ঢাকা, বুধবার, ২৬ চৈত্র ১৪৩১, ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০ শাওয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ফিরে দেখা-২০১৪

শিশু হত্যায় কাঁদছে পাকিস্তান, বর্ণবাদে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্র

হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৪
শিশু হত্যায় কাঁদছে পাকিস্তান, বর্ণবাদে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্র

ঢাকা: বছরের সূর্য ডুবি ডুবি। ২০১৪ সালের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, আশা-হতাশার খাতা নিয়ে হিসাব কষা চলছে এখন।

অপ্রাপ্তির দুঃখের সঙ্গে যেমন আছে প্রাপ্তির সুখ, তেমনি হতাশার আঁধারের সঙ্গে আছে আশার আলোও। প্রাপ্তি আর আশার গল্পই প্রত্যাশিত হলেও হিসাবের খাতায় পড়ে রয়েছে বছরের শ’ কয়েক সন্ত্রাসী হামলায় হতাহতদের রক্তের ছাপ। কেবলই হিসাবের খাতিরে দুঃসহ ঘটনাগুলো স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে বাংলানিউজ।

pic_1

pic_1


* ১ মার্চ চীনের ইতিহাসের সবচেয়ে বীভৎস সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে সেদিন। কুনমিংয়ের একটি রেলওয়ে স্টেশনে অপেক্ষমান যাত্রীদের ওপর হঠাৎ চড়াও হয় সন্দেহভাজন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। ছুরি ও এ ধরনের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সন্ত্রাসীরা ২৮ বেসামরিক লোককে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হয় শতাধিক লোক। পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় পাঁচ হামলাকারীও। এ ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে। রেলওয়ে স্টেশনের মতো জনসমাগমে হামলা চালিয়ে কেবল ছুরিকাঘাত করেই আড়াই ডজন লোককে হত্যার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ঘটনার জন্য উইঘুরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভিযুক্ত করা হলেও ঘটনার হোতারা বছরান্তেও আড়ালে রয়ে গেছে।

pic_2

pic_2


* ১৫ মার্চ নাইজেরিয়ার মাইদুগুরি এলাকায় ঘটে সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক আত্মঘাতী হামলার ঘটনা। দেশটির সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বোকো হারামের অন্তত ২০০ সদস্য সেদিন সহযোগীদের কারামুক্ত করতে মাইদুগুরির একটি এলাকায় আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়। এতে সেই দুইশ’ জঙ্গি, ৫ সেনাসহ নিহত হয় ২১২ জন। বিচ্ছিন্নতাবাদী বোকো হারামের ওই হামলা ব্যর্থ হলেও সেনাবাহিনীর পোশাক পরে সেনাবাহিনীর গাড়ির রঙে রাঙানো গাড়িতে চড়ে হামলার ঘটনা সবাইকে বিস্মিত করে।

pic_3

pic_3


* ১৮ এপ্রিল দক্ষিণ সুদানের বোর অঞ্চলে জাতিসংঘের একটি শরণার্থী শিবিরে চলে ইতিহাসের অন্যতম জঘণ্য হত্যাকাণ্ড। তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া নিরীহ লোকজনের ওপর হামলা চালিয়ে ৫৮ জনকে হত্যা করে দেশটির সরকারসমর্থক মিলিশিয়া বাহিনী। এই হামলায় আহত ও পঙ্গু হয় কয়েকশ’ নিরীহ বেসামরিক লোক। সরকার ও বিরোধীদের সংঘর্ষের জেরে জাতিসংঘের শরণার্থী শিবিরে হামলার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে।
pic_4

