ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

একদিন হারিয়ে যাওয়া শৈশবে

কাজল কেয়া | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১২
একদিন হারিয়ে যাওয়া শৈশবে

এখনও অনেক জায়গায় ঘুরিনি আমি। এর মধ্যে একটি ছিল আশুলিয়ার ফ্যান্টাসি কিংডম।

বন্ধুদের মুখে অনেক শুনেছি এর এক্সাইটিং সব রাইডের কথা। এরপর থেকেই খুব লোভ হচ্ছিল সেখানে যাওয়ার। কিন্তু এতোদূরে যাওয়ার মত সঙ্গী, সময় বা সুযোগ হয়ে ওঠেনি।

হঠাৎ একদিন বাংলানিউজের লাইফস্টাইলে চোখ বুলিয়ে দেখি ভালোবাসার গল্প লেখার আহ্বান। প্রকাশের যোগ্য হবে কিনা বা কতটুকু ভালো হবে এসব না ভেবেই লিখে ফেললাম একটি ভালোবাসার গল্প। খুব ভালো লাগলো যথন লাইফস্টাইল বিভাগে অন্যান্যদের গল্পের পাশে আমার গল্পটি দেখলাম। আরও ভালো লাগলো যখন পুরস্কার হিসেবে সব রাইডসহ ফ্যান্টাসি কিংডমের টিকিট হাতে পেলাম।

টিকিটের মেয়াদ ছিল ১২ মার্চ পর্যন্ত। কবে যাবো সে প্রহরই গুণছিলাম। প্রায় ১০/১২ দিন পর অবশেষে ঠিক করলাম ২ মার্চ শনিবার যাবো। সঙ্গী আমার বর মেরাজ।

সারারাত জেগে অফিস করায় বাসায় এসে সকাল সাড়ে ১০টায় ঘুম দিয়েছিলেন আমার সাহেব। তার ঘুম ভাঙলো দুপুর ২টায়। বাসার সবাই বলছিল আজ যেহেতু দেরি হয়ে গেছে তাই আগামী সপ্তাহে যেন যাই। কিন্তু মন কি আর মানে। আমি বললাম আজই যাব। ব্যস তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে দুপুরে কিছু না খেয়েই রওনা হলাম।

বাসা থেকে যখন বের হই তখন বাজে দুপুর পৌনে ৩টা। আমাদের বাহন হচ্ছে মটোরসাইকেল।

বেরিবাঁধ হয়ে ছুটলো আমাদের বাইক। খুব ভালো লাগছিল সেই পথ চলা। দুপাশে সবুজ আর শান্ত। বেরিবাঁধের শেষ মাথা থেকে বায়ে মোড় নিলে আশুলিয়ার রাস্তা। রাস্তাটা যেন শেষ হচ্ছে না, মনে হচ্ছে কখন যাব সেই স্বপ্নের দেশে।

৪৫ মিনিট পর আমরা পৌঁছালাম ফ্যন্টাসি কিংডমের গেটের কাছে। পার্কিংয়ে বাইক রেখে আমরা ভিতরে গেলাম। প্রথমেই ঢুকলাম হেরিটেজ পার্কে। আগেই খাওয়ার দাওয়ার পর্বটা সেরে নিলাম।

হেরিটেজ পার্কে রয়েছে আহসান মঞ্জিল, শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, সংসদ ভবন, সাতগম্বুজ মসজিদসহ বাংলাদেশের বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার ছোট ছোট প্রতিকৃতি। মনে হলো হারিয়ে গেছি সেই যুগে। শুরু হলো আমাদের দুজনার ফটোসেশন।

সময় কম বলে হেরিটেজের কোনো রাইডেই চড়তে পারিনি আমরা। হেরিটেজ থেকে বের হয়ে ঢুকলাম ঈগলু হাউজে। অন্ধাকার ঘরটাতে ঢোকার পর একজন এসে হিন্দি একটি গান ছেড়ে দিলেন ফুল ভলিউমে। মাঝখানে রাখা আছে বরফ। আবার ওপর থেকে শিশিরের মতো পড়ছে পানি।

