকের কাছে ডকুমেন্ট রিলিজ করে দেয়। ফলে অবশিষ্ট টাকা আসাও অনিশ্চিত। সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান ও চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকীর কাছে বারবার চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এদিকে রপ্তানি করা পণ্যের মূল্যের বিপরীতে ব্যাংক এশিয়া উত্তরা শাখার ইএক্সপিগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের অনলাইন এক্সপোর্ট মনিটরিং সিস্টেমে ওভারডিউ হিসাবে দেখাচ্ছে। ফলে রাজ্জাক জুট ইন্ডাস্ট্রিজের রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। রপ্তানি মূল্যের বিল পাওয়ার জন্য সোনালী ব্যাংককে নির্দেশ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে একাধিকবার আবেদন করলেও কোনো সাড়া মেলেনি। আর এই অজুহাতে রাজ্জাক জুট ইন্ডাস্ট্রিজের ১৯ কোটি টাকার এফডিআর আটকে রেখেছে ব্যাংক এশিয়া। অথচ, তাদের কাছে রাজ্জাক জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কোনো ঋণ নেই।

এ ব্যাপারে অর্ক এন্টারপ্রাইজ ও এক্সিলেন্স ইমপেক্সের স্বত্বাধিকারী বিবেক সাহার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে তার অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব অর্থ আত্মসাতের ঘটনার পর থেকে তিনি দেশের বাইরে আছেন।

এদিকে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় জালিয়াতির অভিযোগে ইতোমধ্যেই রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা (অ্যাডমিরাল স্যুট ১১,১২, ১৯/২০২২) হয়েছে। এসব মামলার আসামিরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়েছে। অপরদিকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কর্মী নিয়ে সংকটে পড়ছে রাজ্জাক ইন্ডাস্ট্রিজ। অচিরেই বিষয়টি সমাধান না হলে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যাওয়া আশঙ্কা রয়েছে। তাতে হাজার হাজার কর্মী বেকার হয়ে পড়বে।

রাজ্জাক জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাসার খান বলেন, দেশের প্রচলিত নিয়ম মেনে বৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছি। এর আগেও স্থানীয় রপ্তানিকারকের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি করেছি। কিন্তু এমন প্রতারণার শিকার হবো কখনো ভাবিনি। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এ অর্থ উদ্ধারের উদ্যোগ নেয় তাহলে সচল থাকবে ইন্ডাস্ট্রি অন্যথায় বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৩
এমকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।