pic_4


* পহেলা মে থেকে তেষরা মে। বিচ্ছিন্নতাবাদী ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বোড়োল্যান্ড (বোড়ো) গোষ্ঠীর হামলায় অনেকটা যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে রূপ নেয় ভারতের আসামের কোকরাঝাড় ও বাকসা জেলার বেশ কিছু এলাকা। জেলা দু’টির কয়েকটি গ্রামে এই তিন দিনে বোড়ো জঙ্গিদের দফায় দফায় হামলায় অন্তত ৩৫ জন নিহত ও শতাধিক লোক আহত হয়। কেবল লোকজনই হত্যা করেনি, বোড়ো জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে শতাধিক বাড়িঘর ভস্মিভূত করে দেয়। মাওবাদী ও নকশাল গোষ্ঠীর পর বোড়ো জঙ্গিদের তৎপরতায় প্রথমবারের মতো ব্যতিব্যস্ত হতে হয় ভারত সরকারকে।

pic_5

pic_5


* অপেক্ষাকৃত শান্তশিষ্ট যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ অশান্ত হয়ে ওঠে ৮ জুন। সেদিন দেশটির নেভাদা অঙ্গরাজ্যের লাস ভেগাসে দুপুরের খাবার গ্রহণরত দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে একেবারে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে দুই সন্ত্রাসী। তারপর তারা নিকটস্থ একটি ওয়ালমার্টের আউটলেটে হামলা চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মীকেও হত্যা করে। তবে পুলিশের বিশেষ দল ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই দুই হামলাকারীও রহস্যজনকভাবে আত্মহত্যা করে। ওই ঘটনার জন্য দুই হামলাকারীর মানসিক বিকারগ্রস্ততাকে দায়ী করা হলেও সত্য এখনও আড়ালে রয়ে গেছে।
pic_6

pic_6


* নাইজেরিয়ার সন্ত্রাসী সংগঠন বোকো হারাম বরাবরই বেসামরিক লোকদের নির্বিচারে হত্যার জন্য বিশ্বব্যাপী নিন্দিত। তবে ২১ জুন সবচেয়ে ঘৃণিত কাণ্ড ঘটায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি। দেশটির বোর্নো অঙ্গরাজ্যের চিবক শহরের কাছে একটি স্কুলে হামলা চালিয়ে তিন শতাধিক ছাত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তারা। স্কুলছাত্রীদের মুক্তি দিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি অনেক তারকা ব্যক্তির আহ্বানেও সাড়া দেয়নি বোকো হারাম। শেষ পর্যন্ত তারা ওই ছাত্রীদের ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করে ফেলে। দীর্ঘসূত্রিতায় পড়ে স্কুলছাত্রীদের জিম্মিদশার ঘটনাটি আড়ালে পড়ে গেছে।

pic_7_

pic_7_


* যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। কিন্তু ২৩ নভেম্বরের হামলা ছিল নারকীয়। সেদিন দেশটির ইয়াহইয়াখের জেলার একটি স্টেডিয়ামে ভলিবল ম্যাচ চলাকালে ক্রীড়ামোদীদের লক্ষ্য করে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ৬১ ক্রীড়াপ্রেমী নিহত হয়। আহত হয় কয়েকশ’ লোক। হতাহতদের বেশিরভাগই ছিল শিশু। ন্যাক্কারজনক এ হামলার দায় স্বীকার করে হাক্কানী নেটওয়ার্ক।
pic_8_

pic_8_


* প্রশান্ত মহাসাগর বুকের শান্তশিষ্ট দেশ অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ১৫ ডিসেম্বর এক বন্দুকধারীর পদভারে কেঁপে ওঠে পুরো দেশটি। সেদিন সকালে দেশটির সিডনি শহরের বাণিজ্যিক এলাকার একটি কফিশফে হামলা চালিয়ে প্রায় ৪০ জনকে জিম্মি করে রাখে ওই বন্দুকধারী। প্রায় ১৬ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার পর নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে জিম্মি সংকটের অবসান ঘটে। সব জিম্মিকে নিরাপদে ক্যাফে থেকে বের করে আনার দাবি করা হলেও পরে জানা যায় দু’জন জিম্মি অভিযানে নিহত হন। এছাড়া, নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন হামলাকারীও। হামলাকারী ইরানি বংশোদ্ভূত এবং তার নাম ম্যান হারোন মনিস বলে নিশ্চিত হয় নিরাপত্তা বাহিনী। ১৫ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে জিম্মি সংকটের ঘটনায় আলোড়িত হয় বিশ্ব গণমাধ্যমগুলো।
pic_9

