ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শীতের প্রভাব, নোয়াখালীতে অর্ধশতাধিক শিশুর মৃত্যু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২৩
শীতের প্রভাব, নোয়াখালীতে অর্ধশতাধিক শিশুর মৃত্যু

নোয়াখালী: সারাদেশের মতো নোয়াখালীতেও বেড়েছে শীতের তীব্রতা। বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ।

যাতে বয়স্কদের তুলনায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এতে অভিভাবকদেরও ভোগান্তি পৌঁছেছে চরম পর্যায়ে।

তীব্র ঠাণ্ডায় কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও ভাইরাল ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এর প্রভাবে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে গত ১ মাসে (ডিসেম্বর) ৫২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। যার অধিকাংশই ঠাণ্ডাজনিত রোগে।  

শনিবার (০৭ জানুয়ারি) দুপুরে সরেজমিনে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ড ও শিশু ওয়ার্ড রোগীতে পূর্ণ।  

তৃতীয় তলার শিশু ওয়ার্ডে ঠাণ্ডাজনিত অসুস্থতার কারণে ভর্তি করা হয়েছে চার মাস বয়সী শিশু ফাহিমকে। পার্শ্ববর্তী জেলা লক্ষ্মীপুরের মৌলভীরহাট থেকে আসা ফুটফুটে শিশু ফাহিমের নিউমোনিয়া হয়েছে বলে জানা যায় হাসপাতালের রেজিস্ট্রার সূত্রে। রক্তে অক্সিজেনের লেভেল কম থাকায় নেবুলাইজেশন করে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইনজেকশন, স্যালাইন পুশ করতে হাতে লাগানো হয়েছে ক্যানোলা।

শিশু ফাহিমের মা ফাতেমা জানান, ঠাণ্ডা-কাশি, সর্দি, শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় প্রথমে লক্ষ্মীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা এখানে রেফার করেন। এখানে আসার পর নিউমোনিয়া হয়েছে জানিয়ে ভর্তি করা হয়। গত ৬ দিন ধরে শিশু ফাহিম এখানে ভর্তি আছে। এখনো সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেনি।

একই ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা আড়াই বছর বয়সী শিশু মাহবুবুর রহমানের মা খালেদা আক্তার জানান, আমার ছেলের জন্মগত ঠাণ্ডাজনিত রোগের সমস্যা। সামান্য ঠাণ্ডা লাগলেই সে অসুস্থ হয়ে যায়। গত মাসে তার জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে এখানে ১৬ দিন ভর্তি ছিলাম। তারপর অনেকটা সুস্থ হলে বাড়ি নিয়ে যাই। ৭ দিনের মাথায় আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা পুনরায় তাকে এখানে ভর্তি করাই। গত ৬ দিন ধরে সে এখানে চিকিৎসাধীন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত মাসে হাসপাতালে বিভিন্ন রোগে শিশু-বৃদ্ধসহ মোট ১৪৪ জনের মৃত্যু হয়। যার মধ্যে শূন্য থেকে ৪ বছর বয়সী ৫১ এবং ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী ১টি শিশু রয়েছে। এছাড়া ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে মারা গেছেন ৪৬ জন। এদের অধিকাংশই ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে মৃত্যু হয়েছে।

গত ডিসেম্বরে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয় ৯২৭ জন। গত ৭ দিনে ভর্তি হয়েছে ১২৯টি শিশু, যার মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিন শিশু ওয়ার্ডে ৪০/৫০ জন ভর্তি হয় বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।

হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড সূত্রে জানা যায়, গত ডিসেম্বরে সেখানে ৯৫০ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন, যাদের অধিকাংশই শিশু। এছাড়া গত ৭ দিনে ১০৯ জন রোগী এ ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। শনিবার (৭ জানুয়ারী) বিকেল পর্যন্ত এ ওয়ার্ডে মোট ৪০ জন ভর্তি ছিল, যার মধ্যে ৩৮ জনই শিশু রোগী।

৩য় তলার শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স আকলিমা আক্তার জানান, আমরা চেষ্টা করি সব রোগীকে সমান সেবা দিতে। শিশুদের সেবা দিতে আরও বেশি সময় প্রয়োজন হয়। তবে নার্স সংকটের কারণে অনেক সময় আমাদের হিমশিম খেতে হয়। কখনো কখনো ১টি শিশু খারাপ হয়ে গেলে তার পেছনেই একজন নার্সকে কাজ করতে হয়। শিশু ওয়ার্ডে আরও নার্স বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. ইয়াকুব আলী মুন্সি জানান, শীতের শুরু থেকে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের হাসপাতালে শিশুদের ভর্তি করানোর পরপরই আমরা তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেই। অধিকাংশ শিশুই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়। তবে শীতকালে শিশুদের অভিভাবকদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে, যাতে তাদের গায়ে ঠাণ্ডা না লাগে।  

শিশু ওয়ার্ডে জনবল সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হেলাল উদ্দিন জানান, এই হাসপাতালে অনেক রোগীর সেবা দিতে হয়। এত রোগী সামাল দিতে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের আরও ডাক্তার, নার্স ও প্রয়োজনীয় জনবল প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২৩
এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।