ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন

স্ত্রীর সহায়তায় ইভিএমে ভোট দিলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ফরহাদ

ইফফাত শরীফ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৭ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২৩
স্ত্রীর সহায়তায় ইভিএমে ভোট দিলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ফরহাদ

গাজীপুর থেকে: ‘আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব’ শ্লোগানটি সারা দেশবাসী জানেন। নাগরিকরাও এখন সচেতন; অন্তত ভোটের অধিকারের বিষয়ে আরও বেশি।

একটা সময় ছিল সাধারণ ভোটাররা অন্যের কথায় প্ররোচিত হয়ে বা পরামর্শে নিজের ভোট দিতেন। কিন্তু সময় পাল্টেছে, বদলেছে অনেক কিছুই। আগে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে অনেকেই ভোট দিতে পারতেন না। কিন্তু এখন পারেন। কেউ নিজে গিয়ে আবার কেউ স্বজনের সহায়তায়।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচনে ভোট দিতে এসেছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এস এম ফরহাদ (৬০)। তাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন তার স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৫৫)। এ দম্পতি বেলা ১১টায় ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের টঙ্গি সরকারি হাসপাতালের পুরাতন ভবনের ৪৫১ নম্বর কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। ফরহাদ নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিতে চেয়েছেন, আর সেটি দিয়েছেন তার স্ত্রী মরিয়ম। কারণ, এ ব্যাপারে অন্য কাউকে বিশ্বাস করেন না ফরহাদ।

এবার গাসিকের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইভিএম পদ্ধতিতে। এ পদ্ধতিতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের নিজের ভোট নিজে দেওয়ার মতো ব্যবস্থা নেই। কতগুলো মার্কা আছে, কোন বোতাম চাপলে কোথায় ভোট যাচ্ছে, সেটি নির্দিষ্ট করার মতো ভয়েস কন্ট্রোল সিস্টেমও নেই। যে কারণেই ফরহাদের মতো দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ভোট দিতে হচ্ছে তাদের স্বজনদের সহায়তায়।

ফরহাদ-মরিয়ম দম্পতি টঙ্গির ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাসিমপুর এলাকার বাসিন্দা। ভোট প্রসঙ্গে তার সঙ্গে কথা হলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, দেখতে না পেলেও ভোটের পরিবেশটা আমার কাছে অনেক ভালো অনুভব হয়েছে। এই পরিবেশে যদি আমরা সব সময় ভোট দিতে পারি তাহলে আমরা মনে করব এটাই সুষ্ঠু ভোট।

নগরবাসী হিসেবে কেমন মেয়র চান জানতে চাইলে ফরহাদ বলেন, আমরা চাই এমন লোক নির্বাচিত হোক যিনি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করবেন। পাশাপাশি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা ঘাট এবং মানসিকভাবে নাগরিকদের মধ্যে যেসব সমস্যাগুলো আছে সেগুলো সমাধান করবেন। একইসঙ্গে স্কুল কলেজসহ সমস্ত নাগরিক সুবিধা যা কিছু তা যেন আরও ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারে এমন নেতাই আমরা চাই।

গাজীপুরের এ ভোটার জানান, তিনি স্ত্রীকে নিয়ে কেন্দ্রে ঢোকার সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা বাধা দেন। তাকে বলা হয়, যেন তিনি একা কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে তারা যখন বুঝতে পারেন ফরহাদ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী; তখন স্ত্রীসহ তাকে ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

ফরহাদের স্ত্রী মরিয়ম বাংলানিউজকে বলেন, স্বামীকে নিয়ে এসেছি; ইভিএম পদ্ধতিতে আগে ভোট দেই নাই। কর্মকর্তারা বুঝায় দিসে, এরপর ভোট দিসি। আমার হাজবেন্ড যারে ভোট দিতে চাইসে, তার জন্যই ভোট দিসি।

স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো স্বজনকে নিয়ে কেন ভোট দিতে আসেননি জানতে চাইলে ফরহাদ বলেন, কারও উপর তেমন আস্থা নাই। মনে করেন আমাকে ভোট সহায়তা করতে কাউকে নিয়ে আসলাম, কিন্তু সে যদি আমার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট না দিয়ে অন্য কাউকে দেয় তাহলে তো সমস্যা। আমি ৩০ বছর যাবত এই এলাকায় আছি। কে কেমন আমার জানা আছে। তাই পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে ওয়াইফকে নিয়ে আসছি।

উল্লেখ্য, দেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য অধিকার ও সুরক্ষা আইন রয়েছে। আইনে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ভোটের অধিকারও রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য ব্যবহারযোগ্য কোনো ভোটিং পদ্ধতি বের করতে পারেনি। ফলে তারা কি চান বা প্রয়োজন নির্বাচন কমিশন জানে না। যে কারণে যা আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০২৩
ইএসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।