ঢাকা, মঙ্গলবার, ২ পৌষ ১৪৩১, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

লকডাউনে কঠিন সময় পার করছেন আইনজীবীরা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২০
লকডাউনে কঠিন সময় পার করছেন আইনজীবীরা

ঢাকা: বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে অনান্য পেশার মতো আইনজীবীরাও বেকায়দায় পড়েছেন। লকডাউনের কারণে আদালত বন্ধ থাকায় অনেক আইনজীবীই চাপা কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। করোনা পরিস্থতিতে গত ২৬ মার্চ সরকারিভাবে সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগে ১৩ মার্চ থেকেই অবকাশকালীন ছুটি চলছিল সুপ্রিম কোর্টের। এর মধ্যে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা দিলে আদালতের ক্ষেত্রেও তা কার্যকর হয়। ফলে দীর্ঘ কর্মহীনতায় কঠিন সময় পার করছেন আইনজীবীরা।  

সার্বিক পরিস্থতিতে ইতোমধ্যেই আইনজীবীদের জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে ৬০ কোটি টাকার আবেদন জানিয়ে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট বার। এছাড়া সদস্যদের ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটি।

ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশনও বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার জন্য সদস্যদের কাছে ই-মেইলে দরখাস্ত আহ্বান করেছে।  

আইনমন্ত্রীকে  লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়, করোনাজনিত কারণে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট বন্ধ থাকায় বিজ্ঞ আইনজীবীরা নিজদের পেশা পরিচালনা করতে না পারায় কঠিন অবস্থার মধ্যে দিনযাপন করছেন। আইনজীবীরা কোর্ট ফি দেওয়ার মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ কঠিন অবস্থায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এবং অন্য আইনজীবী সমিতির সদস্যদের কল্যাণার্থে সরকারের তহবিল থেকে ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার জন্য আপনার (আইনমন্ত্রী) মাধ্যমে সরকারের কাছে অনুরোধ করা যাচ্ছে।

এদিকে এরই মধ্যে আইনজীবীদের পাশে দাঁড়াতে সদস‌্যদের বিনা সু‌দে ঋণ সু‌বিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা আইনজীবী স‌মি‌তি। সিদ্ধান্ত অনুসারে সদস্যদের কাছে ই-মেইলে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। আবেদন পাঠানোর শেষ দিন ২০ এপ্রিল পর‌্যন্ত ৭ হাজার ৫১১ জন আইনজীবী ঋণ সুবিধা চেয়ে দরখাস্ত করেন। এসব আবেদনপত্রের ব্যাপারে (বৃহস্পতিবার) ২৩ এপ্রিল কার্যনির্বাহী ক‌মি‌টির সভা হ‌বে।  

অন্যদিকে সদস্যদের ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিও। এ জন্য সরাসরি বা ই-মেইলের মাধ্যমে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে আবেদন জমা দিতে হবে।  

আদালতপাড়ার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে আইনজীবী কুমার দেবুল দে জানান, শেষ কোর্ট খোলা ছিল ১২ মার্চ। পরে শুরু হয় অবকাশকালীন ছুটি। এ ছুটি শেষে ২৯ মার্চ কোর্ট কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে করোনা ভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। সাধারণ ছুটি আরও বাড়ানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে কবে যে এ অবস্থার শেষ হবে কেউ জানে না।

এ অবস্থায় আইনজীবীরা আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন উল্লেখ করে কুমার দেবুল বলেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা রয়েছেন। তাদের সঙ্গে রয়েছেন অনেক নবীন আইনজীবী। নবীন আইনজীবীদের জ্যেষ্ঠরা টাকা পয়সা দেন। আবার অনেকে পরিবর থেকে টাকা নিয়েও চলেন। কিন্তু আমরা যারা মাঝামাঝি অবস্থানে তাদের যে কী অবস্থা তা বলার মতো নয়। আমরা না জ্যেষ্ঠ, না নবীন। বছরে ছয় মাস আয় করে বাকি ছয় মাস চলি। কিন্তু এখন কী হবে। ১২ মার্চের পর থেকে কোর্ট বন্ধ। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে বৈশ্বিক সমস্যা। অনেকে বলছেন সরকারি প্রণোদনার কথা। সরকার কত দিকে দেবে? যারা একেবারে খেতে পারছেন না, আগে তো তাদের দিতে হবে। তারপরও দেখছি বার অ্যাসোসিয়েশন ঋণ দেওয়ার কথ বলছে। দেখা যাক কী হয়।    
 
আইনজীবী মো. জে আর খাঁন রবিন বলেন, সরকার আইনজীবীদের মাধ্যমে অনেক টাকা রেভিনিউ পায়। আমাদের তো ফিক্সড ইনকাম না। এখন কোর্ট বন্ধ থাকায় অনেকে সমস্যায় পড়েছেন। চাপা কষ্টে আছেন। বলতেও পারছেন না। এক্ষেত্রে সরকারের একটু নজর দেওয়া উচিত।   

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, আইন পেশায় ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ নিয়োজিত। এর মধ্যে বিশাল একটি অংশ জুনিয়র। সাধারণত সিনিয়র আইনজীবীদের প্রতিদিনের দেওয়া অর্থই তাদের একমাত্র অবলম্বন। আদালত বন্ধ থাকায় তারা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জুনিয়রশিপ শেষ করে যারা নিজস্ব প্র্যাকটিস শুরু করেন তাদের শুরুর কয়েক বছর সামান্য আয়ের ওপরই চলতে হয়। কোর্ট বন্ধ থাকায় তারাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে বিভিন্ন বারে প্র্যাকটিস করা আইনজীবীদের একটি বড় অংশকে প্রতিদিন ইনকাম করে চলতে হয়। কিন্তু কোর্ট বন্ধ থাকার কারণে তাদেরও অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এ কারণে আমরা সরকারের কাছে আইনজীবীদের জন্য ৩০০ কোটি টাকার প্রণোদনা চেয়েছিলাম।

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২০
ইএস/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।