ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

মেশিন স্থাপন নিয়ে ক্যান্সার হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা উদ্বেগের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২০
মেশিন স্থাপন নিয়ে ক্যান্সার হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা উদ্বেগের

ঢাকা: জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চরম অব্যবস্থাপনা এবং কর্তা ব্যক্তিদের কর্তব্যে অবহেলাকে নিন্দনীয় ও উদ্বেগের বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

হাসপাতালের ভেন্টিলেটর মেশিন স্থাপনে অবহেলার বিষয়ে জারি করা রুলের রায়ে এমন মন্তব্য করেছেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ।

মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) এ রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে আদালত বলেন, ‘দেশের একমাত্র ক্যান্সার রিচার্স ইন্সটিটিউট এবং হাসপাতালে চরম অব্যবস্থাপনা, দ্বায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কর্তব্যে অবহেলা শুধুমাত্র দুঃখজনকই নয়, তা নিন্দনীয় ও উদ্বেগের বিষয়। ’

২০২০ সালের ২ জানুয়ারিতে একটি ইংরেজি দৈনিকে ‘আইসিইউ অন সিকবেড’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ১২ বছর আগে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) জন্য আটটি অত্যাধুনিক আর্টিফিশিয়াল রেসপিরেটরি ভেন্টিলেটর (এআরভি) মেশিন কেনা হয়েছিল।

আইসিইউর জন্য অতি প্রয়োজনীয় এই যন্ত্রগুলোর প্রত্যেকটি ৭০ লাখ টাকায় কেনা হলেও আশ্চর্যজনকভাবে একবারের জন্যও সেগুলো ব্যবহার করা হয়নি। আইসিইউর ভেতরে এক কোণায় অযত্নে ফেলে রাখা হয়েছে যন্ত্রগুলো। এখন হাসপাতালটির আইসিইউতে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা নেই।

অক্সিজেন সরবরাহের জন্য হাসপাতালটিতে একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা তিন বছর আগে চালু হলেও ভেন্টিলেটরগুলো এখনও বসানো হয়নি। আরও খারাপ খবর হলো, এর মধ্যেই ভেন্টিলেটরগুলোর মাদারবোর্ড চুরি হয়ে গেছে। ফলে এ যন্ত্রগুলো এখন পুরোপুরি অকেজো।

এ প্রতিবেদন নজরে নিয়ে একই দিন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) জন্য আটটি অত্যাধুনিক আর্টিফিশিয়াল রেসপিরেটরি ভেন্টিলেটর (এআরভি) মেশিন স্থাপন রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারে অবহেলার অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি রুলও জারি করেন।

একই সঙ্গে অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে থাকা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মো. মোয়াররফ হোসেনের অবসরকালীন সুবিধা স্থগিতের নির্দেশ দেন আদালত।

মঙ্গলবার রায়ে আদালত বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ প্রতিপালনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় (স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ) তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন দেন। ওই প্রতিবেদনে ভেন্টিলেটর স্থাপন না করে আইসিইউ চালু না হওয়ার জন্য ডা. এএমএম শরফিুল আলম, ডা. মোল্লা ওবায়দুল্লাহ, ডা. মো. মোয়াররফ হোসেন এবং ডা. মানস কুমার বসুকে দায়ী করা হয়।

মানস কুমার বসু ছাড়া অন্যরা অবসরে রয়েছেন। অবসরে থাকার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। আর মানস কুমার বসুর বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ’

আদালত আরও বলেন, ‘দেশের একমাত্র ক্যান্সার রিচার্স ইন্সটিটিউট এবং হাসপাতালে চরম অব্যবস্থাপনা, দ্বায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কর্তব্যে অবহেলা শুধুমাত্র দুঃখজনকই নয়, তা নিন্দনীয় ও উদ্বেগের বিষয়। ’

রায়ে আদালতের আদেশ ও পর্যবেক্ষণ অংশে বলা হয়, দায়ী ডা. এএমএম শরিফুল আলম ও ডা. মোল্লা ওবায়দুল্লাহর বিরুদ্ধে পিআরএল জনিত কারণে যেহেতু বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়, তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে প্রতিকী ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হলো। আদায়কৃত ক্ষতিপূরণের অর্থ সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের উন্নয়ন তহবিলে জমা করতে হবে। ক্ষতিপূরণ প্রদানে ব্যর্থ হলে পিডিআর আইনের বিধান মতে ওই টাকা আদায় করতে হবে।

এছাড়া ডা. মোয়াররফের অবসরকালীন সুবিধা স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার করা হলো। তিনি দাবি করেছেন, ২০১৪ সালে এবং ২০১৫ সালে ভেন্টিলেটরগুলো সচলের অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু ন্যাশনাল ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইক্যুপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়াকশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) কর্তৃপক্ষ সচলের দুটি পত্র পায়নি বলে তদন্তে বলা হয়েছে। এ অবস্থায় বিষয়টি রায় পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে ১৫ কার্যদিবসে তদন্ত সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। যদি মোয়াররফের দাবি সঠিক না হয় তাহলে তাকেও ৫ লাখ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যদি তার দাবি সঠিক হয় তাহলে নিমিউয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাইয়ুম (যুগ্ম সচিব, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) এবং মো. রেজানুর রহমান (যুগ্ম সচিব) এর নিকট থেকে ৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।

এছাড়া ডা. মানস কুমার বসুর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।

রাষ্ট্রীয় অর্থ যথাযথভাবে ব্যয়ের লক্ষ্যে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য দেশের সকল পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণে কয়েকটি নিয়মনীতি দিয়ে তা অনুসরণ করতে বলেছেন আদালত।

এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো দুদকের সুপারিশ মালার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার, সারওয়ার হোসেন বাপ্পী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সামীউল আলম সরকার ও উর্বষী বড়ুয়া সীমি। ডা. মোয়াররফ হোসেনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুশফিক উদ্দিন বখতিয়ার। ওই ইংরেজি দৈনিকের পক্ষে ছিলেন কাজী ইরশাদুল আলম।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২০
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।