ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

শিশু হত্যা

জাতিসংঘের ‘লজ্জার তালিকায়’ রাশিয়া থাকলেও নেই ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫২ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২৩
জাতিসংঘের ‘লজ্জার তালিকায়’ রাশিয়া থাকলেও নেই ইসরায়েল

ইউক্রেন যুদ্ধে শত শত শিশুকে হত্যা ও আহত করায় রাশিয়ার সামরিক এবং সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠীকে ‘লজ্জার তালিকায়’ রেখেছে জাতিসংঘ। তবে ৪০-এর বেশি ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা করা সত্ত্বেও ইসরায়েলকে এই তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যা ও পঙ্গুত্বের ঘটনায় ইসরায়েলকে জাতিসংঘের কালো তালিকায় যুক্ত করতে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার অনুরোধ করেছিল। তবে তা আমলে নেয়নি জাতিসংঘ।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর বৃহস্পতিবার মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের লজ্জা তালিকা থেকে ইসরায়েলকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে একটি ‘বড় ভুল’ বলে অভিহিত করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শিশুদের চিকিৎসার বিষয়ে জাতিসংঘের একটি বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনে গুতেরেস বলেছেন, ২০২২ সালে ‘ইউক্রেনে শিশুদের বিরুদ্ধে উচ্চ সংখ্যক গুরুতর লঙ্ঘনের কারণে তিনি আতঙ্কিত’।

প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি দেখেছে এমন সংবাদ সংস্থাগুলোর মতে, গত বছর ইউক্রেনে ৪৭৭ শিশুকে হত্যার তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। যার মধ্যে ১৩৬টি মৃত্যুর জন্য রাশিয়ান বাহিনী এবং সহযোগী গোষ্ঠীগুলো সরাসরি দায়ী।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীও ৮০টি শিশুকে হত্যার জন্য দায়ী।

দুইপক্ষের বেশিরভাগ শিশুই বিমান হামলায় নিহত হয়েছে বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, সামগ্রিভাবে যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৪৭৭টি শিশু নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা এর কয়েক গুণ। আহত শিশুদের অনেকেই এখনো হাসপাতালে ভর্তি। তারা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। ফলে মৃত শিশুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে জাতিসংঘের প্রধান বলেছেন যে, তিনি ২০২২ সালে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের সংখ্যা নিয়ে ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ৪২ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা ৯৩৩। এর আগের বছর (২০২১) ইসরায়েলি বাহিনী ৭৮ ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা করেছিল।

এরপরও শিশু হত্যার জন্য জাতিসংঘের ‘লজ্জার তালিকায়’ কখনোই ছিল না ইসরায়েল।

গুতেরেস বলেছেন যে, আগের তুলনায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় নিহত শিশুদের সংখ্যা কমেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রাশিয়ান বাহিনীকে তালিকায় রাখার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে ইসরায়েলকে লজ্জার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ায় জাতিসংঘ প্রধানের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে।

সংস্থাটি বলেছে, তিনি (গুতেরেস) ‘ফিলিস্তিনি শিশুদের অধিকার বাস্তবায়নে আবারও ব্যর্থ হয়েছেন’।

শিশুদের অধিকারের জন্য লড়াই করা একটি গ্রুপের ডিরেক্টর জো বেকার বলেছেন, তার (গুতেরেসের) এই অনাগ্রহ ইসরায়েলি বাহিনীকে ফিলিস্তিনি শিশুদের ওপর বেআইনি প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেছে।

এক টুইটে তিনি লিখেছেন, ২০১৫-২০২০ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘ ৬ হাজার ৭০০টিরও বেশি শিশু হত্যার জন্য ইসরায়েলি বাহিনীকে দায়ী করেছে। ২০২২ সালে আরও ৯৭৫টি যাচাই করা হয়েছে। তবুও গুতেরেস তার ‘লজ্জার তালিকা’ থেকে ইসরায়েলকে বাদ দিয়েছেন।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর বলেছেন, ইসরায়েলকে জাতিসংঘের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া ‘ফিলিস্তিনি জনগণ এবং ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক’।

প্রশ্ন তুলে মনসুর বলেন, মহাসচিব এই বর্তমান ইসরায়েলি সরকারকে তালিকাভুক্ত না করে একটি বড় ভুল করেছেন। তিনি যদি এখন এই সরকারকে তালিকাভুক্ত না করেন, তবে কবে করবেন?

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৮ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২৩
এমএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।