শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): হাত দিয়ে ধান কাটার দিন শেষ। এবার মেশিনে ধান কাটার দিন শুরু হয়ে গেছে।
বিজ্ঞানের এ সুফল কৃষকের প্রতিটি জমিতে পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
যে সবুজ-শ্যামল ধানখেত দিগন্তকে এতোদিন সবুজময় করে রেখেছিল, আজ সেই সবুজ প্রান্তর বাংলার সংগ্রামী কৃষকের কোমল স্পর্শের স্বার্থকতায় হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে।
যেদিকে চোখ যায়, কেবল পাকা ধানের সফলতার চিত্র। খেতে খেতে পাকা ধানের হাসি!

undefined
শনিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের গন্ধর্বপুর গ্রামে অক্কুরমনি দেবনাথের জমিতে গিয়ে এমনি দৃশ্য দেখা গেছে। মেশিন দিয়ে ধান কাটার দৃশ্য দেখতে জড়ো হয়েছিলেন গ্রামের অনেক কৃষক।
সবার মুখে একই কথা- ‘এতে অনেক লাভবান হচ্ছি আমরা’।
যন্ত্রযোগে ধানকাটার এ আয়োজনে অর্ধশত কৃষকের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (মির্জাপুর ইউপি-ব্লক) প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য, উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (ভূনবীর ইউপি-ব্লক) অজিত কুমার পাল এবং নাট্যকার ও অর্গানিক ফসল উৎপাদক কাজী শাহিদুল ইসলাম।
ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করুন
কৃষক অজিত দেবনাথ বলেন, এক বিঘা জমির রোপা-আমন ধান কাটতে চারজন শ্রমিকের প্রয়োজন। এ চারজন শ্রমিকের মজুরি তিনশ’ টাকা করে হয় বারশ’ টাকা। অথচ এ ধান কাটার মেশিন মাত্র আধা ঘন্টায় এক বিঘা জমির ধান দ্রুত কেটে ফেলতে পারছে। আর এ মেশিনটির আধা ঘণ্টার চার্জ মাত্র তিনশ’ টাকা।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অজিত কুমার পাল বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প থেকে এ রিপার মেশিনটি (ধান কাটার যন্ত্র) এসেছে। এক বিঘা জমির ধান কাটতে এ মেশিনের সর্বোচ্চ ত্রিশ মিনিট সময় লাগে। আর এর জ্বালানি খরচসহ অনুসঙ্গিক খরচ অনেক কম। ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ অনেক বেচে যাচ্ছে।

undefined
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য বলেন, গন্ধর্বপুর সিআইজি (ফসল) সমবায় সমিতির মাধ্যমে এ রিপার যন্ত্রটি পর্যায়ক্রমে একেকজন কৃষকের জমিতে পরিচালনা করা হচ্ছে। ধান কাটার বিশেষ এ যন্ত্রটি চালানোর জন্য একজন চালককেও প্রশিক্ষণ দিয়ে সমিতি থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
হোন্ড কোম্পানির তৈরি রিপার যন্ত্রটির দাম এক লাখ আশি হাজার টাকা বলেও জানান তিনি।
গন্ধর্বপুর সিআইজি (ফসল) সমবায় সমিতির সম্পাদক জহরলাল সরকার বলেন, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী নামে একজন চালককে আমরা সমিতির মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছি। তিনি বিঘা প্রতি পঞ্চাশ টাকা মজুরিতে রিপার যন্ত্রের সাহায্যে খেতের ধান কেটে দিচ্ছেন। এ যন্ত্রের বড় দিক হলো এ যন্ত্রটি ব্যবহারের ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ অনেক কমে যাচ্ছে।

undefined
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুকল্প দাস বাংলানিউজকে বলেন, ধান কাটার রিপার যন্ত্রটির প্রচলন চলতি রোপা-আমন মৌসুম থেকে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে। মূলত বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলগুলোতে যন্ত্রটি বিনামূল্যে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়েছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলায় তিনটি রিপার যন্ত্র পেয়েছি আমরা।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে এবার রোপা-আমন ধানের চাষ হয়েছে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৫
বিবিবি/এএসআর