ভারতের সুপ্রিম কোর্টে ওয়াকফ (সংশোধিত) আইন ২০২৫-এর সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করা ১১টি আবেদনের শুনানি হবে বুধবার (১৬ এপ্রিল)।
ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ শুনানি শুনবেন।
খবরে বলা হয়েছে, আদালতে এ আইনটির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি আবেদন জমা পড়েছে। যার মধ্যে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (এআইএমপিএলবি) ও জমিয়তে উলেমা-ই-হিন্দের আবেদন রয়েছে। এ ছাড়া ডিএমকে, আইইউএমএল, এআইএমআইএম, কংগ্রেস এবং অন্যান্য রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠন অংশ নিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এই শুনানির মাধ্যমে আইনের বৈধতা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
এর আগে সম্প্রতি হওয়া ওয়াকফ (সংশোধন) আইন, ২০২৫ এর কিছু ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জকারী আবেদন শুনানির জন্য বিবেচনায় সম্মতি দেন সুপ্রিম কোর্ট।
অ্যাডভোকেট বিষ্ণু শঙ্কর জৈনের উপস্থাপিত এক আবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, আইনটির কিছু ধারা সংবিধানের বিভিন্ন অধিকার লঙ্ঘন করে এবং সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
হরি শঙ্কর জৈন ও মনি মুনজালের পক্ষে দায়ের হওয়া আবেদনে ভারত সরকারের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলকে বিবাদী করা হয়েছে। আবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইন সংশোধিত এই প্রভিশনস সংবিধানের ১৪, ১৫, ২১, ২৫, ২৬, ২৭ এবং ৩০০এ ধারার লঙ্ঘন করছে।
আবেদনে আদালতের কাছে দাবি করা হয়, অমুসলিমদের ওয়াকফ আইনের আওতা থেকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত এবং সরকারকে ওয়াকফের অধীনে রেকর্ড করা পাবলিক জমি পুনরুদ্ধার করতে হবে।
১৯৪৭ সালের বিভাজনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে আবেদনে বলা হয়েছে, যেসব সম্পত্তি মুসলিমরা পাকিস্তানে চলে যাওয়ার কারণে উদ্বাস্তু সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলোকে ওয়াকফ বোর্ডের দ্বারা ধর্মীয় স্থল হিসেবে পরিচালনা করা উচিত নয়।
প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমার মঙ্গলবার পিটিশনটি গ্রহণের পর মন্তব্য করেন, সাধারণত যেসব পিটিশন মেনশন স্লিপের মাধ্যমে দাখিল করা হয়, সেগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে শুনানির জন্য তারিখ পায়। বিষ্ণু শঙ্কর জৈনের আবেদনের সঙ্গে আরও ১০টি আবেদন রয়েছে, যেখানে অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েইসিও যুক্ত।
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু গত ৫ এপ্রিল ওয়াকফ আইন ২০২৫-এর অনুমোদন দেন। গত ৮ এপ্রিল থেকে এটি কার্যকর হয়। এই সংশোধনী আইনে ওয়াকফ বোর্ডের কার্যক্রমের ওপর গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে।
ওয়াকফ বোর্ডে মুসলিম সদস্যদের পাশাপাশি অমুসলিম সদস্যদেরও অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া, নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণের জন্য নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আইনে, ওয়াকফ সম্পত্তির একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ তৈরি করার কথা বলা হয়েছে, যাতে সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তি সঠিকভাবে নিবন্ধিত থাকে। সরকারের দাবি, এতে সহজ হবে সম্পত্তির মালিকানা এবং ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা সমাধান।
আইনের মধ্যে একটি বিতর্কিত বিষয় হলো, এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় সরকারের অধিকারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। ফলে, ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ বাড়বে বলে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এই সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ, এই আইন মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করছে। তারা মনে করছেন, ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর সরকারের অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ মুসলিমদের ধর্মীয় অধিকার লঙ্ঘন করতে পারে।
বিশেষ করে, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড ও জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দেরমতে, আইনের কিছু ধারা মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও তাদের ধর্মীয় সম্পত্তির স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিতে পারে।
শুনানির পর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এই সংশোধনী আইনের বৈধতা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত মুসলিম সম্প্রদায় ও ভারতের রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
ওয়াকফ আইনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের জন্য মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে যথেষ্ট উত্তেজনা বিরাজ করছে। অনেকে মনে করছেন, এই আইন মুসলিমদের ধর্মীয় অধিকার ক্ষুণ্ন করতে পারে, তবে কিছু অংশ এই আইনকে প্রয়োজনীয় সংস্কার হিসেবে দেখছে, যা ওয়াকফ সম্পত্তির সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২৫
এমজে