ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

কোন প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ হচ্ছে জামায়াত?

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২৪
কোন প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ হচ্ছে জামায়াত?

ঢাকা: প্রতিষ্ঠার প্রায় ৮৪ বছরে পাকিস্তানে দুই বার নিষিদ্ধ হওয়া জামায়াতে ইসলামী এবার দ্বিতীয় বারের মতো বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে। নির্বাহী আদেশে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী দলটিকে নিষিদ্ধ করার কথা বলছে সরকার।

তবে সেটি কি সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ নাকি অন্য কোনো আইনের সূত্র ধরে তা এখনো স্পষ্ট নয়। গত দুই দশকে সরকার চরমপন্থা অবলম্বন তথা জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকটি দলকে নিষিদ্ধ করছে। বিবিসি বাংলার তথ্য অনুসারে, দেশে প্রথমবারের মতো সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে ১৯৭২ সালে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।

নিষিদ্ধের শুরু যেখানে

বিভিন্ন  তথ্য অনুসারে, উপমহাদেশে দেশভাগের আগে ১৯৪১ সালে দলটি প্রতিষ্ঠা করে সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী। ১৯৫৯ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় উসকানির অভিযোগে প্রথমবার পাকিস্তানে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান প্রণীত মুসলিম পরিবার আইনের বিরোধিতার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ড আবারো নিষিদ্ধ হয়। তবে পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।

বাংলাদেশে নিষিদ্ধ

বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে নিষিদ্ধ করা হয়। পরবর্তীতে সংবিধানের ওই ধারা বাতিলের পর ফের রাজনীতিতে আসে জামায়াত। আর তখন থেকে জামায়াতের বিরোধিতা করে আসছিলো সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবীরা। এর মধ্যে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। তখন দল হিসেবে জামায়াতের বিচারেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু আইন সংশোধনের কথা উঠলে তা থেমে যায়। অন্যদিকে এক রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ২০১৩ সালে দলটির নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। এর বিরুদ্ধে আপিলের পর ২০২৩ সালে আপিল বিভাগ তাদের আবেদন খারিজ (ডিসমিস ফর ডিফল্ট) করে দেন।

নতুন করে আলোচনা

সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতা পর দলটিকে নিষিদ্ধ করতে ঐক্যমতে পৌঁছায় ক্ষমতাসীন জোট ১৪দল। এরপরই বিষয়টি ফের আলোচনায় উঠে আসে।  মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশনা দিয়েছেন আগামীকালকের (বুধবার) মধ্যে একটি ব্যবস্থা নিতে। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে বসব এবং সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। কোন আইনি প্রক্রিয়ায় হবে, তা যখন আমরা সিদ্ধান্ত নেব তখন বলব।  

বুধবারের মধ্যে কি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ইনশাআল্লাহ। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে মন্ত্রী আরও বলেন, কোনো দলকে যখন নিষিদ্ধ করা হয়, তখন তা নির্বাহী আদেশেই হয়, বিচার বিভাগীয় আদেশে হয় না। যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার এক কথা এবং জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা আরেক কথা।

পরে বৈঠকের পর জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা আইনমন্ত্রী বলেছেন, এটা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সংবিধানে কী আছে

সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবেঃ তবে শর্ত থাকে যে, কোন ব্যক্তির উক্তরূপ সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার কিংবা উহার সদস্য হইবার অধিকার থাকিবে না, যদি-(ক) উহা নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (খ) উহা ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ, জন্মস্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (গ) উহা রাষ্ট্র বা নাগরিকদের বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোন দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বা জঙ্গী কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; বা (ঘ) উহার গঠন ও উদ্দেশ্য এই সংবিধানের পরিপন্থী হয়।

সন্ত্রাস বিরোধী আইনে কী আছে

সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ১৮ ধারায় বলা হয়েছে, (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, কোন ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত রহিয়াছে মর্মে যুক্তিসঙ্গত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে। (২) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে কোন ব্যক্তি বা সত্তাকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে বা তফসিল হইতে বাদ দিতে পারিবে অথবা অন্য কোনভাবে তফসিল সংশোধন করিতে পারিবে।

বিশেষ ক্ষমতা আইনে কী আছে

১৯৭৪ সালে প্রণীত বিশেষ ক্ষমতা আইনেও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার সুযোগ রয়েছে। এই আইনের ২০ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে ধর্মভিত্তিক বা ধর্মের নামে গঠিত কোনো সাম্প্রদায়িক বা অন্য কোনো সংঘ বা ইউনিয়ন গঠন করিতে বা উহার সদস্য হইতে বা অন্য কোনোভাবে উহার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করিতে পারিবে না। সেক্ষেত্রে শুনানির পর সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা সংশ্লিষ্ট সংঘ বা  ইউনিয়ন অবিলম্বে বিলুপ্ত হইবে।

 

বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা,জুলাই ৩১,২০২৪
ইএস/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।