কলকাতা থেকে ফিরে: পূর্বপুরুষের প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের স্মারক ডা. খাস্তগীর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়কে কলেজে রূপান্তর করতে চান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ভারতের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. গৌতম খাস্তগীর। সম্প্রতি এই প্রতিবেদকের কলকাতা সফরের সময় বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে এ স্বপ্নের কথা জানান তিনি।
গৌতম জানান, পূর্বপুরুষের চট্টগ্রামের জন্য কিছু করতে চান তিনি। এজন্য বেছে নিয়েছেন তাঁর পূর্বপুরুষের প্রতিষ্ঠিত খাস্তগীর স্কুলকে। বছরে চারবার তিনি চট্টগ্রামে এসে বন্ধ্যা রোগিদের চিকিৎসা দেবেন। এ থেকে আয় করা টাকা তিনি দেবেন খাস্তগীর স্কুলের উন্নয়ন তহবিলে।
‘নিজ খরচে কলকাতা থেকে চট্টগ্রামে আসা-যাওয়া করব। থাকা-খাওয়ার খরচও আমিই বহন করব। রোগিদের কাছ থেকে যা আয় করব, খাস্তগীর স্কুলকে দেব। স্কুলটিকে কলেজ করতে যা যা দরকার আমি তা-ই করব। ’- বলেন গৌতম।

এর আগে ডা. খাস্তগীর সরকারি স্কুলে দশ লক্ষ টাকার শিক্ষাবৃত্তি দিয়েছিলেন গৌতম খাস্তগীর।
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার সুচক্রদণ্ডী গ্রামের ছেলে গৌতম খাস্তগীর এখন ভারতের স্বনামধন্য চিকিৎসক, যিনি ডাক্তারি পেশাকে শুধু টাকা কামানোর হাতিয়ার হিসেবে দেখেন না। বরং এই পেশাকে তিনি মানবসেবার হাতিয়ার হিসেবেই নিয়েছেন, আলাপে জানালেন এমনটাই।
প্রাসঙ্গিকভাবে মানবসেবার একটি অনন্য উদ্যোগের কথাও বাংলানিউজকে জানালেন গৌতম খাস্তগীর।
ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫ কোটি ভারতীয় রুপি খরচ করে কলকাতা পিজি হাসপাতালে এক হাজার বন্ধ্যা রোগীর চিকিৎসার উদ্যোগ নিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। সফল চিকিৎসা শেষে এসব রোগি দীর্ঘ কয়েক বছর পর সন্তানের মুখ দেখার সুযোগ পাবেন অর্থাৎ তারা সন্তানসম্ভবা হবেন।
গৌতম খাস্তগীরের এ মহৎ উদ্যোগের সঙ্গে শামিল হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও। তিনিও সরকারি তহবিল থেকে আরও ৫ কোটি ভারতীয় রুপি দিতে সম্মত হয়েছেন। সরকার আর গৌতম খাস্তগীরের ব্যক্তিগত মিলে ১০ কোটি রুপিতে আগামী এক বছরে ১ হাজার বন্ধ্যা রোগীর চিকিৎসা চলবে। ব্যয়বহুল ও ধৈর্যশীল এই চিকিৎসায় প্রতি রোগীর জন্য খরচ পড়ে ১ লাখ রুপি। ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) পদ্ধতিতে সন্তান জন্মদানের হারও সুনিশ্চিত।
ব্যক্তিগত টাকায় এমন উদ্যোগ কেন নিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. গৌতম খাস্তগীর বলেন, ‘টাকা কামানো আমার উদ্দেশ্য নয়। রোজগারের টাকা মানবসেবায় খরচ করতে পারাটাই হলো আনন্দের। আমি চাই যারা টাকার অভাবে উপযুক্ত চিকিৎসা না পেয়ে বছরের পর বছর সন্তান না হওয়ার মনোবেদনায় ভোগেন তাদের দুঃখ ভুলিয়ে দিতে। ’
তিনি জানান, তার উদ্যোগে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা ব্যানার্জি। শুধু টাকা নয়, ডা. গৌতম খাস্তগীর তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘বার্থ’ এর প্রশিক্ষিত কর্মী ও বিদেশ থেকে সংগৃহীত যন্ত্রপাতি হাসপাতালে সরবরাহ করবেন এ সময়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কলকাতায় বসবাসরত চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধা অমলেন্দু সরকার বলেন, ‘গৌতম হলেন সারা ভারতবর্ষের বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার শীর্ষস্থানীয় একজন সফল ডাক্তার। চিকিৎসা সেবায় তিনি এতোটাই নিবেদিত আর আন্তরিক যে, অল্পদিনের মধ্যেই তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে সারা ভারতে। আমরা এখানকার চট্টগ্রামের লোকেরা তাকে নিয়ে গর্ব করি। শুধু সফল চিকিৎসক নন, তিনি একজন দানশীল ব্যক্তিও বটে। ’
চিকিৎসা সেবার বাইরেও তিনি নিয়মিত টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। কলকাতার শীর্ষস্থানীয় দৈনিকসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নিয়মিত কলাম লিখেন বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার পদ্ধতি নিয়ে। ‘জীবনের সেরা উপহার ও নারীজীবনে সুস্থতার দিশা-জননী ও ‘মাত্র ৮টি সহজ ও সরল পদক্ষেপে নিশ্চিত সন্তানলাভ’ এবং ‘ও আসবে বলে’ নামে তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে তার। এর একটিতে ভূমিকা লিখেছেন ভারতের বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ও অভিনেতা সাইফ আলী খানের মা শর্মিলা ঠাকুর। আরেকটিতে আরেক চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তা।
তার এসব বইয়ের মলাটে উল্লেখ করা হয়েছে, পদবি আসলে দাশগুপ্ত। পূর্ববর্তী ৭ প্রজন্ম বদ্যি, নামজাদা সব ডাক্তার। বাবা কিন্তু ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। খাস্তগীর উপাধি। ৫০০ বছর আগে চট্টগ্রামের মুঘল রাজ দরবারে এক পূর্বপুরুষ নিযুক্ত হন স্পেশাল জাস্টিস হিসেবে। খাস্ত-স্পেশাল, গীর-জাস্টিস। ক্রমে উপাধিটাই পদবি হিসেবে রয়ে গেলো। চট্টগ্রামে এখনও রয়েছে প্রাচীনতম খাস্তগীর নারী শিক্ষালয়।
তার সম্পর্কে বলতে গিয়ে এতে আরও বলা হয়, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে ডাক্তারি পাস করেন। এমবিবিএস কোর্সে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার ও একাধিক গোল্ড মেডেল। এরপর গাইনোকোলজিতে উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ড যান। গত ১৫ বছরে নামমাত্র খরচে অনেক দাতব্য হাসপাতালে ১৫ হাজারের বেশি সফল অপারেশন করেছেন। তার টেকনিকের কারণে জন্মেছে ১ হাজার ফুটফুটে সন্তান। ৫৫ বছর বয়সেও মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছেন নারী। বিয়ের ৩২ বছর পর প্রথম সন্তান লাভ করেছেন আরেক নারী।
** ‘ক্যাপসুলে’ রোগ নির্ণয়
** বাড়ির পাশে কলকাতায় সাশ্রয়ী চিকিৎসা এ্যাপোলোতে
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫,২০১৫
টিসি/জেডএম