ঢাকা, সোমবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

যশোরে ছাত্র নির্যাতনের অভিযোগ: বিচারিক তদন্ত চেয়ে রিট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩১ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২০
যশোরে ছাত্র নির্যাতনের অভিযোগ: বিচারিক তদন্ত চেয়ে রিট

ঢাকা: যশোরে কলেজছাত্র নির্যাতনের অভিযোগে ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত, ক্ষতিপূরণ এবং যাবতীয় চিকিৎসা ব্যয়ভার বিবাদীদের বহনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার বিচারপতি জে বি এম হাসানের ভার্চুয়াল বেঞ্চে এ রিট পিটিশন দাখিল করেন।

আবেদনে স্বরাষ্ট্র সচিব, যশোরের পুলিশ সুপার, যশোরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং যশোরের সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী কলেজছাত্র ইমরানের অভিযোগ, গত ৩ জুন সন্ধ্যায় তিনি সলুয়া বাজার এলাকা থেকে এক সঙ্গীসহ বাড়ি ফিরছিলেন। পথে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে সাজিয়ালি ফাঁড়ির পুলিশ তাদের ব্যাগ তল্লাশি করে। এ সময় ভয়ে ইমরান দৌঁড় দিলে পুলিশ সদস্যরা তাকে ধরে মারধর করে। পরে ইমরান জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফিরলে নিজেকে একটি ফার্মেসিতে নিজেকে দেখতে পান। এ সময় পুলিশ পকেটে গাঁজা দিয়ে তার বাবার কাছে ফোন করে ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে ছয় হাজার টাকায় ছেড়ে দেয়। পরে বৃহস্পতিবার ভোরে ইমরানকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর বেসরকারি কুইন্স হসপিটালে ভর্তি করা হয়।

চিকিৎসকরা জানান, তার দুটি কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ৮ জুন বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় হয়। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম রব্বানি শেখের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।

গত ১৫ জুন তদন্ত কমিটি পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্ত কমিটি ইমরানকে নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতা পায়নি।

ওইদিন যশোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্তে কলেজছাত্র ইমরানকে নির্যাতনের সত্যতা মেলেনি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছে ইমরানকে নির্যাতন করলে কিডনি হ্যামারেজ কিংবা ডেমারেজ হওয়ার কথা। কিন্তু সেটি হয়নি। আগে থেকেই তার কিডনির সমস্যা ছিল। এছাড়া তার শরীরে কোথায়ও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

এদিকে ১৫ জুন প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে সাজিয়ালি পুলিশ ক্যাম্পের সেই ৪ পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড করা হয়েছে।  তারা হলেন- সাজিয়ালি ক্যাম্প ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুন্সি আনিচুর রহমান, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সুমারেশ কুমার সাহা, এএসআই সাজদার রহমান ও কনস্টেবল ফারুক হোসেন। যশোরের পুলিশ সুপার (এসপি) আশরাফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ভুক্তভোগী কলেজছাত্রের অভিযোগ তদন্তে নির্যাতনের প্রমাণ মেলেনি। তবে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে কর্মস্থল ত্যাগ ও সাদা পোশাকে অভিযান পরিচলানা করায় তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রিট দায়েরের পর ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির বলেন, গত আট জুন যশোর জেলার সদর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের নেছার আলীর ছেলে ইমরান হোসেন কে সাজিয়ালি পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ অফিসার কর্তৃক নির্মম প্রহারের কারণে তার দুটি কিডনিই অকেজো হয়ে গেছে বলে বিভিন্ন পত্রিকার মারফতে জেনেছি। ইমরান বর্তমানে যশোরের কুইন্স হসপিটাল এ চিকিৎসাধীন আছে বলে জানা যায়।  এই ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক এবং ইমরানের মৌলিক অধিকারের লংঘন। গণমাধ্যমে বিগত ৯ জুন এই বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এই রিপোর্টগুলো সংযুক্ত করে উক্ত ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত, ইমরানের জন্য ক্ষতিপূরণ এবং এর যাবতীয় চিকিৎসা ব্যয় ভার যেন বিবাদীরা বহন করে এই নির্দেশনা চেয়ে রিট পিটিশন দাখিল করা হয়েছে।

আরও পড়ুন...কলেজছাত্র নির্যাতনের অভিযোগ, সেই ৪ পুলিশ সদস্য ক্লোজড

বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, জুন ১৯,২০২০
ইএস/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আইন ও আদালত এর সর্বশেষ