ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

সিন্ধু পানিচুক্তি: পাকিস্তানকে নোটিশ পাঠাল ভারত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২৩
সিন্ধু পানিচুক্তি: পাকিস্তানকে নোটিশ পাঠাল ভারত

কলকাতা (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত): সিন্ধু নদীর পানিচুক্তি (আইডব্লিউটি) নিয়ে পাকিস্তানকে নোটিশ পাঠিয়েছে ভারত। গত ২৫ জানুয়ারি পাকিস্তানকে এই নোটিশ পাঠানো হয় বলে, শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, গত ৬২ বছর ধরে এই চুক্তির সব শর্ত মেনে চলেছে ভারত। কিন্তু পাকিস্তান যে আচরণ করছে তাতে নোটিশ পাঠানো ছাড়া উপায় ছিল না। তবে ওই চিঠিতে পাকিস্তানকে এও বলা হয়েছে যে, পানি চুক্তির বিষয়ে চিরকালই ভারত দায়বদ্ধ। কিন্তু পাকিস্তানের আচার-আচরণ চুক্তির বিরোধী।

মূলত, সিন্ধু পানি চুক্তির জট দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দীর্ঘ দিনের সমস্যা। দীর্ঘ ৬২ বছর ধরেই এই চুক্তি নিয়ে জটিলতা অব্যাহত আছে। ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্টেরট (আইডব্লিউটি) আওতায় পড়ে এই চুক্তি।

জানা গেছে গত ২৫ জানুয়ারি সিন্ধু পানি চুক্তির পরিবর্তন করতে পাকিস্তানকে নোটিশ পাঠিয়েছে ভারত। সংশ্লিষ্ট কমিশনারের মাধ্যমে পাকিস্তানকে সেই নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সিন্ধু নদী হিমালয়ে উৎপন্ন হয়ে ভারতের মধ্য দিয়ে গেছে পাকিস্তানে। সে দেশের বিস্তীর্ণ সমভূমি পেরিয়ে আরব সাগরে গিয়ে মিশেছে। ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি হয়েছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ আয়ুব খান স্বাক্ষর করছিলেন সেই চুক্তিতে। বিশ্ব ব্যাংক এই চুক্তির মধ্যস্থতা করেছিল।

ভারতের উত্তরাংশে কাশ্মীর ও লাদাখ এলাকায় বহু নদী হিমালয়ের বিভিন্ন অংশ থেকে উৎপন্ন হয়ে ওই এলাকার মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে কিছু নদী পশ্চিমে বয়ে গিয়ে পাকিস্তানে পড়েছে। কিছু নদী বয়ে এসেছে পূর্বদিকে। এসব নদীর পানিবন্টন ও নদীর ওপর বিভিন্ন প্রকল্প সংক্রান্ত বিষয়েই চুক্তি হয় দুই দেশের মধ্যে।

চুক্তি অনুসারে বিপাশা, ইরাবতী এবং শতদ্রু মতো পূর্বদিকে বয়ে আসা নদীর পানি বিনা বাধায় ব্যবহার করতে পারবে ভারত। কিন্তু, পশ্চিমে বয়ে যাওয়া সিন্ধু, চন্দ্রভাগা এবং ঝিলামের মতো নদীর ২০ শতাংশ পানি পাবে ভারত এবং ৮০ শতাংশ পানি পাকিস্তান পাবে। চুক্তিতে রয়েছে এসব নদীর ওপর জলবিদ্যুৎ বা বিভিন্ন প্রকল্প বানানোর অধিকার রয়েছে ভারতে। প্রয়োজনে সেই প্রকল্প নিয়ে আপত্তি জানানোর অধিকার রয়েছে পাকিস্তানেরও।

জম্মু-কাশ্মীরে ঝিলম নদীর ওপর কিষান গঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং চন্দ্রভাগা নদীর উপর রাতলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়েই দুই দেশের মধ্যে সমস্যা। পাকিস্তান মনে করছে, ৩৩০ মেগাওয়াট কিষান গঙ্গা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং ৮৫০ মেগাওয়াট রাতলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে নদীর গতিপথ রুদ্ধ হবে। কারণ, ৮০ শতাংশই সিন্ধু নদ এবং তার শাখা নদ-নদীগুলির ওপর নির্ভরশীল পাকিস্তান। কোনভাবে তা আটকে গেলে কৃষিকাজ ব্যাহত হবে, দেখা দিতে পারে পানি সংকট। যদিও ভারতের দাবি, দুটি জলবিদ্যুৎ  ‘রান অফ দ্য রিভার’ প্রকল্পের আওতায় পরে। ফলে নদীর পানি মজুদের করার কোনো প্রশ্ন ওঠে না।

২০১৫ সাল থেকে বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। পরবর্তীতে ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে স্থায়ী সিন্ধু কমিশনের পাঁচটি বৈঠকেও কোনো সমাধান হয়নি।

অপরদিকে, সিন্ধু নদের পানি বিভাজন নিয়ে যেসব শর্ত রয়েছে, তা পাকিস্তান বারবার লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করেছে ভারত। তারা জানিয়েছে, বারবার পাকিস্তানকে বলেও কাজ না হওয়ায় সিন্ধু পানি চুক্তির পরিবর্তন চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে সে দেশে নদী কমিশনকে। ভারত চাইছে, আগামী ৯০ দিনের মধ্যে দুই দেশ আলোচনায় বসে ওই পানিচুক্তির পরিবর্তন করতে। সে কারণে ২৫ জানুয়ারি পাকিস্তানকে নোটিশ পাঠিয়েছে ভারত।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, ২৮ জানুয়ারি, ২০২২
ভিএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।