ঢাকা: অনেক চেষ্টার পর অবশেষে বিদ্যুৎ চমকানো এবং বজ্রপাতের মাধ্যমে উৎপন্ন শক্তির দৃশ্য প্রথম ক্যামেরাবন্দি করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
এর আগে যতবারই বিদ্যুৎ চমকানোর আলোকচিত্র তারা ধরতে চেষ্টা করেছেন, ততবারই তাদের ফাঁকি দিয়ে গেছে এই মহাশক্তিধর আলোকচ্ছটা।
লক্ষ-কোটি ভোল্টেজ ও পারমাণবিক শক্তিধর এই আলোকচ্ছটা মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরেই ছিল এতদিন। শেষমেষ মহাশক্তিধর এই আলোকচ্ছটার রূপকে ধরতে সক্ষম হয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী। সাউথওয়েস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের একদল বিজ্ঞানী বিদ্যুতের ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার দৃশ্য ধারণ করেছেন।
তারা জানাচ্ছেন, এতদিন বিদ্যুৎ চমকানোর দৃশ্য সম্পর্কে তারা যে ধারণা ও কল্পনা করতেন, তার সবকিছুকেই হার মানিয়েছে বজ্রপাতের এই আলোকচ্ছটা।
তারা বলছেন, অ্যাকোয়িস্টিক ওয়েভ ম্যাপের মাধ্যমে বিদ্যুতের আলোকচ্ছটার দৃশ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। এ জন্য তারা অতিশক্তিশালী মাইক্রোফোন ব্যবহার করেন এবং কৃত্রিমভাবে বিদ্যুৎ চমকানোর ব্যবস্থা করেন।
বিজ্ঞানীদের দলটি বলছেন, বজ্রপাত কীভাবে কাজ করে, তা বোঝার জন্য প্রথমে বিদ্যুৎ চমকানোর বিষয়টিও বুঝতে হবে। কারণ, বিদ্যুৎ মেঘের বাইরের, ভেতরের অণুকে বিদ্যুতায়িত করে। পরে তা ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ে।
এই বিদ্যুতায়ন বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে এবং সেই সঙ্গে নাটকীয়ভাবে তা বাড়তেই থাকে। এর ফলে বজ্রপাতের সৃষ্টি হয়।

undefined
বিজ্ঞানীরা কৃত্রিমভাবে বিদ্যুৎ চমকানো ও বজ্রপাত ঘটানোর আয়োজন করেন। এই পদ্ধতির প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তারা কেভলার মোড়ানো লম্বা তামার তার ব্যবহার করেন। এরপর তারকে বিদ্যুতায়িত মেঘের মধ্যে রাখা হয়।
কৃত্রিম বিদ্যুৎ চমকানোর আগে ১৫টি অতি-অনুভূতিশীল মাইক্রোফোন বজ্রপাতের কেন্দ্রস্থল থেকে ৯৫ মিটার দূরে রেখে দেওয়া হয়।
এরপর বিজ্ঞানীরা দেখেন, যখন বিদ্যুৎ প্রবাহের গতি বাড়ানো হলো, তখন বজ্রপাতের শব্দের পরিমাণও বেড়ে গেল।
এ ঘটনার পর বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিদ্যুতের প্রবাহ যত বাড়ানো যাবে, তত বেশি শক্তি উৎপন্ন হবে।
গত ৫ মে অ্যামেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়ন কমিটির সভায় কৃত্রিমভাবে বিদ্যুৎ চমকানো ও বজ্রপাত ঘটানো হয়। এ সময় বিদ্যুৎ চমকানোর আলোকচিত্র তোলা হয় এবং বিদ্যুৎপ্রবাহের মাধ্যমে আরো শক্তি উৎপন্নের পরীক্ষা করেও দেখানো হয় বলে সায়েন্স অ্যালার্ট জানিয়েছে।
সায়েন্স অ্যালার্ট জানাচ্ছে, বিজ্ঞানীরা এরপর বিদ্যুৎ চমকানো এবং বজ্রপাতকে বৈজ্ঞানিকভাবে কাজে লাগানোর আরো গবেষণা চালিয়ে যাবেন। একসময় হয়ত ঝড়-বৃষ্টির সময় সৃষ্ট বিদ্যুৎ চমকানো এবং বজ্রপাতকে মানুষের কল্যাণকর কাজে লাগাতে সক্ষম হবেন। সে দিন হয়ত আর বেশি দূরে নয় বলেই বিজ্ঞানীদের পরীক্ষা ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৫
এবি