এরপর ঢুকলাম ফ্যান্টাসি কিংডমের ভেতরে। ঢুকেই আবার ছবি তোলা। হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়লো রোলার কোস্টার নামে এক্সাইটিং একটি রাইডের দিকে। দু’জনার টিকিট দেখিয়ে মাত্র তিনজন উঠলাম সে রাইডটিতে। আমি আর  মেরাজ বসেছিলাম একেবারে সামনে। রাইডটি যখনি চলতে শুরু করলো আমি ভয়ে প্রাণপণে চিৎকার শুরু করলাম। মনে হচ্ছিল এখনই ছিটকে পড়ে যাবো নিচে। তবে ভয়ের চেয়ে মজাই পেয়েছিলাম বেশি। আর মেরাজ এতোই মজা পেয়েছিল যে আরেকবার ওই রাইডে চড়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিল। পরে অবশ্য সময়ের জন্য চড়া হয়নি।

ভয়ংকর ওই রাইড থেকে নামার পর সঙ্গীসহ কয়েকজনের সঙ্গে ঢুকলাম অন্ধকার একটি ঘরের মধ্যে। ঘরটির মধ্যে ঢুকে মনে হলো আমি সৌর জগতে আছি। লোহার গ্রিল বিছানো সরু একটি পথ দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হলো আমি ঘুরছি। এই বুঝি উল্টে পড়ে গেলাম। আবারও চিৎকার করতে লাগলাম ভয়ে। সবাই আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগলো ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আমি ঘুরছি না ঘুরছে দেয়াল আলো করে ডিজিটাল ছবি।

এরপর আন্ডারগ্রাউন্ডের মতো একটা পথ সোজা ওয়াটার কিংডমের ভেতরে। যাওয়ার সময় মনে হচ্ছিল আমি পানির নিচের জগতে আছি। ভেতরে ঢুকে শুনলাম পানির কৃত্রিম ঢেউ দিতে এখনও ৩০ মিনেটের মতো বাকি।

 টায়ার নিয়ে পানির রাইডগুলোতে চড়া শুরু করলাম। খুব মজা পাচ্ছিলাম দুজনই। বার বার টায়ারে নিয়ে ৩/৪ তলার মতো ওপরে ওঠে বড় পাইপের মত জায়গা দিয়ে নিচে নামা। দারুণ লাগছিল। মনে হচ্ছিল একদিনের জন্য একেবারেই হারিয়ে গেছি। যেন ফিরে গেছি পেছনে ফেলে আসা দূরন্ত শৈশবে।

পানিতে কৃত্রিম ঢেউ দেওয়ার ৫ মিনিট আগে সবাইকে জানানো হলো, নেমে গেলাম পানিতে। ঢেউ এসে আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যেন সত্যি সত্যি সাগরের ঢেউ।

ওয়াটার কিংডম থেকে বের হয়ে দেখি হিন্দি গানের তালে তালে নাচছে একদল ছেলে মেয়ে। সন্ধ্যার নাস্তা খেতে খেতে দেখছিলাম সে নাচ। এরপর চড়লাম আরেকটা রাউডে। নামটা ঠিক মনে করতে পারছিনা। রেইলাইনের মতো একটা খোলা ছোট বগি আস্তে আস্তে উঠছে ওপরে, এরপর হঠাৎ দ্রুত গতিতে নিচে নেমে যাচ্ছে। পর পর তিনবার।

বিদ্যুৎ না থাকায় সান্তা মারিয়া আর ম্যাজিক কার্পেটে উঠতে পারিনি। তবে তা পুষিয়ে নিয়েছি অন্য রাইডগুলোর সঙ্গে রিপ্লেস করে।

বাম্পার কারে উঠেছি দুবার। গাড়ি কন্ট্রোল করা শিখতে শিখতে রাইডের সময় শেষ। এরপর জুজু ট্রেনে চড়ে দেখে নিলাম পুরো ফ্যান্টাসি কিংডম। সব শেষে ইজিডিজি। সময় একেবারে শেষ পর্যায়ে থাকায় আমরা দু’জনই চড়েছিলাম ওই রাইডে।

এরপর আস্তে আস্তে বাড়ির পথে। ফ্যান্টাসি কিংডমে যতক্ষণ ছিলাম মনে হচ্ছিল প্রতিদিনের দায়িত্ব, হাজারো কাজ, সবকিছু ভুলে আমরা দু’জন শৈশব ফিরে পাওয়া মুক্ত মানুষ।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।