ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

সৌদি রাজপরিবারে ফের অস্থিরতা, ১১ রাজকুমার গ্রেপ্তার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৮
সৌদি রাজপরিবারে ফের অস্থিরতা, ১১ রাজকুমার গ্রেপ্তার পিতার সঙ্গে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান

ঢাকা: সৌদি রাজপরিবারে নতুন করে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা ও অসন্তোষ। ৩২ বছর বয়সী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের অনুসৃত ব্যয় সংকোচন নীতির প্রতিবাদে রাজপ্রাসাদে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করায় ১১ রাজকুমারকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, মোহাম্মদ বিন সালমান ব্যাপক ব্যয় সংকোচন নীতির আওতায় রাজপরিবারের সদস্যদের ইউটিলিটি বিল বন্ধ করে দিয়ে ডিক্রি জারি করেছেন। গ্রেপ্তারকৃত এই ১১ রাজকুমার বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) ক্বাসর-আল–হোকম প্রাসাদে জমায়েত হয়ে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।

কর্তৃপক্ষের নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যেতে থাকেন।

রাজপরিবারের সদস্যদের পানি, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন সেবাখাতের বিল পরিশোধ বন্ধ করে দিয়ে যুবরাজ সালমান সম্প্রতি যে ডিক্রি জারি করেছেন, এরা তার প্রতিবাদ করেন। পাশাপাশি তারা ২০১৬ সালে তাদের চাচাত ভাই প্রিন্স তুরকি বিন আউদ আল-আকবররের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনারও প্রতিবাদ জানান। এজন্য তারা মোহাম্মদ বিন সালমানের কাছে প্রিন্স তুরকি কবিরের মৃত্যুর উপযুক্ত ক্ষতিপূরণও দাবি করেন। পরে প্রতিবাদকারী এই ১১ রাজকুমারকে রিয়াদের বিলাসবহুল রিজ কার্লটন হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মুক্ত হতে চাইলে এই ১১ জনকে সরকারের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতায় আসতে হবে। এরই মধ্যে তাদের সব সহায়সম্পদ ও নগদ অর্থকড়ি সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বছর কয় আগে বিশ্ববাজারে তেলের দাম অস্বাভাবিক পড়ে যাওয়ার প্রভাবে বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক দেশটির অর্থনীতি বড় ধরনের সংকটে পড়ে যায়। এ সময় প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পাশাপাশি দেশজুড়ে ব্যাপক ব্যয়সংকোচন নীতি ঘোষণা করেন। এর আওতায় জ্বালানি খরচ ও বিভিন্ন খাতে ভর্তুকিসহ রাজ পরিবারের সদস্যদের বিলাসী জীবনযাপনের নানা সুযোগ সুবিধাও একে একে বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর্থিক দুনীতির দায়ে অনেককে কারাগারে পাঠানো হয়। এমন পদক্ষেপ সত্ত্বেও ২০১৮ সালে দেশটির অনুমিত বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে ৫২ বিলিয়ন ডলার।

যুবরাজ সালমানের প্রশাসনের বিরুদ্ধে ১১ রাজকুমারের বৃহস্পতিবারের এই জমায়েতকে রীতিমতো বিদ্রোহ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।  

সরকারি কৌঁসুলির দপ্তর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে একে বেআইনি কাজ বলে উল্লেখ করে বলা হয়, ‘তাদের এহেন কাজ বেআইনি বলে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বারবার জানানোর পরও তারা সেখান থেকে চলে না গিয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকে। পরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আইন অমান্যকারী ১১ রাজককুমারকে আটক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

গ্রেপ্তার করার পর তাদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মুহূর্তে তাদেরকে রাজধানী রিয়াদের দক্ষিণের আল হাইয়ার কারাগারে অন্তরীণ রাখা হয়েছে। শিগগিরই তাদের বিচার শুরু হবে।

গ্রেপ্তারকৃদের নাম জানানো হয়নি। তবে একটি নিউজ ওয়েবসাইট এই প্রতিবাদ বিক্ষোভে নেতৃত্বদানকারীকে শনাক্ত করেছে। বলা হয়েছে তার নামের শুরুতে ইংরেজি ‘এসএএস’ আছে।

পশ্চিমা বিশ্লেষকরা বলছেন, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান একের পর এক কঠিন ও বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত নিয়ে সৌদি রাজ পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যের স্বার্থহানি করে তাদের ক্ষেপিয়ে তুলছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি নিজের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি ও বিপদ তৈরি করছেন। বাইরে থেকে সব কিছু স্বাভাবিক দেখালেও ভেতরে ভেতরে ক্ষোভের বাষ্প জমা হচ্ছে, যা অনুকূল মুহূর্তে ব্যাপক বিস্ফোরণের রূপ নিতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, সৌদি আরবে এ মুহূর্তে এক ‘স্লো মোশন’ ক্যু চলছে।

বাংলাদেশ সময়:১২৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৮
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।