এমন অবস্থায় এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের ৫ হাজার মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ভরসার হয়ে উঠেছে এখানকার কমিউনিটি ক্লিনিকটি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিত্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি এখানে প্রসূতি সেবা হচ্ছে নিরাপদ স্বাভাবিক প্রসবও।
20181219092754.jpg)
একটি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্যে সেবা নিচ্ছেন এক শিশু । ছবি: বাংলানিউজ
তিনি বলেন, গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা কমিউনটি ক্লিনিকগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা ও ভরসা দিন দিন বাড়ছে। কারণ এখানে নিয়োজিত স্বাস্থ্য সহকারীরা তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বর্তমান সরকারের সেরা ১০টি অর্জনের মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক অন্যতম। পুরো বাংলাদেশে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সেবা নিচ্ছে মানুষ।তিনি আরো জানান, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবাদানের লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের জন্য ১৯৯৬ সালে সরকারিভাবে প্রস্তাব পাস করা হয়। ১৯৯৮ সাল থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ফেনীর বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থানীয় জনগণ ও সরকারের যৌথ অংশীদারিত্বে কমিউনিটি ক্লিনিকিগুলো গড়ে উঠে। ২০০১ সালে ক্লিনিকগুলো উদ্বোধন করা হয় এবং একই বছর থেকে ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যায়।
পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আবারো ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্য সেবার কাজ শুরু হয়। বর্তমানে প্রতিটি ক্লিনিক খোলা থাকছে সপ্তাহে ৬ দিন। কোনো কোনো ক্লিনিকে প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী আসছে।
নিরাপদ স্বাভাবিক প্রসবের পর একজন প্রতিনিধি পরিদর্শন করছেন কমিউনিটি ক্লিনিক। ছবি: বাংলানিউজ
হাসান শাহরিয়ার কবির আরো জানান, এসব ক্লিনিকের মাধ্যমে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, টিকাদান কর্মসূচি, পুষ্টি, স্বাস্থ্যশিক্ষা, পরামর্শসহ, হাঁপানী ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগের সেবা দিচ্ছে। এছাড়াও ২৭ ধরনের প্রাথমিক ওষুধও দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে।ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা আবদুল করিম বাংলানিউজ জানান, এক সময় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলেও বর্তমানে দৃশ্যপট বদলেছে অনেক।
ধর্মপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের -০১ (আশ্রয়ণ প্রকল্প) সিএইচসিপি মাকসুদুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকে ৯টি নিরাপদ স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। এছাড়া অন্য সেবাগুলোও এখানকার মানুষ পাচ্ছে নিয়মিত।
এ কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে, এক সময় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা কমিউনিটি ক্লিনিকটি এখন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অবস্থা ঠিক রেখে সেবা দেওয়া হচ্ছে ক্লিনিকে আসা রোগীদের। ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপি মাকসুদুর রহমান প্রতিদিন তার ক্লিনিকে ৫০ থেকে ৬০ রোগী আসেন। প্রসূতি মায়েরাও প্রতিদিন আসেন সেবা নিতে।
তিনি আরও জানান, এক সময় গ্রামের নারীরা কমিউনিটি ক্লিনিকে আসতে না চাইলেও এখন আসছেন।
সমুদ্র উপকূলীয় সোনাগাজীর দক্ষিণ পূর্ব চর-চান্দিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার কমিউনিটি ক্লিনিকটিও বেশ জমজমাট। রোগীদের উপস্থিতি সেখানেও চোখে পড়ার মতো।
ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপি বাংলানিউজকে জানান, উপকূলের জেলে পরিবার এবং অসহায় পরিবারের মানুষগুলো তাদের স্বাস্থ্য সেবা নিতে এখানে আসেন।
ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা তাহেরা খাতুন (২৫) জানান, ক্লিনিকটিতে নিয়মিত ডাক্তার থাকেন। ছোটখাট অসুখ হলে তিনি এখান থেকেই ওষুধ নেন।
ফেনী জেলা সিভিল সার্জন ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, এক সময় ক্লিনিকগুলোর প্রতি মানুষের একটু অন্যরকম ধারণা ছিলো। এখন সে ধারণা বদলেছে। লোকজন এখন ক্লিনিকে আসে পরামর্শ এবং চিকিৎসা নিতে। সবকটি কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু আছে। সেবার মান নিশ্চিত করতে আমরা সার্বক্ষণিক সচেষ্ট আছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৮
এসএইচডি/এএটি