pic_9


* কেবল পাকিস্তান নয়, বিশ্বের ইতিহাসের জঘণ্যতম শিশু হত্যার ঘটনা ঘটে গত ১৬ ডিসেম্বর। সেদিন সকালের শান্ত পেশোয়ার পরিণত হয় নিষ্পাপ শিশুর রক্ত অববাহিকায়। সেখানকার সামরিক বাহিনী পরিচালিত একটি স্কুলে হামলা চালিয়ে ১৩২ শিশুসহ অন্তত ১৪১ জনকে হত্যা করে তালেবান জঙ্গিরা। তালেবানদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযানের পাল্টা জবাবে এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় বলে দাবি করা হয়। পুরো বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেওয়া এ ঘটনায় অভিযুক্ত তালেবানদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে পাক সরকার।
pic_10pic_10

pic_10pic_10


* আগস্টে মিসৌরির ফার্গুসনে পুলিশের গুলিতে নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর মাইকেল ব্রাউন নিহত হওয়ার ঘটনায় কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী বিক্ষোভ চলার মধ্যে গত ২০ ডিসেম্বর বিকেলে নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে আত্মঘাতী বন্দুকধারীর গুলিতে দুই শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। ব্রুকলিনের বেডফোর্ড-স্টাইভেসেন্ট সড়কে চৌকি বসিয়ে যানবাহনে পুলিশি তল্লাশি চলাকালে এ হামলা চালানো হয়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কৃষ্ণাঙ্গ ব্রাউন হত্যার জের ধরে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের ওপর এই প্রতিশোধমূলক হামলা চালানো হয়েছে। তবে, এরই মধ্যে ২৪ ডিসেম্বর ফার্গুসনেরই একটি এলাকায় পুলিশের গুলিতে অ্যানটোনিও মার্টিন নামে আরেক কৃষ্ণাঙ্গ নিহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
pic_11

pic_11


এছাড়া, ২৬ জানুয়ারি নাইজেরিয়ার বোর্নোয় বোকো হারামের হামলায় ৮৫ জন নিহত ও শতাধিক আহত, ১৫ ফেব্রুয়ারি একই দেশের ইজে এলাকায় একই জঙ্গি গোষ্ঠীর হামলায় ১০৫ জন নিহত ও কয়েকশ’ আহত, ৮ জুন করাচির জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জঙ্গি হামলায় ২৪ জন নিহত ও অর্ধশত আহত, ২০ মে নাইজেরিয়ার জোস শহর হাসপাতাল ও মার্কেট সংলগ্ন এলাকায় দু’টি শক্তিশালী বোমা হামলায় ১১৮ জন নিহত ও কয়েকশ’ লোক আহত, ২ নভেম্বর ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের ওয়াগায় দু’দেশের মধ্য সীমান্তরক্ষীদের পতাকা নামানোর ঐতিহ্যবাহী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অর্ধশত নিহত এবং সবশেষে আসামে বোড়ো জঙ্গি গোষ্ঠীর হামলায় ৮০ জনেরও বেশি আদিবাসী নিহত হওয়ার ঘটনা বিশ্ব গণমাধ্যমকে আলোড়িত করে।

হিসাবের খাতা যতোই উল্টোনো হোক, তাতে প্রাণহানি বা অঙ্গহানির কোনো খবর না থাকুক-এটাই চাওয়া সবার। সবার এ প্রত্যাশা অনুযায়ী, ২০১৫ সাল কাটুক কোনো ধরনের দুঃসংবাদ-দুর্ঘটনা ছাড়া।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।