ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

যে ৪টি গোনাহ সমাজকে ধ্বংস করে দেয়

মাওলানা আবদুল জাব্বার, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৬
যে ৪টি গোনাহ সমাজকে ধ্বংস করে দেয় ছবি: সংগৃহীত

৪টি গোনাহ সমাজকে ধ্বংস করে দেয়। তাই এসব গোনাহ থেকে সমাজকে মুক্ত রাখতে হবে।

সমাজকে গোনাহ মুক্ত রাখার অর্থ হলো- নিজে এসবে না জড়ানো এবং নিজ পরিবারকে এগুলো থেকে দূরে রাখা। সমাজ ধ্বংসকারী ৪টি গোনাহ হলো-

এক. আমানতের খেয়ানত। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে আমানত রক্ষার ব্যাপারে স্বচ্ছ না, সে মুমিন নয়। ’ অন্য হাদিসে আল্লাহর নবী (সা.) বলেছেন, ‘আমানতের খেয়ানতকারী ইসলামচ্যুত গণ্য হবে। ’ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমানত লঙ্ঘনকারীকে মুনাফিক বলে সাব্যস্ত করেছেন। কোনো লোক নেক আমল করা সত্ত্বেও আমানতের খেয়ানতের কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না।

দুই. চুরি। চুরি করা বড় অন্যায়। ইসলাম চুরি করাকে হারাম বলেছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না। -সূরা বাকারা: ১৮৭

মানুষ যখন চুরির মতো জঘন্য অপরাধে লিপ্ত হয়, তখন তার ঈমান থাকে না। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ব্যভিচারী যখন ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন সে মুমিন থাকে না এবং চোর যখন চুরি করে তখন সেও মুমিন থাকে না। ’

তিন. মদ্যপান। মানুষের জীবনকে সুস্থ, সুন্দর এবং স্বাভাবিকভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে যে কয়টি বস্তু বাধা সৃষ্টি করে কিংবা জীবনকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়- তন্মধ্যে মাদকদ্রব্য অন্যতম। হজরত ওমর (রা.) বলেন, ‘মদ হচ্ছে তাই, যা মানুষের বিবেক বা বোধশক্তিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। ’ –সহিহ বোখারি

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘শয়তান তো চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বিরত রাখতে৷ তাহলে তোমরা কি এসব থেকে বিরত থাকবে না?’ -সূরা আল মায়িদা: ৯১

এ আয়াত থেকে সুস্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, মদ ও মদ্যপানকারীর আচরণের কুপ্রভাবে সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক ধরনের বৈরিতা সৃষ্টি করে। যার ফলে পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা, কলহ-বিবাদ ও হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। ইসলামে মদ্যপান কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

চার. ব্যভিচার বা অবাধ যৌনাচার। ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যভিচার হলো- চারিত্রিক অধঃপতন, অনৈতিকতা, নোংরামি ও অশ্লীলতার শেষ ধাপ। ইসলাম এ কাজকে ঘৃণা করে তা থেকে দূরে থাকার জন্য কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। অনেকেই নর-নারী সম্মতিতে স্থাপিত যৌন সম্পর্ককে পাপ মনে করে না। শুধু ধর্ষণকে অপরাধ মনে করে। এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা। মহান আল্লাহ বিয়ে বহির্ভূত সব ধরনের যৌন সম্পর্ককে হারাম করেছেন। ধর্ষণ যেমন অপরাধ, ব্যাভিচারও তেমনি গর্হিত দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রকৃত মুমিন হতে হলে, জান্নাতে প্রবেশ করতে হলে ব্যভিচার থেকে পবিত্র হতে হবে।

হজরত আনাস (রা.) বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ঈমান একটি উত্তম পোশাক, যা আল্লাহ তাকে ইচ্ছা করেন তাকেই পরিধান করান। আর কোনো বান্দা যখন ব্যভিচার করে তখন তার কাছ থেকে তিনি ঈমানের পোশাক খুলে নেন। এরপর তওবা করলে তাকে পুনরায় এ পোশাক ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ’ –তিরমিজি ও আবু দাউদ

অন্য আরেক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মুসলমানগণ ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ করো। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। মন্দ পরিণতি এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে। যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে, তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে, তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে। আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে, সে আল্লাহর অসন্তোষ, কঠিন হিসাব ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। ’ –বায়হাকি

বর্ণিত পাপসমূহ থেকে রক্ষার জন্য আমাদের সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ প্রদান করতে হবে। প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব হচ্ছে, শরিয়তের বিধি-বিধান যথাযথভাবে মেনে চলা।

আমরা যদি একটু গবেষণা করি তাহলে এটা সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, বর্তমান পৃথিবীতে যত অশান্তি ও ফিতনা-ফ্যাসাদ রয়েছে, সেগুলোর মূলে একমাত্র কারণ হচ্ছে ইসলামি শরিয়তের বিধানাবলী অমান্য করা। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৩১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।