ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ `গ্রেফতার'

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০১৮
ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ `গ্রেফতার' মাহমুদ আহমাদিনেজাদ

‘সহিংসতায় উস্কানি’ দেওয়ার অভিযোগে ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বর্তমান শাসক গোষ্ঠী ও নেতৃত্বের কড়া সমালোচক মনে করা হয় দেশটির পশ্চিমাবিরোধী সাবেক এ প্রেসিডেন্টকে।

লন্ডনভিত্তিক সংবাদপত্র আল কুদস আল আরাবির বরাত দিয়ে  রোববার (৭ জানুয়ারি) তাকে গ্রেফতারের খবরটি দিয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। গত ২৮ ডিসেম্বর পশ্চিমাঞ্চলীয় বুশেহর শহরে একটি সমাবেশে ‘সংস্কারপন্থি’ সরকারের বিরুদ্ধে তীর্যক বক্তব্য দিয়েছিলেন ‘কট্টর জাতীয়তাবাদী’ আহমাদিনেজাদ।

ধারণা করা হচ্ছে, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অনুমতি নিয়ে তাকে আপাতত গৃহবন্দি করে রাখা হবে।

ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড রোববার ‘সব প্রতিবাদ–বিক্ষোভ শেষ হয়ে গেছে’ বলে ঘোষণা দেবার পরপরই ২০০৫ ও ২০১৩ সালে দায়িত্ব পালনকারী ৬১ বছর বয়সী এই সাবেক প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার করা হয়।    

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব এবং বিলাসিতাহীন সাদাসিধে জীবনযাপনের জন্য সাধারণ ইরানিদের কাছে জনপ্রিয় আহমাদিনেজাদ ।

দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন উধ্বগতি এবং  ক্ষমতাসীন ও এলিট শ্রেণীর লাগামহীন দুর্নীতির প্রতিবাদে ২৮ ডিসেম্বর বুশেহর শহর থেকে শুরু হয়ে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে সংহতি প্রকাশ করেন আহমাদিনেজাদ।

জনতার কাতারে নেমে তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিসহ ক্ষমতাসীন নেতাদের সমালোচনা করে বলেন, ‘‘ বর্তমান নেতাদের কেউ কেউ সাধারণ মানুষের সমস্যা ও দু:খদুর্দশা থেকে অনেক দূরে সরে গেছেন। এরা সমাজে চলমান বাস্তবতা সম্বন্ধে মোটেই ওয়াকিবহাল নয়। ’’

আল কুদস আল আরাবির রিপোর্টে আরও জানানো হয়, আহমাদিনেজাদ দেশ পরিচালনায় সরকারের বিরুদ্ধে চরম অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার অভিযোগ আনেন।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিকে সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘দেখে শুনে মনে হচ্ছে তারাই দেশের মালিক বা কর্তাকর্তা। আর দেশের বাদবাকি জনগণ গণ্ডমূর্খ ও বেকুবের দল। ’

২৮ ডিসেম্বরের প্রতিবাদ বিক্ষোভটি আকাশচুম্বী দ্রব্যমূল্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুরু হলেও পরে তা প্রেসিডেন্ট রুহানি ও ক্ষমতাধর ধর্মীয় নেতাদের ক্ষমতা ছাড়ার দাবির আন্দোলনে রূপ নেয়। অবস্থা এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়। দেশজুড়ে শুরু হয় সংঘর্ষ-ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ব্যাপক তাণ্ডব।

সরকারের ধারণা, সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদের উস্কানি এসবে বড় ভূমিকা পালন করেছে। তাছাড়া এর পেছনে আমেরিকা, ইসরাইল ও সৌদি আরবসহ বিদেশি শক্তিগুলোর যোগসাজশ রয়েছে বলেও অভিযোগ করছে ইরানের বর্তমান প্রশাসন।

২০০৯ সালের পর এমন বড় সহিংসতা-সংঘর্ষের ঘটনা আর ঘটেনি ইরানে। এসব সহিংসতায় অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছে বলে সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হলেও সরকারবিরোধীরা বলছে, নিহত মানুষের সংখ্যা ৫০ জনের কাছাকাছি। আহত ও জখম হয়েছে বহু মানুষ। এ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে। এখনো ধরপাকড় অব্যাহত আছে।
প্রসঙ্গত, কট্টর জাতীযতাবাদী বলে পরিচিত আহমাদিনেজাদ চরম ইহুদিবিদ্বেষী এবং মার্কিনবিরোধী বলেও পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জার্মানির যুদ্ধবাজ নেতা এডলফ হের হিটলারের লক্ষ লক্ষ ইহুদি নিধনযজ্ঞকে ‘নিছক গালগল্প’ বলে উড়িয়ে দেন তিনি। তার ইসরায়েল-বিদ্বেষের কারণেও সাধারণ ইরানিদের কাছে তিনি সদা প্রশংসিত এক নেতা। প্রথমবার ক্ষমতায় যাবার পর তিনি বলেছিলেন, ইসরায়েলকে ধ্বংস করে দেয়া উচিত।
আর মার্কিন নেতাদের ব্যঙ্গ করে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমাদের দেশ ইরানে তোমাদের দেশের মতো সমকামীদের কোনো স্থান নেই। ’’
বাংলাদেশ সময়: ১২১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৮/আপডেট ১৩৩৩ ঘণ্টা
এইচএ/জেএম​

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।