খুলনা: কুয়াশার চাদর ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে সকালের সোনারোদ। শেষ হেমন্তের মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে মাঠ ভরা সোনালী ধান।

undefined
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনার উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ সোমবার (০৭ ডিসেম্বর) দুপুরে বাংলানিউজকে বলেন, এবার জেলায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন চলছে মাঠে মাঠে ধান কাটার উৎসব।
তিনি জানান, আমনের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকরা যেমন খুশি, তেমনি স্বস্তিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরও।

undefined
আব্দুল লতিফের তথ্য মতে, এ বছর খুলনা জেলায় ৯২ হাজার ৪৪২ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। সেখানে অর্জন হয়েছে ৯৩ হাজার ৮৯০ হেক্টর।
স্বর্ণ রঙে পাকা ধান
শিশিরের ভারে হেলে পড়েছে ধান। ভোরের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই পান্তা খেয়ে কাস্তে হাতে কৃষক মাঠে ছোটেন সেই ধান কাটতে। ধান কাটার সময় তারা কেউ কেউ বেহুলা লখিন্দরসহ বিভিন্ন লোক সংগীত গেয়ে ওঠেন।

undefined
তাদের গানে যেন মুগ্ধ হয়ে যেন শালিকের ঝাঁক দেয় কিচির-মিচির ডাক! ধানের পাঁজা মাথায় নিয়ে কৃষক যখন আইল পথে পায়ের ছাপ এঁকে হেঁটে যান তখন যেন মনে হয় সূর্যের আলোয় কৃষকের মাথায় স্বর্ণ দানা চিকচিক করছে।

undefined
বাতাসে ভাসে পাকা ধানের ঘ্রাণ
হেমন্তের বাতাসে ভেসে বেড়ায় পাকা ধানের মিষ্টি ঘ্রাণ। দিনভর কয়লা খাটুনি খেটে ধান কাটার পর মাড়াই শেষে ঘরে তুলছেন কৃষকেরা। তাদের এ কাজে সহযোগিতা করছেন কৃষাণি বধূরাও। আর এভাবেই দেখতে দেখতে গোলা ভরে উঠছে কৃষকের।

undefined
গ্রামে গ্রামে চলছে নবান্ন উৎসব
ঋতুচক্রের নিয়মেই হেমন্তের হাত ধরে আসে নবান্ন। গ্রামবাংলার মাঠে-খেতে চলছে আমন ধান কাটার মহোৎসব নবান্ন (অর্থ: নতুন অন্ন)। যা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব। নবান্ন হল নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে পাওয়া চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। নবান্ন উৎসবের মধ্য দিয়ে কোনো কোনো অঞ্চলে ফসল তোলার পরদিনই নতুন ধানের নতুন চালে ফিরনি-পায়েশ অথবা ক্ষীর তৈরি করে আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর ঘরে ঘরে বিতরণ করা হয়।

undefined
নবান্নে জামাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়, মেয়েকেও বাপের বাড়িতে ‘নাইওর’ আনা হয়। নবান্নে নানা ধরনের দেশীয় নৃত্য, গান, বাজনাসহ আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালিত হয়। লাঠিখেলা, বাউলগান, নাগরদোলা, বাঁশি, শখের চুড়ি, খৈ, মোয়ার পসরা বসে গ্রাম্যমেলায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৫
এমআরএম/এএসআর