ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

শহিদুলের দোকানে পাওয়া যায় ৩৫ রকমের চা

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০২৩
শহিদুলের দোকানে পাওয়া যায় ৩৫ রকমের চা

মাদারীপুর: ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার শহিদুল ইসলাম শহিদ ছিলেন রেমিট্যান্সযোদ্ধা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে গাড়ি চালিয়ে দেশে টাকা পাঠাতেন।

কিন্তু করোনার শুরুতে দেশে ফিরে আর যেতে পারেননি কুয়েতে। প্রবাস জীবনের ইতি টানতে হয় তাকে।  

কিছুদিন নানারকম কাজ করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করেন। কিন্তু কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন। অবশেষে সব ছেড়ে দিয়ে দেন চায়ের দোকান। তার দোকানে মেলে হরেক রকমের হরেক স্বাদের চা। কফিসহ ৩৫ রকমের চা বিক্রি হয় তার দোকানে। এদের মধ্যে মালাই চা, দুধ চা, লেবু চা, তেঁতুল চা, মাল্টা চা এবং মশলা চা বেশ জনপ্রিয়। এখন এই চা বিক্রি করেই ঘুরে দাঁড়াতে চান তিনি।  

ভাঙ্গার বালিয়াডাঙ্গি এলাকার আবুল কাশেম ফকিরের ছেলে শহিদুলের সংগ্রাম এখন এই চা-দোকান নিয়েই।

দুই ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। সকালে নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে দোকানে আসেন। আবার রাতে বাড়ি ফিরে যান। দৈনিক সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা আয় করেন বাহারি রকমের চা বিক্রি করে।

বালিয়াডাঙ্গির বাসিন্দা হলেও শহিদুলের চায়ের দোকান শিবচরের এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন সূর্য্যনগর সড়কের পাশে।  

এতো দূরে ব্যবসা দেওয়ার কারণ হিসেবে শহিদুল বলেন, বাড়ি থেকে দূরে এসে দোকান করছি, কারণ এখানে লোকসমাগম বেশি। পাশেই কলেজ রয়েছে। সারাদিনই ভালো বিক্রি হয়। এখানে কফিসহ চা রয়েছে প্রায় ৩৫ রকমের। লেবুর শরবতও রয়েছে। তবে বেশি বিক্রি হয় মালাই চা, দুধ চা, লেবু চা, তেঁতুল চা, মাল্টা চা এবং মশলা চা।

এক সন্ধ্যায় আলাপচারিতায় শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে থাকতে হোটেলে (রেস্টুরেন্ট) কাজ করতাম। রান্নাবান্নাসহ অনেক কাজ জানি তখন থেকেই। এরপর বিদেশ গেলাম। করোনার সময় দেশে এসে আর যেতে পারিনি। এরপর দেশেই কিছু করার চেষ্টা। কিন্তু কোনো কাজই ঠিকমতো ধরতে পারি নাই। পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়ে যাই। ভেবেছিলাম কম্পিউটার কম্পোজসহ অনলাইনের টুকটাক কাজ করার মতো একটা দোকান দেব। কিন্তু বাজারে এরকম দোকানের অভাব নেই। পরে এই চায়ের দোকান দিয়েছি। গতানুগতিক চায়ের দোকান থেকে আলাদা করেছি। ’

সরেজমিনে দেখা গেছে, সূর্য্যনগর বাজারের কলেজমুখী সড়কের পাশেই ‘কফি টাইমস’ নামের দোকানটিতে নানান রকম চায়ের নাম ও দামসহ একটি ফেস্টুন টাঙানো। ভেতরে এবং বাইরে বসার জন্য ছোট্ট কয়েকটি চেয়ার ও দুটি টেবিল রয়েছে। বিকেল থেকে রাত ৯/১০ টা পর্যন্ত চায়ের দোকানে নানা বয়সীদের আড্ডা দেখা যায়। তবে দিনে কলেজের শিক্ষার্থীদের ভিড় থাকে বলে জানান শহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, বিদেশে যাওয়ার আর ইচ্ছা নেই। পরিবারের কাছে থেকে এই ব্যবসাটি চালিয়ে যেতে চাই। দোকানের বয়স খুব বেশি দিন না হলেও বেশ জমে উঠেছে। আল্লাহর রহমতে ভালো বিক্রি হয়। এই চা বিক্রি করেই সংসারে সচ্ছলতা আনতে চাই।

শহিদুলের চায়ের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে, দুধ চা, গ্রিন টি, ব্ল্যাক টি, মশলা চা, গুড়ের চা, তেঁতুল চা, লেবু চা, মাল্টা চা, তুলসী চা, আপেল চা, আদা চা, কালো জিরা চা, রসুন চা, কাঁচা হলুদ চা, গোলমরিচ চা, বেদানা চা, মালাই চা, মালটোভা চা, চকলেট চা, মধুচা, তান্দুরি চা, রসগোল্লা চা, গোলাপ চা, অপরাজিতা চা এবং কফি। রয়েছে লেবুর শরবতও।

ইন্টারনেট ঘেঁটে নানা রকম চা তৈরির কৌশল রপ্ত করার পাশাপাশি স্বাদ বৃদ্ধি নিয়েও গবেষণা করেন শহিদুল ইসলাম।  

চা খেতে আসা স্থানীয়রা বলেন, এই দোকানে বেশ কয়েক রকমের চা পাওয়া যায়। চায়ের স্বাদও ভালো। অন্যদের চেয়ে চা ভালো হওয়ায় এখানকার নিয়মিত কাস্টমার রয়েছে অনেক। বিকেল বা সন্ধ্যায় ঘুরতে এসে শহিদুলের চা খেয়ে থাকেন অনেকেই।

একটি চায়ের দোকান ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন শহিদুল ইসলাম। মাসিক ৬ হাজার টাকা দোকান ভাড়া দিয়ে বর্তমানে বেশ ভালো আয়-রোজগার হচ্ছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ ভালোই আছেন তিনি। তবে এই ব্যবসায়টিকে নিয়ে যেতে চান আরও এগিয়ে। করতে চান আরও উন্নত। চা বিক্রি করেই আর্থিক দিকে ঘুরে দাঁড়াতে চান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০২৩
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।